ভারতের বিতর্কিত সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিত করেছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আইনটির বিরুদ্ধে করা ৭৩টি পিটিশনের শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ ঘোষণা দেন।

আইন স্থগিতের পর সরকারের পক্ষ থেকে আদালতকে নিশ্চিত করা হয়, পরবর্তী শুনানি পর্যন্ত ওয়াক্ফ বোর্ডে নতুন নিয়োগ বা সম্পত্তির অবস্থা পরিবর্তন করা হবে না। পুরোনো ওয়াকফ এবং ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ সম্পত্তিও আগের মতো থাকবে। তবে আদালতের এই সিদ্ধান্তের পরেও দেশজুড়ে বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক বিতর্ক অব্যাহত রয়েছে।

‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে মুসলমানরা দীর্ঘদিন ধর্মীয় বা দানের কাজে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে ওয়াক্ফ হিসেবে দাবি করতে পারে, এমনকি কাগজপত্র না থাকলেও। নতুন আইনে বলা হয়েছে, বিরোধপূর্ণ বা সরকারি জমিতে এটি প্রযোজ্য হবে না। বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। 

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি, দিল্লি হাইকোর্ট ওয়াকফ জমির ওপর। সব ওয়াক্ফ বাই ইউজার ভুল নয়।’

তিনি জানান, ১৩শ, ১৪শ বা ১৫শ শতাব্দীর মসজিদের জন্য কাগজপত্র পাওয়া অসম্ভব। 

তিনি সরকারকে প্রশ্ন করেন, “আপনারা কি বলছেন, আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ এখন বাতিল হবে? আইন দিয়ে আদালতের রায় বাতিল করা যায় না।”

আইনজীবী কপিল সিবাল বলেন, “হাজার বছর আগে ওয়াকফ তৈরি হলে এখন কাগজপত্র চাওয়া সমস্যা।’ 

আইনজীবী অভিষেক সিংভি জানান, ভারতের আট লাখ ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে চার লাখই ওয়াকফ বাই ইউজার।

এদিকে, নতুন আইনে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল ও রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বিধান আছে। এতে মুসলিম সদস্যের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়েছে। কাউন্সিলে ২২ জনের মধ্যে ৮ জন এবং রাজ্য বোর্ডে ১১ জনের মধ্যে চার জন মুসলিম থাকবে। এই বিধান মুসলিম সম্প্রদায় ও বিরোধী দলগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।

প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা কি হিন্দু দেবোত্তর বোর্ডে মুসলিম সদস্য রাখতে দেবেন? খোলাখুলি বলুন।”

বৃহস্পতিবার সরকার জানায়, নতুন আইনের ৯ ও ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কোনো নিয়োগ করা হবে না। এই ধারাগুলো কাউন্সিল ও বোর্ডে সদস্য নিয়োগের বিষয়ে। সরকারের আইনজীবী তুষার মেহতা মামলার জবাব দেয়ার জন্য এক সপ্তাহ সময় চান, যা আদালত মঞ্জুর করেছে। আদালত বলেছে, আবেদনকারীরা সরকারের জবাবের পর পাঁচ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, চলতি মাসে সংসদে ওয়াকফ আইন সংশোধনের পর ভারতজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমবঙ্গে সংহিসতায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
 

শাহেদ/সুচরিতা

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ই ইউজ র সরক র র আইনজ ব সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট–অ্যাপ ব্লক, প্রকাশিত বিজ্ঞাপন সরাতে নির্দেশনা চেয়ে রিট

সব ধরনের অনলাইন জুয়া/বেটিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন ব্লক করতে এবং সামাজিক ও মূলধারার মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তারকাদের পাশাপাশি অন্যদের মাধ্যমে প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন সরানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে। রাজধানীর এক বাসিন্দা আবেদনকারী হয়ে আজ বুধবার রিটটি করেছেন।

রিটে অনলাইন জুয়া/বেটিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন সমর্থন করে তারকাদের পাশাপাশি অন্যদের কোনো সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে এ-সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।

এর আগে ‘অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় তারকারা’ শিরোনামে ৯ এপ্রিল প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে অনলাইন জুয়া/বেটিং গেমস এবং সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমে তারকাদের এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। তানজিম রাফিদ নামে রাজধানীর এক বাসিন্দার পক্ষে আইনজীবী মাহিন এম রহমান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন।

রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, সংবিধানে ১৮ (২) ও ৩১ অনুচ্ছেদ, সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করে জনপ্রিয় তারকদের মাধ্যমে কোনো সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে অনলাইন জুয়া/বেটিং গেম প্রচারের বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনলাইন জুয়া/বেটিং গেমের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিস্তার বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে রিটে।

রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় অনলাইন জুয়া/বেটিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন ব্লক করা, প্রকাশিত বিজ্ঞাপন সরানো, এ–সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা এবং স্থায়ী সমাধানে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও সম্প্রচারসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মাহিন এম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহে রিটের ওপর হাইকোর্টে শুনানি হতে পারে।

আরও পড়ুনসাকিব–বুবলী–পিয়াসহ তারকাদের অনলাইন জুয়ার অবাধ প্রচারণা০৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অন্যতম শোবিজ তারকা ও মডেল পিয়া জান্নাতুল। তিনি আইন পেশায়ও আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীসংখ্যা ১৭ লাখ। ইনস্টাগ্রামে ১১ লাখ। পিয়া নিজের মডেলিং-জীবনের পাশাপাশি নানা সময় সামাজিক ও আইনি পরামর্শমূলক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। তবে তাঁকে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালাতেও দেখা গেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ১২টি অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালিয়েছেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে। শুধু পিয়া নন, চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী, অভিনয়শিল্পী সামিরা খান মাহিও অনলাইন জুয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন। দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও আছেন এই তালিকায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণে গতি নেই
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে ভারতে
  • ওয়াক্ফ আইনের বাস্তবায়ন স্থগিতেও রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে
  • আইনজীবী তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার প্রবেশপত্র সংগ্রহ শুরু
  • মালয়েশিয়ায় যাত্রার স্বপ্ন ভঙ্গ, মিয়ানমারের জেলে
  • ময়মনসিংহে রাজস্ব তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
  • গাইবান্ধার সাবেক এমপি সারোয়ার কবির কারাগারে 
  • বিচারক বললেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া মক্কেলের সঙ্গে আইনজীবীর কথা নয়
  • অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট–অ্যাপ ব্লক, প্রকাশিত বিজ্ঞাপন সরাতে নির্দেশনা চেয়ে রিট