গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত ত্রেখাইল্লা খালের উৎসমুখ ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। ফলে, একসময়ের প্রবহমান খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, বর্ষায় জলাবদ্ধতা বাড়বে। এতে কৃষিকাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ভূমি অফিস সূত্র জানিয়েছে, খালের উৎসমুখ ত্রেখাইল্লা এলাকায় অবস্থিত এবং এটি সরকারি খাল হিসেবে নথিভুক্ত। তবে, সিলমুন পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস নামের একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বছর কয়েক আগে খালের গতিপথ পরিবর্তন করে ও মাটি-বালু ফেলে জায়গাটি দখলে নেয়।

নয়াপাড়া গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন বলেছেন, “একসময় এই খাল দিয়ে মাঠে পানি যেত, সেচ কাজ হতো। এখন পুরোটা বন্ধ। প্রতিবাদ করলেই হয়রানি করা হয়।”

স্থানীয় বাসিন্দা আরফান আলী বলেন, “খালটি আমাদের চোখের সামনেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।”

শ্রীপুর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব বলেন, “খাল দখল ও গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি আমরা সরেজমিনে নিশ্চিত হয়েছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, “আইন অনুযায়ী কেউ সরকারি খাল দখল করতে পারে না। অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

তবে, অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, তারা দখলের সঙ্গে জড়িত নন।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ব্যারিস্টার সজীব আহমেদ বলেন, “খাল দখল ও গতিপথ পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্থানীয়দের দাবি, খালটি দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে না আনা হলে সামনের বর্ষায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে।

ঢাকা/রফিক সরকার/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

গাজীপুরের ছয় নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে

অবহেলা, লোভ আর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে শৈথিল্যের কারণে গাজীপুরের নদ-নদীগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। ক্রমশ মরে যাচ্ছে নদীগুলো। এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আগামী প্রজন্ম শুধু খিরু-লবলঙ্গ প্রভৃতি নদীর নাম জানবে, দেখতে পারবে না।

একসময় গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত লবলঙ্গ, খিরু, মাটিকাটা, সুতিয়া, পারুলী ও শীতলক্ষ্যা নদী ছিল এই অঞ্চলের কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জনজীবনে প্রাণসঞ্চারক জলধারা। আজ সেগুলো দখল ও দূষণের করালগ্রাসে শুধুই স্মৃতিচিহ্ন।

লবলঙ্গ: নদী নয়, এখন শুধুই এক বিষাক্ত নালা
লবলঙ্গ নদীতে একসময় বড় বড় জাহাজ চলত। এখন সেখানে নৌকাও চলে না। দখল ও দূষণের চাপে নদীটি এখন সরু নালার রূপ নিয়েছে। বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। পানির রং কালো, দুর্গন্ধ ছড়ায় আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকায়। 

স্থানীয় বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেছেন, “লবলঙ্গ তো এখন গল্প। বাপ-দাদারা বলতেন, এখানে জাহাজ চলত। এখন পানিতে গরু নামালেও গায়ে ফোসকা পড়ে।”

খিরু: বাণিজ্যের সম্ভাবনা শেষ বিষাক্ত জলে
খিরু নদী একসময় ছিল বাণিজ্যের আশাব্যঞ্জক মাধ্যম। এখন তা মারাত্মক দূষণের শিকার। প্রতিবছর বর্ষায় মাসখানেক নৌকা চলে, বাকি সময় মৃতপ্রায় নদীটি কেবল বিষাক্ত পানিতে ভরপুর। ভালুকা উপজেলার কারখানাগুলো খিরুতে দূষিত পানি ফেলে। এ পানি কৃষিজমিতে সেচ দেওয়া যায় না, ফসল পচে যায়।

মাটিকাটা, সুতিয়া ও পারুলী: পানির বদলে বিষ
মাটিকাটা নদীতে খিরুর দূষিত পানি এসে পড়ায় এটি রীতিমতো বিষবাহক নদীতে পরিণত হয়েছে। কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সুতিয়া নদী একইভাবে দূষিত। ভালুকার বেশকিছু কারখানা এ নদীতে কেমিক্যালযুক্ত পানি ফেলছে। পারুলী নদীর অবস্থাও একই রকম ভয়াবহ।

শীতলক্ষ্যা: শহরের দূষণ গ্রামে পৌঁছেছে
শীতলক্ষ্যা নদীও শ্রীপুর অংশে দখল-দূষণে নাকাল। শহর ও শিল্পাঞ্চলের বর্জ্য এখন গ্রামীণ জীবনেও বিষ ঢেলে দিচ্ছে।

পরিবেশবিদ ও প্রশাসনের উদ্যোগ
‘নদী পরিব্রাজক দল’–এর শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেছেন, “আমাদের দাবি, নদীগুলো দূষণমুক্ত করা হোক। আমরা চাই, নদী আবার স্বচ্ছ জলে ভরে উঠুক।”

পরিবেশ অধিদপ্তরের গাজীপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আরেফিন বাদল জানিয়েছেন, লবলঙ্গের দূষণ রোধে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। দূষণের জন্য দায়ী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ জানিয়েছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সচিব নদী পরিদর্শন করেছেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

ঢাকা/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজীপুরের ছয় নদীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে
  • বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে