শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষায় তৎপর দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ক্ষমতায় বসার পর ইতিমধ্যেই ‘গোল্ডেন ডোম’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঢাল তৈরির জন্য নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন তিনি। এই কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ ধনকুবের ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্সসহ আরও দুটি প্রতিষ্ঠান। ভিন্ন ছয়টি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।

সূত্রগুলোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী স্পেসএক্স বাদে বাকি দুটি প্রতিষ্ঠান হলো সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘প্যালান্টিয়ার’ ও ড্রোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্ডুরিল’। তিনটি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারাই ট্রাম্পের বড় রাজনৈতিক সমর্থক। তাঁদের মধ্যে ইলন মাস্ক গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে বিপুল পরিমাণ অর্থসহায়তা দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্পেসএক্সের গোল্ডেন ডোমের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন ইতিবাচক ইঙ্গিত দিয়েছে। তারপরও কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে যে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া এখনো শুরুর দিকে রয়েছে। প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটির কাঠামো শেষ পর্যন্ত কেমন হবে এবং এটি তৈরির কাজে কাকে নির্বাচন করা হবে, তা আগামী মাসগুলোয় নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হতে পারে।

নিজেদের পরিকল্পনা তুলে ধরতে বিগত সপ্তাহগুলোয় ট্রাম্প প্রশাসন ও পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তিন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। সূত্র জানিয়েছে, গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় শত্রুপক্ষের ক্ষেপণাস্ত্র ও সেগুলোর গতিবিধি শনাক্ত করার জন্য ৪০০ থেকে ১ হাজারের বেশি স্যাটেলাইট তৈরি করে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হতে পারে।

এ ছাড়া গোল্ডেন ডোমের আওতায় হামলা চালানোর জন্য আলাদা ২০০টি স্যাটেলাইটের বহর কক্ষপথে পাঠানো হতে পারে। স্যাটেলাইটগুলোয় ক্ষেপণাস্ত্র বা লেজার মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে তিনটি সূত্র। তবে স্যাটেলাইটে অস্ত্র মোতায়েনের কাজের সঙ্গে স্পেসএক্সকে যুক্ত করা হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গোল্ডেন ডোমের কাজ পাওয়া নিয়ে স্পেসএক্স, প্যালান্টিয়ার, অ্যান্ডুরিল ও হোয়াইট হাউসের কাছে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি তারা। রয়টার্সকে বিস্তারিত কিছু জানায়নি পেন্টাগনও। শুধু বলেছে যে নির্বাহী আদেশ ও হোয়াইট হাউসের নীতিমালা মেনে তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তালিকা মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে দেবে। সেখান থেকে কাদের বেছে নেওয়া হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট।

উল্লেখ্য, ইসরায়েলের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম। অত্যাধুনিক এ ব্যবস্থা দিয়ে দেশটি হাজার হাজার রকেট আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্প বারবার ইসরায়েলের আয়রন ডোমৈর মতো একটিআকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নির্মাণ করার কথা বলেছিলেন।

গোল্ডেন ডোমের ‘গ্রাহক হবে’ সরকার

সূত্রের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সরকারকে দেওয়া স্পেসএক্সের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, তারা গোল্ডেন ডোম তৈরির পর তা ব্যবহারের জন্য মার্কিন সরকারকে এর গ্রাহক হতে হবে। অর্থাৎ, অর্থ দিয়ে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সুবিধা নিতে পারবে সরকার। তবে এতে করে গোল্ডন ডোম নির্মাণ ও মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে সরকার।

গ্রাহকভিত্তিক গোল্ডেন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীলতা নিয়ে পেন্টাগনের কয়েকজন কর্মকর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে দুটি সূত্র। এ ধরনের বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষাব্যবস্থায় এ ধরনের নির্ভরশীলতা অস্বাভাবিক বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তারা।

গোল্ডেন ডোমের আংশিক মালিকানা বা পরিচালনার দায়িত্ব স্পেসএক্সকে দেওয়া হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছেন মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর জেনালের মাইকেল গুয়েটলাইন। এ ছাড়া অন্য বিকল্পের কথাও ভাবা হচ্ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র সরকারই এর মালিকানা ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে অথবা সরকার এর মালিকানায় থাকবে আর পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে অন্য প্রতিষ্ঠানকে।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটি তৈরির জন্য পেন্টাগনের কাছে ১৮০টির বেশি প্রতিষ্ঠান আগ্রহের কথা জানিয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে এপিরাস, উরসা মেজর, আর্মাডার ইত্যাদি। সূত্র জানিয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে নিজেদের সক্ষমতা হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের কাছে তুলে ধরেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স য ট ল ইট স প সএক স কর মকর ত র র জন য সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কানাডায় ফেডারেল নির্বাচনের আগাম ভোট শুরু, এগিয়ে লিবারেল পার্টি

কানাডার স্থানীয় সময় শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ফেডারেল নির্বাচনের আগাম ভোট গ্রহণ। ভোট চলবে ১৮, ১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিল। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোট চলবে।

নির্বাচন কানাডার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভোটাররা নির্ধারিত চার দিনের যেকোনো দিন তাদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন। আগাম ভোটের সুবিধা গ্রহণ করে অনেকেই মূল নির্বাচনের দিন ভিড় এড়াতে চাইছেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তারা এই সময়ে আরও বেশি ভোটারকে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। ভোটারদের ভোটার কার্ড ও একটি সরকার স্বীকৃত পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

ফেডারেল নির্বাচনের মূল ভোট গ্রহণ দিন নির্ধারিত রয়েছে এ মাসেই, ২৮ এপ্রিল। তবে আগাম ভোটারদের অংশগ্রহণ নির্বাচনের ফলাফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে কানাডার যেকোনো নির্বাচনের আগে ন্যাশনাল ডিবেট অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে নেতারা বিতর্কে লিপ্ত হয়ে একে অপরের যুক্তি তুলে ধরে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুদিন দুটি ডিবেট অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি ফ্রান্স ভাষায়, অন্যটি ইংরেজি ভাষায়। 

কানাডার যে কোনো জাতীয় নির্বাচন কিংবা ভবিষ্যৎ নির্বাচন এমনকি মিউনিসিপ্যাল নির্বাচনে প্রধান নেতারা এ রকম বিতর্কে লিপ্ত হয় নির্বাচনের আগে। এবারের নির্বাচনে মাত্র ৩৬ দিনের প্রচারণায় দুটি বিতর্ক রাখা হয়েছে। দুদিনের বিতর্কে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল কানাডার অর্থনীতি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্ক। এই শুল্ক আরোপের ফলে কানাডার অর্থনীতিতে কি ধরনের প্রভাব পড়বে তাঁর বিশ্লেষণ। এই সকল সমস্যা কে ভালোভাবে সমাধান করতে পারবে, পাশাপাশি নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান নিয়েও আলাপ আলোচনা হয়েছে। এই দুই দিনের ভেতর ইমিগ্রেশন নিয়ে কোন আলাপ আলোচনা হয়নি। এবারের নির্বাচনে প্রচারণা শুরুর প্রথম থেকেই ইমিগ্রেন্টদের নিয়ে তেমন কথাবার্তা বলা হয়নি। যদিও ইমিগ্রেশন পলিসিই দেশকে নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিয়েছে কিন্তু গত দু’দিনের আলোচনায় ইমিগ্রেশন পলিসির কোনো আলাপ হয়নি।

কানাডা এই মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। দলের নেতারা তাদের ভোটারদের কাছ থেকে ভোট পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ভোটারদের মধ্য এক ধরনের দোদুল্যমান অবস্থা বিরাজ করছে। শেষের এই সময়টার মধ্যে তারা মনস্থির করে ফেলেন কাকে ভোট দেবেন। এখন পর্যন্ত কোনো দল তাদের ইলেকশন ম্যানিফেস্টো এখনও প্রচার করেনি। 

বিভিন্ন সংগঠনের জনমত জরিপের তথ্য উপাত্ত ও জরিপ সংগ্রহ করে ‘দ্য টরেন্টোস্টার দ্য সিগন্যাল’ একটি গড় জরিপ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে লিবারেল পার্টি ৪২.৪ শতাংশ সমর্থন নিয়ে এগিয়ে রয়েছে। ৩৪৩ টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত তারা ১৭৭টি আসনে এগিয়ে যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের জন্য ১৭২ আসনের প্রয়োজন হয়। অন্যদিকে কনজারভেটিভ পার্টির অবস্থান ৪০.২ শতাংশ যা আসনের দিক দিয়ে ১৩০টি। সিটিভি ও গ্লোবাল মেইলের মিডিয়ার জরিপেও লিবারেল পার্টি এগিয়ে রয়েছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ