ভাস্কর্য শিল্পীর বাড়িতে আগুন: ৮ জন গ্রেপ্তার
Published: 17th, April 2025 GMT
বাংলা বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় মোটিফ বানানো চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের মানিকগঞ্জের বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে সদর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল ৪টার দিকে তাদের সবাইকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবারও (১৭ এপ্রিল) ওই বাড়ি পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। গত মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) দিবাগত রাত ৩টার দিকে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোষের বাজার এলাকায় বাড়ির একটি ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। পরে মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে জানালে তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই ঘণ্টার চেষ্টা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তাররা হলেন, আল আমিন তমাল (২২), সদর উপজেলা ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাইনউদ্দিন আহাম্মদ পিয়াস (২২, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন (৫৪), আওয়ামী লীগের ৩নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মীর মারুফ (২১), ছাত্রলীগ নেতা আমিনুর রহমান (২৪), খান মোহাম্মদ রাফি ওরফে সিজন (১৮), মোশাররফ হোসেন (৪৮) ও সঞ্জীব ঘোষ (৪০)।
আরো পড়ুন:
চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি
পঞ্চগড়ে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের বাড়ির একটি ঘরে আগুন
আগুনে ঘরের ভেতরে থাকা সব আসবাবপত্র, ভাস্কর্য, একটি মোটরসাইকেল পুড়ে হয়ে যায়। এ ঘটনার তদন্তে ছয় সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। এ কমিটি তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।
আরো পড়ুন: আনন্দ শোভাযাত্রায় মোটিফ বানানো চিত্রশিল্পীর বাড়িতে আগুন
এ বছরের ঢাকায় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মুখের আদলে ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনার মোটিফ’ বানানো হয়। এ কাজের সঙ্গে মানবেন্দ্র ঘোষ যুক্ত ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এ কারণে তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/চন্দন/বকুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চের সামনে মাছ–সবজিবাজার
যশোরের কেশবপুরের একমাত্র সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চ। এই মঞ্চের সামনে বসানো হয়েছে সবজি, মাছ ও মাংসের বাজার। এই বাজারের নির্দিষ্ট স্থান পুরাতন গরুহাটায় পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় বাজারটি ওই মঞ্চে স্থানান্তরিত করেছে পৌরসভা ও প্রশাসন। এ নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মীরা ক্ষুব্ধ।
কেশবপুর শহরের পুরাতন গরুহাটায় মাছ-মাংস ও সবজির বাজার বসে। সেখানে পৌরসভা পৌর সুপার মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সে কারণে বাজারটি স্থানান্তর করে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সাংস্কৃতিক কর্মীদের দাবি, গত রোববার এই মঞ্চের সামনে বাজার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সাংস্কৃতিক কর্মীরা ওই মঞ্চে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান থাকার কথা জানালে এক দিন পর মঙ্গলবার থেকে সেখানে বাজার বসছে।
সরেজমিনে বুধবার বিকেলে দেখা যায়, রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চের পুরো এলাকায় বাজার বসেছে। মঞ্চে ঢোকার স্থানে বসেছে গরুর মাংসের দোকান, পাশেই একটি চায়ের দোকান। মঞ্চের অপর প্রান্তে উত্তর পাশে বসেছে মুরগির দোকান। মঞ্চের ওপরে বাজারের মালামাল রাখা হয়েছে। পুরো চত্বরে বসেছে মাছ ও সবজি বাজার। এখন মঞ্চে ঢোকার কোনো পথ নেই। কোনোভাবে বোঝার উপায় নেই এটি রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চ।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১০ সালে শহরের হরিহর নদ ও খোঁচা খালের পাড়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য রক্তকরবী মঞ্চ তৈরি করা হয়। এর পর থেকে এই মঞ্চে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান, পিঠা উৎসব, লোকসংস্কৃতি উৎসব, নাটকসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হয়ে আসছিল। এ ছাড়া নেদারল্যান্ডস সরকারের অর্থায়নে এখানে একটি পৌর পার্ক নির্মাণের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। রক্তকরবী উন্মুক্ত মঞ্চটি ওই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
মঞ্চ কমিটির সদস্য আজিজুর রহমান বলেন, মঞ্চটি কেশবপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের মানুষের বহু বছরের আন্দোলনের ফসল। মঞ্চটি নির্মাণের পর থেকে এ অঞ্চলে একটি নান্দনিক পরিবেশ তৈরি হয়। মাছ, মাংস ও সবজির বাজার বসানোর ফলে সেই নান্দনিকতা নষ্ট হচ্ছে। বাজার বসলে সেখানে মাছের পানি, মুরগির অবশিষ্ট অংশসহ নানা ময়লা–আবর্জনার কারণে পরিবেশ বদলে যাবে। জায়গাটির নান্দনিক পরিবেশ আর থাকবে না। এটি বড়ই কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কেশবপুর নাগরিক সমাজের সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, মঞ্চ ঘিরেই কেশবপুরের সব সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত। এখানে সকালে ও বিকেলে মানুষ হাঁটাচলা করতেন। বাজার বসানোয় সেটি ব্যাহত হচ্ছে।
সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্থানটিতে বাজার বসানোয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষের মনে রক্তক্ষরণ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন খেলাঘর আসরের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘বিকল্প জায়গা থাকা সত্ত্বেও এখানে বাজার বসানোয় আমরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা ব্যথিত।’
এ ব্যাপারে কেশবপুরের ইউএনও ও পৌর প্রশাসক রেকসোনা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, পৌর পার্ক নির্মাণের সময়টুকুতেই ওখানে বাজার বসানো হয়েছে। পৌর মার্কেট নির্মাণ হলেই বাজারটি সরিয়ে আবার পূর্বের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হবে। এটা সাময়িক অসুবিধা। এর মধ্যে যদি কোনো অনুষ্ঠান হয়, তাহলে সেদিন বাজার বন্ধ থাকবে।