চট্টগ্রামে বিএনপি ও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের সঙ্গে হামলা পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুই দফায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের চারজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

আহতরা হলেন- ছাত্রঅধিকার পরিষদ নেতা মো. মারুফ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর যুগ্ম সদস্যসচিব মোহাম্মদ মীর ও কর্মী মো.

সজীব এবং ছাত্রদল কর্মী রায়াদ হাসান। নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় অবস্থিত মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা কমিটি গঠন ও এক নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে বারণ করাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। 

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি কলেজের পরিচালনা কমিটি গঠন হয়। এতে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিনসহ চার বিএনপি নেতা। আজ সকালে তাদেরকে কলেজে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কমিটি গঠনের পর সিরাজ উদ্দিনকে নিয়ে কটূক্তি করেন এক নারী শিক্ষক। আরেক শিক্ষক সেটি সিরাজ উদ্দিনকে জানিয়ে দেন। এর জের ধরে সিরাজ উদ্দিন ওই নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে বারণ করেন। 

বিষয়টি শিক্ষার্থীরা জানতে পারলে আজ সংবর্ধনা চলাকালে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানান। খবর পেয়ে স্থানীয় বিএনপি-ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও জড়ো হন। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা মো. সজীব নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে বিকেলে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধি দল কলেজে যান। তারা অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কলেজ গেইটের বাইরে থেকে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তাদের ওপর চড়াও হন ছাত্রদল ও বিএনপি নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি নেতারা থানায় যান। সেখানে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা আবারও তাদের ওপর চড়াও হন। থানার বাইরে ছাত্রঅধিকার পরিষদ নেতা মারুফকে পেয়ে মারধর করেন। পরে পুলিশ উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব নিজাম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘সম্প্রতি কলেজটির পরিচালনা কমিটি গঠন হয়। এরমধ্যে চারজনই বিএনপির। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কলেজে তাদের সংবর্ধনা দেয় ছাত্রদল। কলেজটিতে রাজনীতি নিষিদ্ধ। এরপরও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এতে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে তারা। খবর পেয়ে আমাদের একটি প্রতিনিধি দল গেলে তাদের ওপরও চড়াও হয় ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরে অভিযোগ দিতে থানায় গেলে সেখানে আমাদের একজনকে মারধর করে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রদল ও বিএনপি। হামলায় জড়িত এই নব্য ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আবার রাজপথে নামবো।’

এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জোবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, ‘এক শিক্ষককে কলেজে আসতে বারণ করার প্রতিবাদ করায় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনিব্যবস্থা নিবো। পুলিশের সামনে এই ধরনের হামলার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যর্থতা।’

আকবরশাহ থানা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য মাইনুদ্দীন চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষকদের দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের জের ধরে শিক্ষার্থীরা বিরোধে জড়িয়েছেন। এই বিষয়ে মীমাংসাও হয়েছিল। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিচয় দেওয়া ছেলেরা যাওয়ার সময় ছাত্রদলের এক কর্মীকে বেধড়ক পিটিয়েছে। তারা থানায় অভিযোগ দিতে গেলে দুইপক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছে বলে শুনেছি।’ তার দাবি, ছাত্রদল নয়; কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। 

শিক্ষককে বের করে দেওয়ার হুমকি প্রসঙ্গে কলেজ পরিচালনা কমিটির আরেক সদস্য মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেন, ‘কাউকে বের করে দেওয়ার এখতিয়ার নেই। এগুলো মিথ্যা অভিযোগ। এখানে বৈষম্যবিরোধীর ব্যানারে কিছু মানুষ বিশৃঙ্খলা করছে। যারা একসময় ছাত্রলীগ-শিবির করত।’

আকবরশাহ থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কলেজ কমিটির এক সদস্যকে নিয়ে এক শিক্ষকের কটূক্তির জেরে দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধের সূত্রপাত হয়। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছেলেরা ছাত্রদলের এক ছেলেকে পিটিয়েছে। পরে তারা আবার একা পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজনকে মারধর করেছে। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এক শ ক ষ শ ক ষকক ব এনপ সদস য এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

গার্দিওয়ালার ভয়, চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা হারালে বড় ট্রান্সফার হবে

পেপে গার্দিওলা যেমন শিরোপা জেতাতে পারদর্শী, ঠিক একইভাবে ট্রান্সফার মার্কেটের সবচেয়ে বড় খদ্দেরও তিনি। শীতকালীন দল বদলেই খরচ করেছেন ২০০ মিলিয়ন ইউরো। সিটি কোচের এই ধরনের বিশাল অংকের অর্থ খরচের ইচ্ছে আছে আসন্ন গ্রীষ্মকালীন দল বদলেও। তবে গার্দিওয়ালা সতর্ক করে বলেছেন যে, ম্যানসিটি চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না পেলে তাদের শীর্ষস্থানীয় ট্রান্সফার টার্গেটগুলো মিস হয়ে যেতে পারে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ (ইপিএলে) সবশেষ ৭ মৌসুমে ৬ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। তবে এই মৌসুমে তারা আছে টেবিলের পাঁচ নম্বরে। সামনের মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগে ইপিএল থেকে ৫টি দল খেলার সুযোগ পাবে। তাই বর্তমান অবস্থানে থেকেই যদি সিটি মৌসুম শেষ করে, তাহলে তাদের চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে অসুবিধা হবে না। তবে যদি একটুও পা ফসকায়, তাহলে ঘারে নিঃশ্বাস ফেলা অ্যাস্ট ভিলা ও চেলসির কাছে হারাতে হবে ৫ নম্বর স্থানটিও। সিটি শনিবার (১৯ এপ্রিল) এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচে নামার আগে তাদের হাতে রয়েছে আর মাত্র ছয়টি খেলা।

চলতি মৌসুমে কিছুটা হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর গার্দিওয়ালা গ্রীষ্মে দল ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করছেন। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, যদি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফুটবল নিশ্চিত না হয়, তাহলে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে খেলতে সেরা খেলোয়াড়দের আনতে অসুবিধা হতে পারে।

আরো পড়ুন:

ম্যানসিটির ফুটবলারদের ইচ্ছেশক্তির অভাব দেখছেন গুন্দোয়ান

ডার্বি ড্র করে ইউনাইটেড সমর্থকদের ‘ক্লাসলেস’ বললেন গার্দিওলা

গার্দিওয়ালা বলেন, “এটা নির্ভর করে আমরা কাদের নিতে চাই এবং তারা কী শুধুমাত্র আমাদেরকেই পছন্দ করে। যদি তাদের সামনে একাধিক বিকল্প থাকে, তাহলে আমি নিশ্চিত, তারা অবশ্যই চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলছে এমন ক্লাবগুলোকেই বেছে নেবে।”

ইএসপিএনের দাবি, কেভিন ডি ব্রুইনার বিকল্প হিসেবে, জার্মান ক্লাব বেয়ার লেভারকুসেনের ফরোয়ার্ড ফ্লোরিয়ান উইর্টজের দিকে নজর রেখেছে সিটি। তবে রিয়াল মাদ্রিদ এবং বায়ার্ন মিউনিখও তাকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী। আর এই দুই দলই আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলবে।

গার্দিওয়ালার ধারনা, “আমি জানি না। হয়তো কিছু খেলোয়াড় আসবে, আবার কেউ কেউ, ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে পারছি না’ বলে আসতে চাইবে না। আমি এখনও কোনও সম্ভাব্য ভবিষ্যতের খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলিনি, তাই আসলে কিছুই বলতে পারছি না।”

ডি ব্রুইনা নিশ্চিতভাবে সিটি ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন। তবে দলে বেশ কয়েকজন সিনিয়র খেলোয়াড়ের ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। গার্দিওয়ালা বলেন, “আমার এখন বড় স্কোয়াড। দুই একজন খেলোয়াড় গুডিসন পার্কে (এভারটনের মাঠ) সফরে যেতে পারবেন না। এটা খুব বাজে বিষয়, ভয়ানক।

তারা বেঞ্চেও থাকতে পারবে না, বাসায় বসে ভাববে ‘আমি এখানে কী করছি?’ তারা তাদের কাজটাই করতে পারছে না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, দেখা যে কে কতটা নির্ভরযোগ্য। যদি কোনো খেলোয়াড় নির্ভরযোগ্য হয়, তাহলে আর কারো দরকার নেই।”

“যদি এমন হয়, যে পুরো মৌসুমে ২০ কিংবা ২৫ শতাংশ ম্যাচ খেলে, তাহলে হয় তার নিজের বিকল্প খোঁজা দরকার, নয়তো অন্য কাউকে আনতে হবে। এটা ভারসাম্য রক্ষা, যেটা আমাদের আলোচনা, পর্যবেক্ষণ করে ঠিক করতে হবে।”

ঢাকা/নাভিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ