সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জে বিজিবির সদস্যদের ওপর অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকদের চড়াও হওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার রাতে ফেসবুকে ছড়ানো ভিডিওটি গত মঙ্গলবার বিকেলে ধারণ করা। ভোলাগঞ্জে রেলওয়ে রজ্জুপথ এলাকায় টহলে গেলে বিজিবি সদস্যদের ওপর শ্রমিকেরা চড়াও হন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রেলওয়ে রজ্জুপথ এলাকায় গত মঙ্গলবার বিকেলে বিজিবির তিন সদস্য টহলে যান। ওই সময় রজ্জুপথ এলাকায় অবৈধভাবে তোলা পাথর বহনকারী একটি নৌকা ডুবে যায়। শ্রমিকদের দাবি, বিজিবি সদস্যরা ওই নৌকা ডুবিয়েছেন। একপর্যায়ে বালু-পাথর উত্তোলনকারী শ্রমিকেরা জড়ো হয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর চড়াও হন। তাঁদের ভাষ্য, বিজিবির সদস্যদের টাকা দিয়ে তাঁরা বালু ও পাথর তোলেন। এরপরও তাঁরা কেন তাঁদের নৌকা ডুবিয়েছেন। নৌকা ডোবানোর জন্য শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ দাবি করতে থাকেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। এসব ঘটনার ভিডিও অন্য শ্রমিকেরা ধারণ করছিলেন। এর বেশ কিছু সময় পর বিজিবি সদস্যরা ক্যাম্পে ফিরে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট ৪৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ভোলাগঞ্জ রেলওয়ে রজ্জুপথে হামলার ঘটনা নতুন নয়। আগেও একাধিকবার দুষ্কৃতকারীরা ভ্রাম্যমাণ আদালতসহ পুলিশ প্রশাসনের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, সেখানে টাকাপয়সা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নাম ভাঙিয়ে অনেকেই টাকাপয়সা তোলেন। কিন্তু বিষয়টি বিজিবি কিংবা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অগোচরে হয়ে থাকে। এসব ঘটনার সঙ্গে বিজিবি কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জড়িত থাকেন না।

প্রসঙ্গত, সর্বশেষ গতকাল বিকেলে ভোলাগঞ্জ ১০ ঘাট এবং ধলাই নদে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকালে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করে মামলা করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আইনের হাত বনাম নিজের হাত  

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।

এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।

অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়। 

সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।

উছমান গনি: শিক্ষক
    usmgoni@gmail.com

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
  • অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২ মাসে আড়াই হাজার গ্রেপ্তার
  • উদ্ধারপ্রক্রিয়ায় এলাকাবাসীকে যুক্ত করুন
  • আইনের হাত বনাম নিজের হাত  
  • জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির