দুচোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে দৃষ্টিহীন মহির
Published: 17th, April 2025 GMT
বয়স তখন সবে তিন মাস। পৃথিবীর আলো-হাওয়াই ঠিকমতো দেখা হয়নি। তখনই টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে দৃষ্টিশক্তি হারায় মহির। তবে এতে দমে যায়নি সে। মনের জোরে দৃষ্টিহীনতা জয় করে এগিয়ে যাচ্ছে। এবার ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে অংশ নিচ্ছে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায়।
মহির উদ্দিন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পূর্ব শুখানপুকুরী গ্রামের মিলন হোসেনের ছেলে। প্রতিকূলতার মধ্যেও তার ইচ্ছা, শিক্ষাজীবন শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হতে চায় সে। হাসি ফোটাতে চায় মা-বাবার মুখে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দৃষ্টিশক্তি হারালেও ছেলে মহিরকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা ছিল কৃষক মিলনের। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহিরকে মুখে মুখে পড়াতে থাকেন মিলন। সেসব পড়া মহিরও দ্রুত রপ্ত করে ফেলত। পরে ছেলেকে বাড়ির পাশের পূর্ব শুখানপুকুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন মিলন। সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে মহির।
২০১৭ সালে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেওয়া হয় মহিরকে। এরপর একের পর এক শ্রেণি পেরিয়ে যেতে থাকে সে। এবার সেখান থেকেই শ্রুতলেখকের মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মহির। মহিরের কেন্দ্র পড়েছে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে। ১০ এপ্রিল এ পরীক্ষা শুরু হয়।
মহিরের ছোট ভাই মাসুদ রানা শ্রুতলেখকের দায়িত্ব পালন করছে। মাসুদ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার পাঁচপীর উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আজ বৃহস্পতিবার ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ের পরীক্ষা শেষে মাসুদ বলে, ‘আমার হাত দিয়ে ভাই যদি পরীক্ষায় ভালো করতে পারে, তবে শান্তি পাব।’
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মহিরের কাছে ইচ্ছার বিষয়ে জানতে চাইলে সে বলে, ‘লেখাপড়া করে চাকরি পেলে মা-বাবাকে নিয়ে সুখে থাকতে পারব। তাঁদের ঋণ কিছুটা হলেও শোধ করার চেষ্টা করব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ঠ ক রগ পর ক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় হত্যা, বাবার লাশ রেখে মেয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে
রাজশাহী মহানগরীর তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার ১৬ বছরের কিশোরী রাকিয়া আলফি। নগরীর অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার্থী সে। এলাকার কিছু বখাটে মাঝেমধ্যেই তাকে বিরক্ত করছিল। গত বুধবার উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বখাটেরা তার বাবা আকরাম আলীকে (৫২) পিটিয়ে হত্যা করে। আজ বৃহস্পতিবার ছিল আলফির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা। বাবার নিথর দেহ বাড়িতে রেখেই পরীক্ষায় বসেছে আলফি।
হত্যার ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী আলফির বড় ভাই ইমাম হাসান অনন্ত বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন। মামলায় আসামিরা হলেন– তালাইমারী শহীদ মিনার এলাকার কালু মিয়ার ছেলে নান্টু, বিশাল, খোকন মিয়া, তাসিন হোসেন, অমি, নাহিদ ও শিশির। প্রধান অভিযুক্ত নান্টু আকরামের স্ত্রীর মামাতো ভাই।
প্রত্যক্ষদর্শী, ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলা সূত্রে জানা যায়, আলফিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল নান্টু ও তার সহযোগীরা। গত বুধবার বিকেলে আলফি কোচিং করে বাসায় ফেরার পথে নান্টু আবার তাকে উত্ত্যক্ত করে। এ ব্যাপারে বাসায় এসে ঘটনা বাবাকে জানায় আলফি। পরে আকরাম নান্টুর বাসায় বিচার দেয়। এতে ক্ষুব্ধ নান্টু ও তার সহযোগীরা রাতেই লোহার রড, লাঠি, ইট নিয়ে আলফির বড় ভাই ইমাম হাসানের ওপর আক্রমণ করে। এ সময় ছেলেকে বাঁচাতে আকরাম এগিয়ে যান। এক পর্যায়ে ইট দিয়ে আকরামের মাথার পেছনে আঘাত করা হয়। পরে তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বৃহস্পতিবার বিকেলে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় টিকাপাড়া গোরস্তানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
আলফি বলে, ‘বখাটেরা অনেকদিন ধরেই আমাকে উত্ত্যক্ত করছিল। নান্টুর বাসায় আমার পরিবারের পক্ষ থেকে বিচার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের পরিবার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যারা আমার বাবাকে হত্যা করেছে, তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।’
বাসচালক আকরামের স্ত্রী মুক্তি বেগম বলেন, ‘মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা চলছে। সারারাত বাবার জন্য কান্না করেছে। বাবার লাশ রেখে মেয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে চায়নি। স্বজনরা অনেক বুঝিয়ে তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পাঠায়। আমরা স্বামীকে যারা হত্যা করেছে, তাদের বিচার চাই।’
অগ্রণী বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলফি ভালো ছাত্রী। তাদের পরীক্ষা শিরোইল উচ্চ বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুনেছি উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় তার বাবাকে মারধর করে মেরে ফেলা হয়েছে। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক হোসেন বলেন, হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।
এদিকে আকরাম আলীর খুনিদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তাঁর লাশ সামনে রেখে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। মানববন্ধন থেকে এলাকাবাসী জানান, দোষীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে।