সত্য ঘটনার ‘কেশারি টু’, কী আছে অক্ষয়ের এই ছবিতে
Published: 17th, April 2025 GMT
১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের অমৃতসর শহরের জালিয়ানওয়ালাবাগে জড়ো হন ১৫-২০ হাজার ভারতীয়। তাদের অধিকাংশই ছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের। তারা সেখানে একত্র হয়েছিলেন পাঞ্জাবি নববর্ষ উদযাপন করতে। নবান্ন উৎসব পালনের পাশাপাশি তাদের উদ্দেশ্য ছিল দমন-নিপীড়নমূলক রাওলাত আইনের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানো।
এই আইনের ফলে খর্ব হয়েছিল গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। শুরু হয়েছিল বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার এবং অনির্দিষ্ট সাজার অন্যায্য সুযোগ। ফলে সাধারণ মানুষ এক হয়ে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বৈশাখী উৎসব পালন করতে আসা জনতা তখনও জানে না কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। হঠাৎ সেই বাগানে ঢুকে পড়েন ৫০ জন ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাসদস্য।
কর্নেল রেজিনাল্ড ডায়ারের নির্দেশে সাধারণ নাগরিকদের বাগান থেকে বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তাঁর আদেশেই এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে সৈনিকেরা। টানা ১০ মিনিটে প্রায় ১৬৫০ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে সৈনিকেরা। কী হচ্ছে তা বুঝে ওঠার আগেই প্রাণ হারায় উপস্থিত জনতার একাংশ। পালানোর পথ না পেয়ে দেয়াল বেয়ে ওপরে উঠে অন্য পাশে যাওয়ার চেষ্টা করে অনেকে। কেউ সফল হয়ে কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচে যান, কেউ ব্যর্থ হয়ে প্রাণটা হারান। ব্রিটিশদের হিসাবে এ হত্যাকাণ্ডে নিহত হয় প্রায় ৪০০ জন। কিন্তু ভারতীয়দের হিসাবে তা ১ হাজারের কাছাকাছি। ১০৬ বছর আগের সেই হত্যাকাণ্ড নিয়ে নির্মিত হয়েছে বলিউডের নতুন সিনেমা। নাম কেশারী চ্যাপ্টার টু: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব জালিয়ানওয়ালাবাগ’।
পুষ্পা পালত ও রঘু পালতের লেখা বই ‘দ্য কেস দ্যট শক দ্য এম্পায়ার’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন কারণ সিং ত্যাগী। এই সিনেমায় আইনজীবী চেত্তুর সি শংকরণ নায়ারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন অক্ষয় কুমার। শংকরণ ছিলেন প্রকৃত অর্থে একজন দেশপ্রেমিক আইনজীবী এবং ব্রিটিশ শাসনের তীব্র সমালোচক। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর ব্রিটিশ রাজত্বকে নাড়িয়ে দিয়েছিলেন আইনজীবী সি শংকরণ নায়ার। সিনেমাটি বেশ উচ্ছ্বসিত অক্ষয় কুমার। তিনি এখন ব্যস্ত সিনেমার প্রচার ও প্রচারণার কাজে।
সিনেমাটি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অক্ষয় বলেন, ‘আমার দাদু নিজে সেই বিভীষিকা দেখেছিলেন। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা তিনি আমার বাবাকে বলেছিলেন, আর বাবা আমাকে। ছোট থেকেই জানি– এই ইতিহাস কতটা বেদনার, কতটা সত্য। আমি ইতিহাসবিদ নই। আমি একজন অভিনেতা মাত্র। আর এ সিনেমাটি একটি বই অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে। বইটি পড়ে যা বুঝেছি এবং বাবার কাছ থেকে যা কিছু শুনেছি, ‘কেশারী চ্যাপ্টার ২’ এসব কিছুরই সংমিশ্রণ। আমি চাই সিনেমাটি সব ধরনের দর্শক দেখুক। তাহলে মানুষ অন্তত বুঝতে পারবে আদতে কী ঘটেছিল সেই সময়।’
কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে সিনেমার ট্রেলার। যার ক্যাপশনে লেখা আছে, একজন সাহসী মানুষ তাঁর সাহস দিয়ে পুরো সাম্রাজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের ইতিহাসে সবচেয়ে অন্ধকার সময়।’
এই সিনেমায় আর মাধবনও ব্রিটিশদের আইনজীবীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। আর অনন্যা পাণ্ডেকে দেখা যাবে আইনি ছাত্রীর ভূমিকায়। ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে, মাধবন আর অক্ষয়ের আইনি লড়াই। যেখানে অক্ষয় কুমারকে বলতে শোনা যাচ্ছে, জালিয়ানওয়ালাবাগের সত্য সারাবিশ্বের সামনে তুলে ধরবেন তিনি।
২০১৯ সালে মুক্তি পায় অক্ষয় অভিনীত ‘কেশারী’। এ সিনেমায় অক্ষয় দেখিয়েছিলেন, ১৮৯৭ সালের যুদ্ধে শিখ সৈন্যদের বীরত্বের কথা। আর এবার তিনি নিয়ে এসেছেন ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের কথা। সিনেমাটি আগামীকাল ভারতজুড়ে মুক্তি পাবে। এখন দেখার বিষয় আগের কেশারী সিনেমার মতো এই সিনেমাটি দর্শকরা কেমন পছন্দ করেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট–অ্যাপ ব্লক, প্রকাশিত বিজ্ঞাপন সরাতে নির্দেশনা চেয়ে রিট
সব ধরনের অনলাইন জুয়া/বেটিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন ব্লক করতে এবং সামাজিক ও মূলধারার মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে তারকাদের পাশাপাশি অন্যদের মাধ্যমে প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন সরানোর নির্দেশনা চেয়ে রিট হয়েছে। রাজধানীর এক বাসিন্দা আবেদনকারী হয়ে আজ বুধবার রিটটি করেছেন।
রিটে অনলাইন জুয়া/বেটিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন সমর্থন করে তারকাদের পাশাপাশি অন্যদের কোনো সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে এ-সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে। আর এ বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
এর আগে ‘অনলাইন জুয়ার প্রচারণায় তারকারা’ শিরোনামে ৯ এপ্রিল প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। প্রতিবেদনটি যুক্ত করে অনলাইন জুয়া/বেটিং গেমস এবং সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমে তারকাদের এসব বিজ্ঞাপন প্রচারের বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করা হয়। তানজিম রাফিদ নামে রাজধানীর এক বাসিন্দার পক্ষে আইনজীবী মাহিন এম রহমান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করেন।
রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, সংবিধানে ১৮ (২) ও ৩১ অনুচ্ছেদ, সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করে জনপ্রিয় তারকদের মাধ্যমে কোনো সামাজিক ও মূলধারার মাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে অনলাইন জুয়া/বেটিং গেম প্রচারের বিস্তার রোধে নিষ্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না—এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। এ ধরনের অনলাইন জুয়া/বেটিং গেমের বিজ্ঞাপন প্রচারের বিস্তার বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে রিটে।
রুল হলে তা বিচারাধীন অবস্থায় অনলাইন জুয়া/বেটিং ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন ব্লক করা, প্রকাশিত বিজ্ঞাপন সরানো, এ–সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা এবং স্থায়ী সমাধানে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিটে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও সম্প্রচারসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান, পুলিশের মহাপরিদর্শক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে রিটে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মাহিন এম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আগামী সপ্তাহে রিটের ওপর হাইকোর্টে শুনানি হতে পারে।
আরও পড়ুনসাকিব–বুবলী–পিয়াসহ তারকাদের অনলাইন জুয়ার অবাধ প্রচারণা০৮ এপ্রিল ২০২৫প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অন্যতম শোবিজ তারকা ও মডেল পিয়া জান্নাতুল। তিনি আইন পেশায়ও আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বেশ জনপ্রিয়। ফেসবুকে তাঁর অনুসারীসংখ্যা ১৭ লাখ। ইনস্টাগ্রামে ১১ লাখ। পিয়া নিজের মডেলিং-জীবনের পাশাপাশি নানা সময় সামাজিক ও আইনি পরামর্শমূলক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেন। তবে তাঁকে অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালাতেও দেখা গেছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি ১২টি অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপনের প্রচারণা চালিয়েছেন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে। শুধু পিয়া নন, চিত্রনায়িকা শবনম বুবলী, অভিনয়শিল্পী সামিরা খান মাহিও অনলাইন জুয়ার প্রচারণা চালিয়েছেন। দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও আছেন এই তালিকায়।