রাশিয়ার ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওপর আন্তর্জাতিক লেনদেনের বার্তা পাঠানোর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সুইফট সিস্টেমের নিষেধাজ্ঞা থাকায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঋণের অগ্রিম ও সুদ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তবে বিশেষ কোনো উপায়ে এ অর্থ পরিশোধ করা যায় কি-না এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইবে বাংলাদেশ। এমন তথ্য জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ। 

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

শুক্রবার রাতে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে অংশ নিতে অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছে। এর বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক আরোপসহ দ্বিপক্ষীয় বেশকিছু আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। 

এ সফরে কোন কোন বিষয় অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রথম উদ্দেশ্য হলো বিভিন্ন দাতাসংস্থা থেকে বাজেট সহায়তা পাওয়া। বাজেট সহায়তা ও প্রকল্পভিত্তিক ঋণ পেতে বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং ওপেক ফান্ডের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ হবে বলে জানান তিনি। অর্থায়ন নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে দুটি ও ওপেক ফান্ডের সঙ্গে একটি চুক্তি হতে পারে বলেও তিনি জানান।  

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগের সঙ্গে রূপপুর প্রকল্পের অর্থ পরিশোধ বিষয়ে আলোচনা হবে। নিষেধাজ্ঞা থাকায় রাশিয়ায় অর্থ পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে বিশেষ কিছু করা যায় কি-না এ নিয়ে আলোচনা হবে। এছাড়া অভিবাসী নিয়ে কাজ এমন আন্তর্জাতিক সংস্থাও আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বৈঠকে যোগ দেবে। তাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার এবং রাশিয়ার মধ্যে ২০১১ সালের নভেম্বরে একটি ঋণ চুক্তি হয়।  চুক্তি অনুযায়ী মোট ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার প্রকল্প ব্যয়ের ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১ দশমিক ২৬৫ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ অগ্রিম হিসেবে রাশিয়াকে দেবে। বাকি ৯০ শতাংশ অর্থাৎ ১১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে রাশিয়া সরকার। অগ্রিমের কিছু পরিশোধ সম্ভব হলেও নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাকি অংশ, মোট ঋণের সুদ ও প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য নেওয়া ঋণের কিছু অংশ পরিশোধ সম্ভব হচ্ছে না। 

ঋণের আসল পরিশোধের কিস্তি ২০২৭ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও জটিলতা দেখা দেওয়ায় বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া ইতোমধ্যে কিস্তি পরিশোধ দেড় বছর  বছর পিছিয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী অগ্রিম ও ঋণ নেওয়ার পর থেকে সুদ পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকায় এ অর্থ দিতে বারবার চাপ দিচ্ছে রাশিয়া সরকার।  

যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের বিষয়েও দেশটির বাণিজ্য প্রতিনিধি ইইএসটিআরের সঙ্গে আলোচনা হবে বলেও জানান অর্থ উপদেষ্টা। 

তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে যতটুকু সম্ভব সরকারি পর্যায়ে আলোচনা ছাড়াও বেসরকারি খাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। জ্বালানি খাতের  বিনিয়োগকারীদের  সঙ্গে আলাপ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের  মূল্য লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। এটি করতে তাদের পণ্য আমদানিতে কিছু প্রণোদনা দেওয়ার বিষয় রয়েছে। এছাড়া এলএনজি ও মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) আওতায় বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ থাকছে।

উপদেষ্টা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি বা অগ্রাধিকারমূলক  সুবিধা ফেরত পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।  

জিএসপি পুনরুদ্ধার  সম্ভব কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, খুব দ্রুত সম্ভব নয়। এর সঙ্গে শ্রম পরিবেশসহ নানা ইস্যু জড়িত। তবে ইতোমধ্যে এসব ক্ষেত্রে বেশ উন্নতি হয়েছে, যা তাদের সামনে তুলে ধরা হবে। 

অর্থ উপদেষ্টা আরও বলেন, সেখানকার বিজনেস কাউন্সিলের সঙ্গে আলাপ করা হবে। সেখানে বিশ্বের শীর্ষ ৭০টি কোম্পানি রয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন  আটলান্টিক কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্কের বিষয়ে ইউএসটিআরের সঙ্গে আলোচনায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী ও বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানও যোগ দেবেন। তারা ফিরে আসার পর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ শেষে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করার জন্য যাবেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র প রকল প পর শ ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গার্দিওয়ালার ভয়, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা হারালে বড় ট্রান্সফার হবে

পেপে গার্দিওলা যেমন শিরোপা জেতাতে পারদর্শী, ঠিক একইভাবে ট্রান্সফার মার্কেটের সবচেয়ে বড় খদ্দেরও তিনি। শীতকালীন দল বদলেই খরচ করেছেন ২০০ মিলিয়ন ইউরো। সিটি কোচের এই ধরনের বিশাল অংকের অর্থ খরচের ইচ্ছে আছে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন দল বদলেও। তবে গার্দিওয়ালা সতর্ক করে বলেছেন যে, ম্যানসিটি চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পেলে তাদের শীর্ষস্থানীয় ট্রান্সফার টার্গেটগুলো মিস হয়ে যেতে পারে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএলে) সবশেষ ৭ মৌসুমে ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। তবে এই মৌসুমে তারা আছে টেবিলের পাঁচ নম্বরে। সামনের মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে ইপিএল থেকে ৫টি দল খেলার সুযোগ পাবে। তাই বর্তমান অবস্থানে থেকেই যদি সিটি মৌসুম শেষ করে, তাহলে তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে অসুবিধা হবে না। তবে যদি একটুও পা ফসকায়, তাহলে ঘারে নিঃশ্বাস ফেলা অ্যাস্ট ভিলা ও চেলসির কাছে হারাতে হবে ৫ নম্বর স্থানটিও। সিটি শনিবার (১৯ এপ্রিল) এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগে তাদের হাতে রয়েছে আর মাত্র ছয়টি খেলা।

চলতি মৌসুমে কিছুটা হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর গার্দিওয়ালা গ্রীষ্মে দল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবল নিশ্চিত না হয়, তাহলে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে খেলতে সেরা খেলোয়াড়দের আনতে অসুবিধা হতে পারে।

আরো পড়ুন:

ম্যানসিটির ফুটবলারদের ইচ্ছেশক্তির অভাব দেখছেন গুন্দোয়ান

ডার্বি ড্র করে ইউনাইটেড সমর্থকদের ‘ক্লাসলেস’ বললেন গার্দিওলা

গার্দিওয়ালা বলেন, “এটা নির্ভর করে আমরা কাদের নিতে চাই এবং তারা কী শুধুমাত্র আমাদেরকেই পছন্দ করে। যদি তাদের সামনে একাধিক বিকল্প থাকে, তাহলে আমি নিশ্চিত, তারা অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলছে এমন ক্লাবগুলোকেই বেছে নেবে।”

ইএসপিএনের দাবি, কেভিন ডি ব্রুইনার বিকল্প হিসেবে, জার্মান ক্লাব বেয়ার লেভারকুসেনের ফরোয়ার্ড ফ্লোরিয়ান উইর্টজের দিকে নজর রেখেছে সিটি। তবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখও তাকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী। আর এই দুই দলই আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলবে।

গার্দিওয়ালার ধারনা, “আমি জানি না। হয়তো কিছু খেলোয়াড় আসবে, আবার কেউ কেউ, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারছি না’ বলে আসতে চাইবে না। আমি এখনও কোনও সম্ভাব্য ভবিষ্যতের খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলিনি, তাই আসলে কিছুই বলতে পারছি না।”

ডি ব্রুইনা নিশ্চিতভাবে সিটি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তবে দলে বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। গার্দিওয়ালা বলেন, “আমার এখন বড় স্কোয়াড। দুই একজন খেলোয়াড় গুডিসন পার্কে (এভারটনের মাঠ) সফরে যেতে পারবেন না। এটা খুব বাজে বিষয়, ভয়ানক।

তারা বেঞ্চেও থাকতে পারবে না, বাসায় বসে ভাববে ‘আমি এখানে কী করছি?’ তারা তাদের কাজটাই করতে পারছে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেখা যে কে কতটা নির্ভরযোগ্য। যদি কোনো খেলোয়াড় নির্ভরযোগ্য হয়, তাহলে আর কারো দরকার নেই।”

“যদি এমন হয়, যে পুরো মৌসুমে ২০ কিংবা ২৫ শতাংশ ম্যাচ খেলে, তাহলে হয় তার নিজের বিকল্প খোঁজা দরকার, নয়তো অন্য কাউকে আনতে হবে। এটা ভারসাম্য রক্ষা, যেটা আমাদের আলোচনা, পর্যবেক্ষণ করে ঠিক করতে হবে।”

ঢাকা/নাভিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ