শিক্ষার্থী ও কুয়েট প্রশাসনের অনড় অবস্থানের কারণে সহসা কাটছে না খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) অচলাবস্থা। সংকট নিরসনে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ। প্রতিদিন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এছাড়া শিক্ষক সমিতির নতুন আল্টিমেটামে আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

কুয়েট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দেড় শতাধিক জন আহত হন। ওই দিন কিছু উশৃঙ্খল ছাত্র উপাচার্যকে মারধর, গালাগাল ও গায়ে থুথু দেয় বলে উপাচার্যের অভিযোগ। এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য হল ও একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

গত ১৩ এপ্রিল দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বন্ধ থাকা কুয়েটে প্রবেশ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান শুরু করে। ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষে জড়িত ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, আগামী ২ মে হল খোলা ও ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে ১৫ এপ্রিল তালা ভেঙে ছয়টি হলে প্রবেশ করে।

এছাড়া ওই দিন তারা ৬ দফা দাবির পরিবর্তে উপাচার্যের অপসারণের ১ দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। ১৬ এপ্রিল উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও পোস্টার লাগায়। উপাচার্যকে বহাল রাখা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে পাল্টা মিছিল ও মানববন্ধন করেন কুয়েটের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সর্বশেষ ১৭ এপ্রিল সকালে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা শিক্ষার্থীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন কর্মচারীরা। আর উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে রাতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। গত দুইদিন ধরে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসের গেটে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও তারা কোনো পক্ষকে বাধা দেয়নি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, ছাত্রদলের নেতাকর্মী ও বহিরাগতরা তাদেরকে মারধর করার ঘটনায় থানায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি। উল্টো বহিরাগত একজন ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে। এ ব্যাপারে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের পক্ষে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

তারা বলেন, ২ মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় তাদের লেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে। হল বন্ধ ছিল, অনেকে হলে থেকে আশপাশের এলাকায় টিউশনি করে। তাদের টিউশনি বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। সে কারণে তারা তালা ভেঙে হলে উঠতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু হলে খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এর ফলে তাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারপরও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, বর্তমান উপাচার্যকে অপসারণ করে নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। সাময়িক বহিষ্কার করা ৩৭ জনের মধ্যে যে কয়জন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী রয়েছে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করতে হবে।

অন্যদিকে কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড.

এম এম এ হাশেম বলেন, ছাত্ররা ভুল পথে আছে। তারা তালা ভেঙে হলে ঢুকে আইন লঙ্ঘন করেছে। তালা ভাঙা তাদের উচিত হয়নি। কারণ তালা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। তাদের উচিৎ আপাতত হল থেকে নেমে গিয়ে আগামী ২ মে হলে আসা।

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন ইউসুফ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের দিন উপাচার্যের গায়ে ছাত্রদের হাত তোলা ঠিক হয়নি।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে- যেসব ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হবে, তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ক্লাসে ফিরে যাবো না।

এদিকে শিক্ষক সমিতির এ ঘোষণা নিয়ে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ সাংবাদিকদের বলেন, আমি কেন পদত্যাগ করবো? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুইজন সিনিয়র শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থী ও কুয়েট প্রশাসন নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। 

এদিকে কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর উপর গত ২ মাস কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট।

কুয়েটের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভর্তি হই। ইতোমধ্যে ৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১ বছর ৩-৪ মাস সেশনজটের মধ্যে আছি। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে তা অনিশ্চিত। ফলে সেশনজট আরও বাড়ছে।

২০১৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দেড় বছর সেশনজট ছিল। আরও ২ মাস পিছিয়ে গিয়েছি। গত ৪ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আমাদের চাকরিতে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপ চ র য র স শনজট অন শ চ পর ক ষ অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে উত্তাল কুয়েট, বাড়ছে সেশনজট

উত্তাল হয়ে উঠেছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) ক্যাম্পাস। উপাচার্যকে অপসারণের দাবির পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীরা। উপাচার্যকে অপসারণ করা না হলে সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। আর বিশৃঙ্খলার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি না হলে ক্লাসে ফিরবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা। এদিকে গত প্রায় ২ মাস ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ছে সেশনজট। 

কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদের অপসারণের দাবিতে আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে কুয়েট ক্যাম্পাসের দুর্বার বাংলা চত্বরে জড়ো হন একশ’র মতো শিক্ষার্থী। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণের সময় দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার লাগানো হয়। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, মঙ্গলবার তারা তালা ভেঙে ৬টি হলে উঠলেও কর্তৃপক্ষ খাবার, পানি ও ইন্টারনেট সংযোগ দেয়নি। ২ মাস হল বন্ধ থাকায় ধুলাবালি জমেছে। এর ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন। তারপরও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

মিছিল শেষে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবিলম্বে উপাচার্যকে অপসারণ, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে তা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ করে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু করতে হবে। যদি এটা করা না হয় তাহলে আমাদের ‘নতুন জুলাই’ হবে এই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের এই যুদ্ধ হবে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল নজরুলের বিরুদ্ধে, যেসব ছাত্র উপদেষ্টা আমাদের রক্তের বিনিময়ে আজকে ক্ষমতায় বসেছে তাদের বিরুদ্ধে। 

এদিকে ‘কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক উপাচার্যকে হয়রানি ও তাকে অপসারণের অপচেষ্টার’ প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কুয়েটের অধিকাংশ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দুপুর ২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি দুর্বার বাংলা চত্বরে গিয়ে মানববন্ধনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মানববন্ধনে কুয়েটের সিনিয়র শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম এ হাশেম বলেন, ছাত্ররা ভুল পথে আছে। তারা তালা ভেঙে হলে ঢুকে আইন লঙ্ঘন করেছে। তালা ভাঙা তাদের উচিত হয়নি। কারণ তালা দেওয়া হয়েছিল সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।  

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সালাউদ্দিন ইউসুফ বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি সংঘর্ষের দিন উপাচার্যের গায়ে ছাত্রদের হাত তোলা ঠিক হয়নি। 
কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের ১ দফা দাবি আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের এক দফা দাবি হচ্ছে যেসব ছাত্র দোষী সাব্যস্ত হবে, তারা শাস্তি না পাওয়া পর্যন্ত আমরা কেউ ক্লাসে ফিরে যাব না। 

সেকশন অফিসার ইমদাদুল বলেন, উপাচার্যকে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আমার সামনেই মারধর করা হয়। ছাত্ররা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, এই রকম গালিগালাজ আমার জীবনে আমি শুনিনি। স্যারকে রক্ষা করতে গেলে আমাকেও মারধর করে।  

কুয়েটের কর্মচারী ইমদাদ মোড়ল বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের অযৌক্তিক দাবি মানতে রাজি না। কিছু শিক্ষার্থী উপাচার্যকে মারধর, গালাগাল এবং তার গায়ে থু থু দিয়েছিল। এখন তাকে অপসারণের টার্গেট নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। 

এ দিকে কুয়েটে আগে থেকেই প্রায় দেড় বছরের সেশনজট রয়েছে। এর উপর গত ২ মাস কোনো ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থা চলমান থাকায় বাড়ছে সেশনজট। আগামী ২ মে হল খোলা ও ৪ মে ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা।

কুয়েটের শিক্ষার্থী ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ভর্তি হই। ইতোমধ্যে ৫ বছর পার হয়ে গেছে। আমরা ১ বছর ৩/৪ মাস সেশনজটের মধ্যে আছি। কবে নাগাদ ক্লাস শুরু হবে, পরীক্ষা হবে তা অনিশ্চিত। ফলে সেশনজট আরও বাড়ছে।

২০১৯ ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের দেড় বছর সেশনজট ছিল। আরও ২ মাস পিছিয়ে গিয়েছি। গত ৪ মার্চের মধ্যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল। এরপর আমাদের চাকরিতে ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু এখনও পরীক্ষা বাকি রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে বিরোধের জেরে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর সংঘর্ষে দেড় শতাধিক আহত হন। এরপর সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে কুয়েটের আবাসিক হল ও একাডেমিক কার্যক্রম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্যতিক্রমী একাডেমিক ক্যালেন্ডারে সেশনজট মুক্ত খুবি
  • পাল্টাপাল্টি আন্দোলনে উত্তাল কুয়েট, বাড়ছে সেশনজট