কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে: সালাউদ্দিন
Published: 17th, April 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, সংবিধান সংস্কার সুপারিশের প্রস্তাবনা, প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনায় মূলনীতি, মৌলিক অধিকার এবং আইন বিভাগ পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে। বিচার বিভাগ নিয়ে আলাদা আলোচনা করেছি। কিছু বিষয় এমন আছে, যেগুলো আবার আমাদের দলীয় ফোরামেও আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, এছাড়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কমিশনকে আমরা বুঝাতে সক্ষম হয়েছি। সেসব বিষয়ে কমিশন পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাদের জানাবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশন কার্যালয়ে আলোচনায় বসেন বিএনপি নেতারা। নামাজ ও মধ্যহ্নভোজ সময়টুকু ছাড়া বিরতিহীন তা চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। প্রথম দিনে শুধু সংবিধান এবং বিচার বিভাগ সংস্কারের আংশিক আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদদ) সংস্কার নিয়ে কথা হয়নি।
সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধানের সংস্কারে ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানিয়েছি। কমিশন কতটুকু গ্রহণ করবে, তা পরবর্তীতে দেখা যাবে। আস্থা-অনাস্থা ভোট এবং সংবিধানে সংশোধনে যদি ৭০ অনুচ্ছেদ না থাকে, সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি মতামত দিয়েছে, অর্থ বিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থাভোট ও জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট বিষয় ব্যতিত এমপিরা স্বাধীন থাকবেন। চর্চার মাধ্যমে গণতন্ত্র সমৃদ্ধি হয়। আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পারিনি, ভবিষ্যতে যদি সাংবিধানিক শাসনের ধারাবাহিকতায় যদি সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি, তাহলে ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়ে তখন উম্মুক্ত করা যেতে পারে।
গণভোট ও সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, সংবিধান সংশোধনে সংসদের উভয় কক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন, রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পরও গণভোট লাগবে বলে সুপারিশ করা হয়েছে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিযোগের জন্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার, বিরোধীদলীয় স্পিকারসহ ৯ সদস্যের এনসিসি গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন। এতে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমবে।
সালাহউদ্দিন আহমদে বলেছেন, এনসিসি নিয়ে বৃহস্পতিবার আলোচনা হয়নি। তবে দফাওয়ারি আলোচনার শুরুতেই জানিয়েছি, বিএনপি এনসিসি গঠনের ধারণার সঙ্গে একমত নয়। এনসিসির চর্চা নেই দেশে। হঠাৎ তা করলে রাষ্ট্র পরিচালনায় নির্বাহী বিভাগ এবং সংসদ দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে কিনা, তা দেখতে হবে। যে সময় সংসদ থাকবে না বা সংসদ ভেঙ্গে যাবে, তখন এনসিসি খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্যকিছু করে কিনা, তা দেখতে হবে।
বিএনপি আগেই জানিয়েছিল শেখ হাসিনার সরকারের করা পঞ্চদশ সংশোধনী আগে সংবিধানের যে চার মূলনীতি ছিল, তা পুনর্বহাল করতে হবে। এর মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের করা চার মূলনীতি পুনর্বহাল তথা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র পরিবর্তে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ ফেরত চায়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘এখানে একটা ভুল বোঝার কারণ ছিল, কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতাসহ অন্যান্যগুলো বাতিলে জন্য প্রস্তাব করেছে। বিএনপি চেয়েছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্ব অবস্থায় যাওয়া হোক। ওখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ মূলনীতি হিসেবে থাকবে। সুতরাং বিএনপি বহুত্ববাদের পক্ষেও নয়, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নয়। সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে রয়েছে, সেগুলো প্রস্তাবনা ও মূলনীতিতে অর্ন্তভুক্ত করা যায় কিনা কমিশন প্রস্তাব করেছে। এতে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত। তবে দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে পরে জানাবে কমিশনকে’।
বৈঠক সূত্র জানায়, বিচার বিভাগ সচিবালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশে ভিন্নমত জানানো বিএনপি বলেছে, এজন্য সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন। সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ বাতিল চায়, তবে তা করবে পরবর্তী সংসদ। বিএনপি দলের ৩১ দফা অনুযায়ী, বিচার বিভাগের সংস্কার চায়। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের অন্তর্বর্তী সরকার যে অধ্যাদেশ জারি করেছে, সে জন্যও সংবিধান সংশোধন প্রয়োজন বলে দলটি অভিমত জানিয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য আছে, আবার কিছু বিষয়ে মতপার্থক্যও আছে। কমিশনের কিছু যুক্তি গ্রহণ করেছি। যেগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবার বিএনপির অধিকাংশ যুক্তিও কমিশন নোট নিয়েছে। এভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে যেতে পারবো বলে আশাবাদী।
দিনভর আলোচনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংস্কারের সুপারিশের অধিকাংশের সঙ্গে একমত হয়নি বিএনপি। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমাতে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের সুপারিশে ভিন্নমত জানানো বিএনপি; আলোচনার টেবিলেও এতে রাজি হয়নি। আগামী রোববার ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসবে দলটি।
আলোচনার আগে গত বুধবার রাতে সংবিধান সংস্কার কমিশনের ১৩১ সুপারিশের ওপর ৫১ পৃষ্ঠার এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিপরীতে ৪২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দেয় বিএনপি। ‘ফুল রেসপন্স’ শিরোনামের এই প্রতিবেদনে উভয় কমিশনের প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে দলীয় অবস্থানের বিস্তারিত জানিয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন অন চ ছ দ প রস ত ব ঐকমত য এনস স র ওপর ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
রাষ্ট্রের মূলনীতি পরিবর্তনে জোর আপত্তি বিএনপির
সংবিধান সংস্কারে বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছিল, গতকাল কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় নানা যুক্তি-ব্যাখ্যায় দলটি সে অবস্থানই প্রকাশ করেছে। অর্থাৎ সংবিধান ও রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি পরিবর্তনে কমিশনের করা সুপারিশগুলোতে বিএনপির জোরালো আপত্তি রয়েছে।
তবে দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, কিছু কিছু বিষয়ে কমিশনের যুক্তিসংগত সুপারিশ গ্রহণের জন্য বিবেচনা করছে বিএনপি। সে বিষয়গুলো দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে পাঁচটি কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে আলোচনা শেষ হয়নি। আগামী রোববার আবারও আলোচনা হবে বলে ঐকমত্য কমিশন ও বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গতকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব (প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, মৌলিক অধিকার, আইন বিভাগ) নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে