দেশে সংবিধান, পুলিশ, স্থানীয় সরকার, নির্বাচন, বিচারব্যবস্থাসহ বিভিন্ন খাতে নানা সংস্কারের আলাপ হয়েছে। কিন্তু গত ছয় মাসে অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে খুব বেশি কিছু করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ও অর্থনীতি নিয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই (অন্তর্বর্তী) সরকার গত (আওয়ামী লীগ) সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাসহ মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা স্থগিত করেছে। কিন্তু এর বিপরীতে কোনো মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা নেয়নি। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না। এমনকি যে নীতিগুলো এখন নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকবে কি না, সেটি নিয়েও তারা সংশয়ে আছেন।

আজ বৃহস্পতিবার ‘৬ষ্ঠ বাংলাদেশ ইকোনমিকস সামিট, ২০২৫’-এর শেষ অধিবেশনে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অর্থনীতি অধ্যয়ন কেন্দ্র বা ইকোনমিকস স্টাডি সেন্টারের আয়োজনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারপারসন মাসুদা ইয়াসমিন এবং অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

অনুষ্ঠানে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্স কমিটির প্রতিবেদনে অর্থনীতির নানা দিকের ব্যবচ্ছেদ করা হয়েছে; মান রেখা (বেঞ্চমার্ক) স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু এই মান রেখা থেকে আগামী ছয় মাস বা এক বছরে আমরা কোথায় উপনীত হব, সে বিষয়ে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এই (অন্তর্বর্তী) সরকার যে বাজেট নিয়ে কাজ করছে, সেটি আগের সরকারের বাজেট। এটাকে বদল করে এমন কিছু দেওয়া হয়নি, যার ভিত্তিতে তাকে (অন্তর্বর্তী সরকারকে) আমি মূল্যায়ন করতে পারব।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে অন্তত দুই বছরের জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, একটি মধ্যমেয়াদি, লক্ষ্য নির্দিষ্ট ও সুস্থির নীতিকাঠামো না থাকলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হয় না। এখন ব্যক্তি খাতের সবাই বলছেন, এই সরকার কত দিন আছে, তা তো জানি না। তাই এখন কীভাবে বিনিয়োগ করব। এমনকি যে নীতিগুলো হচ্ছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকবে কি থাকবে না, সেটিও ঠিকভাবে বলতে পারছেন না তাঁরা।

অনুষ্ঠানে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জুলাই আন্দোলনের পেছনে অন্যতম কারণ বা চালিকা শক্তি ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য। বিগত সরকারের সময়ে অর্থনৈতিক সুবিধা হিসাব না করে অনেক বিনিয়োগ করা হয়েছিল; প্রকল্পের ব্যয় বহু গুণ বাড়ানো হয়েছিল। অথচ উন্নয়ন বাজেটের প্রায় পুরোটাই ছিল ঋণনির্ভর। এসব নিয়ে তখন প্রশ্ন করা যায়নি। তবে সুশাসনের প্রয়োজনে ভবিষ্যতে এসব নিয়ে প্রশ্ন করতে হবে।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, অতীতে দেখা যেত টাকা চুরি করে তা দেশেই রাখা হতো। তবে বিগত সরকারের সময় চুরি করা অর্থ নানা উপায়ে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। হয়তো তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) অনুমান করতে পেরেছিল, যেকোনো একসময় ৫ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটবে। এ জন্যই নানা উপায়ে তারা দেশ থেকে টাকা বের করে নিয়ে গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্তি নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব

অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) বিলুপ্ত করা নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একমত হতে পারছে না। এনবিআর বলছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর আইআরডি বিলুপ্ত হবে। অন্যদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ বলছে, আইআরডি বহাল থাকবে এবং তারাই রাজস্ব নীতি প্রণয়ন করবে। 

রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত সংস্কারের অংশ হিসেবে এনবিআর ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এ লক্ষ্যে গত ১৬ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এনবিআরকে বিলুপ্ত করে দুটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এর পর এনবিআর রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর খসড়া তৈরি করেছে। এই অধ্যাদেশ আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উত্থাপন করা হতে পারে। 

অধ্যাদেশের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে আইআরডি বিলুপ্ত হবে। রাজস্ব নীতি বিভাগে ন্যস্ত হবে আইআরডির জনবল। এ ছাড়া আইআরডির বিদ্যমান কার্যক্রম রাজস্ব নীতি বিভাগে অথবা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অন্য কোনো বিভাগে যথাযথভাবে বিভাজন করবে সরকার। ১১ ধারায় বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ নিজ নিজ বিভাগের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন, আদেশ, ব্যাখ্যা ইত্যাদি জারি করতে পারবে।

এদিকে গত ১৩ মার্চ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংস্কার কমিশনগুলোর বাছাই করা আশু বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগ নির্ধারিত ছকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। এ জন্য দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাবগুলোর তালিকা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রতিটি মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগে পাঠানো হয়েছে। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ সমকালকে বলেন, যে কাজগুলো রাজনৈতিক দলের মতামত ছাড়াই অল্প সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব, সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য তারা উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ পুনর্গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের সচিবের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

আইআরডি সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান সমকালকে বলেন, নতুন অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ চলছে। তবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রস্তাবটি কোন দিক থেকে কীভাবে এসেছে, সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে। দুই ধরনের প্রস্তাবের মধ্যে কোনটা বাস্তবায়ন হতে পারে– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে নীতিনির্ধারকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন। এটি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। 

সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, দুটি প্রস্তাবেই উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন রয়েছে। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের গুরুত্বটা বেশি থাকে। তবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কার্যকরভাবে আলাদা হলে সে ক্ষেত্রে একদিকে এনবিআর রাজস্ব নীতি বাস্তবায়নে অধিকতর স্বাধীনতা ভোগ করবে; অন্যদিকে আইআরডি রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী তার স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে পারবে। ভারতে একদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বিভাগ এবং অন্যদিকে প্রত্যক্ষ কর বোর্ড ও পরোক্ষ কর বোর্ড এ কাজগুলো করে থাকে। স্বাধীনতা ও জবাবদিহি পরস্পরের পরিপূরক।

বিলুপ্ত হবে এনবিআর 

নতুন অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আদেশ ১৯৭২ (১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ (৭৬ নং) রহিত হবে এবং এর অধীন প্রতিষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত হবে। তবে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিদ্যমান জনবল রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগে ন্যস্ত হবে। ন্যস্ত করা জনবল থেকে প্রয়োজনীয় জনবল যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজস্ব নীতি বিভাগে পদায়ন করা যাবে। কোনো মামলা বা আইনগত কার্যধারা কোনো আদালতে চলমান থাকলে তা এমনভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে, যেন ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির মূল আদেশ রহিত হয়নি এবং আইআরডি বিলুপ্ত হয়নি। আরোপিত কোনো শুল্ক, কর, সারচার্জ, ফি বা অন্য কোনো পাওনা এই অধ্যাদেশ জারির অব্যবহিত পূর্বে অনাদায়ী থাকলে বা কোনো বিষয় অনিষ্পন্ন থাকলে আগের অধ্যাদেশের বিধান অনুসারে নিষ্পন্ন করতে হবে। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ 

নতুন অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, রাজস্ব নীতি বিভাগ ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে। সরকার এ দুই বিভাগের জন্য যথাযথ সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি করবে। রাজস্ব নীতি বিভাগের বিভিন্ন পদ আয়কর, মূল্য সংযোজন কর, কাস্টমস, অর্থনীতি, ব্যবসা প্রশাসন, গবেষণা ও পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা ও হিসাব এবং আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের থেকে পূরণযোগ্য হবে। কাস্টমস, এক্সাইজ ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল হবে রাজস্ব নীতি বিভাগের সংযুক্ত দপ্তর। 

রাজস্ব নীতি প্রণয়নে সহায়তা করবে পরামর্শক কমিটি

সরকার রাজস্ব নীতি প্রণয়নে রাজস্ব নীতি বিভাগকে নিয়মিত পরামর্শ প্রদানের জন্য একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করবে। অর্থনীতিবিদ, রাজস্ব বিশেষজ্ঞ, আইন বিশেষজ্ঞ, হিসাব ও নিরীক্ষা বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী সংগঠন ও পেশাজীবী প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের প্রতিনিধিত্বে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিটি গঠন হবে। 

শুধু প্রশাসনিক কাজ করতে পারবে প্রশাসন ক্যাডার

রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক অনুবিভাগে কাজ করতে পারবেন বিসিএস প্রশাসন, কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ ছাড়া রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ কর্তৃক তপশিলে বর্ণিত আইন বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে নিয়োজিত পদে শুধু বিসিএস কর, শুল্ক ও আবগারি ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করবেন। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাজেটে কোনো থোক বরাদ্দ প্রস্তাব করা যাবে না
  • ব্রাজিল, রিয়াল মাদ্রিদ, আনচেলত্তি ও ক্লপ—কে কার
  • দখলদারদের ছাড় দেওয়া হবে না: ডিএনসিসি প্রশাসক 
  • ১ মে থেকে দেশজুড়ে ডিম-মুরগির খামার বন্ধের ঘোষণা
  • গরমে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে উপকারী যেসব ফল 
  • মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে প্রতারণার ফাঁদ
  • অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্তি নিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
  • রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না, নির্বাচন করলে হারব না: সাকিব 
  • রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না, নির্বাচন করলে হারব ন: সাকিব