অবকাঠামো-শিক্ষক যথেষ্ট, অভাব শিক্ষার্থীর
Published: 17th, April 2025 GMT
বিদ্যালয়ের দোতলার একটি শ্রেণিকক্ষে গিয়ে দেখা গেল, একজন শিক্ষক মাত্র দুই শিশুকে পড়াচ্ছেন। তারা তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। পাশেই আরেকটি শ্রেণিকক্ষে পাঁচ শিশুকে পড়াচ্ছেন আরেকজন শিক্ষক। এখানে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলছে।
৭ এপ্রিল দুপুর পৌনে ১২টার দিকে রাজধানীর নীলক্ষেত-কাঁটাবন এলাকায় অবস্থিত শহীদ বুদ্ধিজীবী ড.
প্রধান শিক্ষক রীনা পারভীন বললেন, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ছুটি শেষে বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিন হওয়ায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম।
প্রকৃত বিষয় হলো, বিদ্যালয়টিতে মোট শিক্ষার্থীই কম। প্রাক্-প্রাথমিক (শিশুশ্রেণি নামে পরিচিত) থেকে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কাগজপত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে মোট শিক্ষার্থী আছে ১২২ জন। এর মধ্যে ৩৮ জন প্রাক্-প্রাথমিকের। অন্যদের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে ২৭, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৫, তৃতীয় শ্রেণিতে ১২, চতুর্থ শ্রেণিতে ১৮ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ১২ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
আরও পড়ুনশিক্ষকদের সন্তানেরাই পড়ে অন্য বিদ্যালয়ে২২ জানুয়ারি ২০২২কাগজপত্রে এমন কমসংখ্যক শিক্ষার্থীর পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষে প্রতিদিনের উপস্থিতিও যে কম, সেটিও সরেজমিন আন্দাজ করা গেল। অথচ বিদ্যালয়টির অবকাঠামো ভালো। পরিবেশও ঢাকার অন্যান্য সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তুলনায় যথেষ্ট সুন্দর।
৪১ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে অভাব নেই শিক্ষকেরও। ছয়টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ছয়জনই। রাজধানীর ৩৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দৃষ্টিনন্দন করার যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে এ বিদ্যালয়ও রয়েছে। ফলে এখানে নতুন করে অবকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগও আছে।
স্থানান্তর করা এলাকায় নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটি ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। কারণ, সরকারি এই বিদ্যালয়টির সড়কের উল্টো দিকে সামান্য দূরেই নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৮২ জন ও শিক্ষক ১০ জন। শুধু তা-ই নয়, এটির আঙিনায় ‘নীলক্ষেত হাইস্কুল’ নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে; যেখানে কেজি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।শিক্ষার্থী এত কম কেনঅবকাঠামো ও পরিবেশ ভালো এবং শিক্ষক পর্যাপ্ত থাকার পরও শিক্ষার্থী কম কেন, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মূলত প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের অপরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থার কথাই বেরিয়ে এল। উল্লেখিত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালে। আর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় পরের বছর ২০১৫ সালে।
বর্তমান অবস্থানস্থলে বিদ্যালয়টি নতুন হলেও এটির একটি পুরোনো ইতিহাস আছে। পুরান ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় বিপিণ রায় বালক ও বালিকা নামে দুটি বিদ্যালয় ছিল। এর মধ্যে বিপিণ রায় বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিই এখানে স্থানান্তর করা হয়। স্থানান্তরের পর নামও পরিবর্তন হয়।
আরও পড়ুনসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গরিবই রয়ে গেল০৪ মে ২০২৩কিন্তু স্থানান্তর করা এলাকায় নতুন করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রয়োজন ছিল কি না, সেটি ভালোভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। কারণ, সরকারি এই বিদ্যালয়ের সড়কের উল্টো দিকে সামান্য দূরেই নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১৮২ জন ও শিক্ষক ১০ জন। শুধু তা-ই নয়, এটির আঙিনায় ‘নীলক্ষেত হাইস্কুল’ নামে আরেকটি বিদ্যালয় আছে; যেখানে কেজি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।
পার্থক্য শুধু শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান ধানমন্ডি শিক্ষা অঞ্চলে। আর পার্শ্ববর্তী নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অবস্থান রমনা শিক্ষা অঞ্চলে।
আরও পড়ুন‘গরিবের বিদ্যালয়টি’ এখন ছয়তলা ভবন হচ্ছে১০ এপ্রিল ২০২৫শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রীনা পারভীন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থী কম হওয়ার কারণ হতে পারে বিদ্যালয়টি তুলনামূলক নতুন, পাশে মার্কেট ও আশপাশে একাধিক সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় থাকা। তবে তাঁর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী তুলনামূলক কম হলেও উপস্থিতির হার ভালো।
শিক্ষার্থী কম হওয়ার কারণ হতে পারে বিদ্যালয়টি তুলনামূলক নতুন, পাশে মার্কেট ও আশপাশে একাধিক সরকারি-বেসরকারি বিদ্যালয় থাকা।রীনা পারভীন, প্রধান শিক্ষক, শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ঢাকা জেলা ও মহানগর মিলিয়ে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৯৫১টি। এর মধ্যে মহানগরীতে ৩৪১টি। ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে মূলত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারের সন্তানেরাই পড়াশোনা করে। এর মধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে অবস্থানগত কারণেও শিক্ষার্থী কম। শিক্ষার্থী যে শুধু এখন কম তা নয়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম।
আরও পড়ুনখুলনার ‘গরিবের’ সেই প্রাথমিক বিদ্যালয় এবার দেশসেরা২৪ জুন ২০২৪প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি পরিকল্পনা আছে ১০ বছর ধরে অতি নগণ্য শিক্ষার্থী নিয়ে চলা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে পাশের অন্য বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার। ইতিমধ্যে এ ধরনের তিন শ’র মতো বিদ্যালয়ের তালিকা করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে স্থানীয় বাস্তবতার নিরিখে একীভূত করার কাজ করা হবে।
আরও পড়ুনসাতটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন১৫ এপ্রিল ২০২৫এরই মধ্যে একটি আলোচনা চলছে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার একটি বিদ্যালয়কে শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. আমিন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে একীভূত করার। কিন্তু এটি হলে শিক্ষার্থীদের যে খুব একটা উপকার হবে না, সেটি বোঝাই যায়। কারণ, এত দূরের শিক্ষার্থীদের এখানে পড়তে আসার কথা নয়; বরং এমন চিন্তা করতে হলে কাছের নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে করলে ভালো হবে বলে মনে করেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
জানতে চাইলে ধানমন্ডি থানা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম তকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মূলত পাশাপাশি দুটি বিদ্যালয় থাকার কারণেই এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম। তবে এখানে শিক্ষার্থী বাড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনএকজন শিক্ষক চালান একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়০৩ জুন ২০২৪আরও পড়ুনদিল্লির অভিজ্ঞতা বনাম ঢাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর গরিবি দশা০৭ মে ২০২৩উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব দ য লয়ট র জন শ ক ষ অবস থ ন অবক ঠ ম এল ক য় প রথম র একট
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ, প্রতি আসনে লড়বেন ৫১ জন
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ‘এ’ (মানবিক) ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা আজ শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। দুই ধাপে এ পরীক্ষা হবে—বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বেলা আড়াইটা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত। এবারই প্রথমবারের মতো দেশের পাঁচটি বিভাগীয় শহরে আঞ্চলিক কেন্দ্রে এ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘এ’ ইউনিটে আবেদনকারী ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯৬ হাজার ১৬২ জন। আসন রয়েছে ১ হাজার ৮৭২টি। সে হিসাবে প্রতি আসনের বিপরীতে প্রতিযোগিতা করবেন ৫১ জন।
‘এ’ ইউনিটের আওতায় রয়েছে কলা, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান ও চারুকলা অনুষদের ২৭টি বিভাগ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। এর মধ্যে কলা অনুষদে আসন রয়েছে ৮৮৬টি, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে ৬৫৬টি, আইন অনুষদে ১৬০টি, চারুকলা অনুষদে ১২০টি এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে ৫০টি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি পরীক্ষার আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রংপুর অঞ্চলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং মিলেনিয়াম স্টারস স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
চলতি শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি ইউনিটে মোট আসন ৪ হাজার ৩২৩টি। সেখানে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪১৫ জন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী। গড় হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে প্রতিযোগিতা করছেন ৫৫ জন।