কতগুলো বিষয়ে একমত, তা এখনই বলতে পারব না: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 17th, April 2025 GMT
বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আজ বৃহস্পতিবার দিনভর বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতি, মৌলিক অধিকারসমূহ, আইন বিভাগের সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের কথা হয়েছে। বৈঠক শেষে বিকেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে তাঁরা একমত হয়েছেন, তবে সেগুলো এখন সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবেন না।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজসহ অন্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বিএনপির প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। এই দলে সালাহউদ্দিন আহমদ ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সচিব নিরুজ্জামান খান অংশ নেন। দুপুরে মধ্যাহ্নবিরতি দিয়ে বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে এদিনের মতো আলোচনা শেষ হয়।
এরপর জাতীয় সংসদের এলডি হলে আলোচনা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আলোচনা শুরু করেছিলাম সংবিধান সংস্কার বিষয়ে এবং এর পরবর্তী সময়ে কিছুক্ষণ আগে আমরা বিচার বিভাগ নিয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো বিস্তারিত দফাওয়ারি আমরা আলোচনা করে যাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে এখন আমি স্পেসিফিক আপনাদের বলতে পারব না, আমরা কতটা একমত।’
সংবিধান সংস্কার নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আমরা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, ফান্ডামেন্টাল রাইটস এগুলোর ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে একমত হয়েছি এবং কিছু কিছু বিষয়ে আমরা আমাদের সুচিন্তিত মতামত তুলে ধরেছি, ওনারাও আমাদের মতামতের ভিত্তিতে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।’
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির বিষয়ে বিএনপি পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে চায় বলে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ওইখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। ওইখানে গণতন্ত্র ,জাতীয়তাবাদসহ সবকিছু আছে রাষ্ট্র ও সংবিধানের মূলনীতি হিসেবে। দুইটা দুই জিনিস। আমরা বহুত্ববাদের পক্ষে নই, ধর্মনিরপেক্ষতা নীতির পক্ষেও নই। আমরা বহুত্ববাদের বিরোধিতা করেছি। তবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের যে কথাগুলো স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে উল্লেখ করা আছে, সেই সমস্ত বিষয়ে ওনারা প্রস্তাবনায় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এখানে প্রস্তাব করেছেন। আমরা বলেছি, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে একমত তবে আমরা দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সেটা আপনাদেরকে পরে জানাব।’
বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপির দলীয় ফোরামেও আলোচনা হবে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে আমাদের মতামত জানিয়েছি, ওনারাও ওনাদের মতামত জানিয়েছেন, কতটুকু গ্রহণ করবেন, সেটা পরবর্তী সময়ে দেখা যাবে। ৭০ অনুচ্ছেদের অর্থবিল ছাড়া বাকি সব যদি হয়, তাহলে সরকারের স্থায়িত্ব থাকবে না, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বাধা আসতে পারে। সে জন্য আমরা বলেছি, অর্থবিল, সংবিধান সংশোধন বিল, আস্থা ভোট এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিধানসংশ্লিষ্ট বিষয় বাদে সংসদ সদস্যরা বাকি সব বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।’
সব বিষয়ে গণভোটের প্রয়োজন নেই বলে মনে করে বিএনপি। সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিষয়ে গণভোট হতে পারে। এরপরও ভবিষ্যতে সংসদ যদি কোনো বিষয়ে গণভোট আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা মনে করে, তাহলে তারা সেটা চিন্তা করতে পারে। ঢালাওভাবে গণভোট হওয়া অনুচিত হবে। এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) নিয়ে আলোচনা হয়নি। তবে দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবগুলোর ওপর যে মতামত দেওয়া হয়েছিল, সেখানে তাঁরা বলেছেন, এই ধারণার সঙ্গে বিএনপি একমত নয়। কারণ, বাংলাদেশে কখনো এনসিসির প্রয়োগ ছিল না। এখন প্রবর্তন করা হলে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও সংসদের ইতিহাসে এটা নতুন হবে।
এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, ‘হঠাৎ করে এমন কোনো ব্যবস্থা হলে সেটা অন্যান্য ক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগ ও আইন সভাকে দুর্বল করে দিচ্ছে কি না, রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে, যখন সংসদ থাকবে না অথবা ভেঙে যায়, সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে সেই কমিশন খুব বেশি ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অন্য কিছু করে কি না, এগুলো আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। তারপরও আমরা বলেছি, বিষয়টা পরবর্তী নির্বাচিত সংসদে বিস্তর আলোচনার মধ্য দিয়ে গ্রহণ করা হবে কি হবে না, সেটা তখন দেখা যাবে। এখন আমরা নীতিগতভাবে একমত নই।’
আগে দ্বিমত ছিল, এখন একমত হয়েছেন, এমন কিছু আছে কি না—এ প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘অনেক বিষয় আছে। এগুলো কম্পাইল (একসঙ্গে করে) করে আমরা জানাব।’
যেসব বিষয়ে একমত হয়েছেন, তার বাস্তবায়নটা কীভাবে হবে—এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাজটা কী? সবার সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যেসব বিষয়ে, সেগুলো একত্র করে ওনারা রিপোর্ট তৈরি করবে। হয়তো যারা যারা একমত হয়েছে, সেই পক্ষগুলোকে স্বাক্ষর হয়তো করতে বলবে। এটাকে ওনারা জুলাই চার্টার বলবে কি না, এটা ওনাদের বিষয়।’
আগামী রোববার বেলা ১১টা থেকে একই স্থানে কমিশনের সঙ্গে বিএনপির আবার আলোচনায় বসার কথা রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ত য় ঐকমত য ব এনপ র ত হয় ছ মত মত সদস য গণভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিধ্বস্ত রাখাইন রাজ্যে এখনই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব নয়
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য বর্তমানে যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে; সেখানে এখনই রোহিঙ্গাদের নিরাপদভাবে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা জাতিসংঘসহ সব পক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি, যাতে রাখাইন রাজ্যে শান্তি এবং স্থিতি অবস্থা ফিরে আসে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করে। আশা করছি আমরা সফলভাবে রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন করতে পারব।’
আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরে রাখাইন সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ উৎসব ‘মহা সাংগ্রাং পোয়ে’ উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ‘শুভ রাখাইন সাংগ্রেং ১৩৮৭’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন খলিলুর রহমান। সেখানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে কথাগুলো বলেন তিনি।
কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আয়োজিত ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। রাখাইন সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশ সকল ধর্মের, নৃগোষ্ঠীর, সংস্কৃতির একটি দেশ। আমাদের দেশে এই সময়টা হচ্ছে উৎসবের সময়। আমরা বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন করেছি। আজ রাখাইনদের সাংগ্রেং পেয়েতে এসেছি। ভালোই লাগছে।’ তিনি সবাইকে রাখাইন নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, মিয়ানমার সরকার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে সম্মত হওয়া বর্তমান সরকারের বিশাল কূটনৈতিক সফলতা। এটি সরকারের উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপটি প্রয়োজন ছিল রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য।
এর আগে গতকাল দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেন খলিলুর রহমান। আশ্রয়শিবিরের একটি মসজিদে তিনি জুমার নামাজ আদায় করেন।
এ প্রসঙ্গে খলিলুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বলেছি জাতিসংঘের উদ্যোগে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে। সেই সম্মেলনে রোহিঙ্গারা যেন সংঘবদ্ধভাবে তাঁদের অবস্থান তুলে ধরেন। তাঁদের মধ্যে যেন নেতৃত্ব তৈরি করা যায়, যাতে নিরাপদে স্বদেশে ফেরত যেতে পারেন। আগামী ঈদে যেন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে পারেন, তার জন্য চেষ্টা চলছে।’