নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা কমপক্ষে ৯০ দিন (তিন মাস) বাড়ানোর জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) অনুরোধ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি সচিবালয়ে সচিবের কার্যালয়ে গিয়ে দলের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে এ আবেদন জানিয়েছেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন এবং সদস্য মনিরুজ্জামান। 

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে ‘নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য সময়সীমা বৃদ্ধির আবেদন’ শিরোনামে এ আবেদন করেছে এনসিপি।

এনসিপির আবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনসংক্রান্ত বর্তমান প্রচলিত আইনের মধ্যে থেকেই বিগত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ও তার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন (ইসি) ভোটবিহীন সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা, জাল ভোট, রাতের ভোটসহ নানা অনিয়মের মাধ্যমে গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করেছে। একইভাবে শেখ হাসিনা ও তার দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ওই কমিশন সারা দেশে দলীয় প্রতীকে বিতর্কিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও আয়োজন করেছিল। বিদ্যমান আইনি কাঠামোর মধ্যেই ইসির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে নির্বাচনব্যবস্থা ধ্বংস ও ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল। এমন পরিস্থিতিতে দেশের ছাত্র-জনতা বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন গড়ে তোলে এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

এনসিপি বলেছে, ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গণমানুষের প্রত্যাশার আলোকে এনসিপি প্রতিষ্ঠিত হয়। গণ-অভ্যুত্থানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন সংস্কারমূলক কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশন একটি প্রতিবেদনসহ তাদের সুপারিশ কর্তৃপক্ষের কাছে দিলেও এখন পর্যন্ত মৌলিক সংস্কার কার্যক্রমের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। নির্বাচন কমিশনের মৌলিক সংস্কার এবং বিদ্যমান আইন যুগোপযোগী না করেই বর্তমান ইসি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য গত ১০ মার্চ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সংস্কারের আগেই ত্বরিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সমালোচনার জন্ম দেয়।

২০০৮ সালের রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ও প্রাসঙ্গিক আইনের অধীনে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্তগুলোকে ‘সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দিয়ে এনসিপির আবেদনে বলা হয়েছে, আগের স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তৈরি এই বিধিগুলো রাজনৈতিক বহুত্ববাদকে সংকুচিত এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য প্রণীত। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন নিজেই জেলা পর্যায়ে ১০ শতাংশ ও উপজেলা পর্যায়ে ৫ শতাংশ কার্যালয় স্থাপনের শর্ত সহজীকরণের পাশাপাশি প্রতি পাঁচ বছরে নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন নবায়নের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাব দিয়েছেন। তা ছাড়া ইসির বর্তমান কাঠামো ও ব্যক্তিদের নিয়োগ ২০২২ সালের বিতর্কিত আইন অনুসারে গঠিত সার্চ কমিটির মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। এই নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতার অভাব, রাজনৈতিক প্রভাব ও নিরপেক্ষতা রক্ষায় ব্যর্থতার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে, যা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করছে।

চিঠির শেষাংশে এনসিপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি প্রণয়ন বা সংশোধন করে নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়া দরকার। এ ছাড়া মৌলিক সংস্কারের আলোকে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, বিদ্যমান নিবন্ধিত দলের নিবন্ধন হালনাগাদ করাও আবশ্যক। এমন অবস্থায় দ্রুত নির্বাচন কমিশনসংক্রান্ত মৌলিক সংস্কার এবং নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদনের সময়সীমা অন্যূন ৯০ দিনের বাড়ানোর অনুরোধ করা হয় চিঠিতে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনস প র জন ত ক দল ন র ব চনব যবস থ ন র জন য এনস প র র র জন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সময়সীমা বাড়ানো ও শর্ত শিথিল বাস্তবসম্মত

গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি বহুপক্ষীয় মত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। এর অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনপ্রক্রিয়া। বর্তমানে প্রচলিত নির্বাচনসংক্রান্ত আইন ও ২০০৮ সালের নিবন্ধন বিধিমালার অন্তর্নিহিত কঠোরতা সদ্য গঠিত কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করাকে প্রায় অসম্ভব করে তুলেছে। রক্তস্নাত গণ অভ্যুত্থান-পরবর্তী রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে ‘শত ফুল ফুটতে দাও’ নীতির হাত ধরে যখন নতুন নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশের আকাঙ্ক্ষায় উজ্জীবিত হচ্ছে, সে মুহূর্তে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে যে সময়সীমা নির্ধারণ করতে দেখা গেছে, তা বাস্তবতার নিরিখে অসংগত, অপর্যাপ্ত এবং নবীন রাজনৈতিক শক্তিগুলোর জন্য কার্যত একপ্রকার নিষেধাজ্ঞারই নামান্তর।

এমন প্রেক্ষাপটে সদ্যোজাত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি) এবং নতুনধারা বাংলাদেশ (এনডিবি) নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধিসংক্রান্ত যে দাবি তুলেছে, তা বিবেচনা করতে হবে রাজনৈতিক ন্যায়বোধ ও গণতান্ত্রিক ভারসাম্যের নিরিখে।

নির্বাচন কমিশন গত ১০ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করে, যার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। অর্থাৎ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরবর্তী ৪০ দিনকে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের মতো একটি জটিল ও বিস্তৃত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অথচ প্রায় এক দশক ধরে এ নিবন্ধনপদ্ধতি অকার্যকর ছিল। উপরন্তু এ সময়ের মধ্যেই দেশের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর ও টানা সরকারি ছুটি পড়ে যাওয়ায় প্রশাসনিক গতিশীলতা ও কার্যসম্পাদন চরমভাবে ব্যাহত হয়েছে।

এ বাস্তবতা বিবেচনায় রাজনৈতিক দলগুলো যে নিবন্ধনের সময়সীমা ন্যূনপক্ষে তিন মাস বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে, সেটি নিছক একটি সুবিধার আরজি নয়; বরং তা বর্তমান বাস্তবতার গভীর উপলব্ধি থেকে উৎসারিত এক গণতান্ত্রিক দাবিমাত্র। নির্বাচন কমিশনের উচিত হবে এ আবেদনকে আন্তরিকতা ও যুক্তিনিষ্ঠতার সঙ্গে গ্রহণ করা এবং দ্রুত সময়সীমা বৃদ্ধির ঘোষণা প্রদান করা।

উল্লেখ্য, নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে নিবন্ধনের কড়াকড়ি শর্তাবলি শিথিল করার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের মতে, নিবন্ধনের পূর্বশর্ত হিসেবে দেশের ১০০টি থানা বা ৪০টি জেলার স্বীকৃত কার্যালয়, নির্ধারিত হারে নারী প্রতিনিধিত্ব, পাঁচ বছরে একবার করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ ইত্যাদি শর্ত আজকের বাস্তবতায় অনেকটাই ভারসাম্যহীন ও নবীন দলবিরোধী। এ অবস্থায় একদিকে যখন শর্ত পূরণের কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব প্রক্রিয়াধীন, তখন অপর দিকে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান এবং এর জন্য কড়াকড়ি সময়সীমা নির্ধারণ একপ্রকার নীতিগত অসংগতি হিসেবেই প্রতিভাত হয়।

রাজনৈতিক পরিসরকে সুসংবদ্ধ ও বহুমাত্রিক করার জন্য কেবল বৃহৎ ও পুরোনো দলগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে নবাগত দলগুলোর সামনে দেয়াল তুলে রাখলে তা গণতান্ত্রিক বিকাশে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে। বরং একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতা অনুযায়ী নির্বাচন কমিশনের উচিত, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের প্রক্রিয়াকে সময় ও শর্ত—উভয় ক্ষেত্রেই আরও সহনীয়, বাস্তবসম্মত ও অন্তর্ভুক্তিমুখী করা।

আমরা আশা করি, নির্বাচন কমিশন অবিলম্বে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা বৃদ্ধি করবে এবং সেই সঙ্গে শর্ত শিথিলসংক্রান্ত সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো গ্রহণের প্রক্রিয়া দ্রুততর করবে। গণতন্ত্রের শক্তি বহুমতের স্বীকৃতি ও প্রতিযোগিতামূলক রাজনীতির বিস্তারে নিহিত—এ কথা ভুলে গেলে চলবে না। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ তৈরি করা, রাজনৈতিক দলের হাত-পা বেঁধে দিয়ে তরঙ্গসংকুল নদীতে সাঁতার কাটতে বাধ্য করা নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সময়সীমা বাড়ানো ও শর্ত শিথিল বাস্তবসম্মত
  • বগুড়া পলিটেকনিকের ১৩ ক্রাফট ইন্সট্রাকটরকে কোয়ার্টার ছাড়তে আল্টিমেটাম
  • নির্বাচন কমিশনে এনসিপি, নতুন দল নিবন্ধনের সময়সীমা তিন মাস বাড়ানোর আবেদন
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্তঃজেলা বদলি শুরু বৃহস্পতিবার
  • প্রাথমিক শিক্ষকদের আন্তঃজেলা বদলি বৃহস্পতিবার শুরু
  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় অসন্তুষ্ট বিএনপি
  • পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৭৭ পদের আবেদন শেষ কাল