বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বাণিজ্যযুদ্ধের চাপে চলতি ও আগামী বছর সারা বিশ্বে অপরিশোধিত তেলের চাহিদা কমে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ওপেক। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) তথ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত বাণিজ্য শুল্কের প্রভাব বিবেচনা করে আগের পূর্বাভাস সংশোধন করেছে সংস্থাটি।

রয়টার্সের সংবাদে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা ১৩ লাখ ব্যারেল এবং ২০২৬ সালে ১২ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে ওপেক। দুই বছরের জন্য দেওয়া এ পূর্বাভাস আগের পূর্বাভাসের তুলনায় দৈনিক গড়ে ১ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল কম।

একই সঙ্গে চলতি বছরের জন্য বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩ দশমিক ১ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ওপেক। এ ছাড়া ২০২৬ সালে প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩ দশমিক ১ শতাংশ; আগের পূর্বাভাসে যা ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ। মূলত প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে বলেই তেলের চাহিদা কমবে বলে জানিয়েছে ওপেক। ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হলে স্বাভাবিকভাবেই তেলের চাহিদা কমবে বা প্রবৃদ্ধির গতি কমবে।

ওপেকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ও ওপেক প্লাসের (ওপেক ও রাশিয়াসহ অন্যান্য সহযোগী দেশ নিয়ে গঠিত) সম্ভাব্য উত্তোলন বৃদ্ধি—এ দুই কারণে চলতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম পড়ছে। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল পাল্টা শুল্ক আরোপের পর জ্বালানি তেলের দাম চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে বা ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে আসে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে।

পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক বলেছে, বছরের শুরুতে বৈশ্বিক অর্থনীতি একরকম স্থিতিশীল ছিল। বিশ্ববাণিজ্যে সম্প্রতি যা ঘটেছে, অর্থাৎ যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ পরস্পরের পণ্যে শুল্ক আরোপ করছে, তার জেরে স্বল্প মেয়াদে হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছে ওপেক।

এদিকে ওপেকের পর এবার ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সিও (আইইএ) চলতি বছরের বৈশ্বিক জ্বালানি তেলের চাহিদা বৃদ্ধির পূর্বাভাস উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়েছে। মঙ্গলবার প্রকাশিত মাসিক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, বৈশ্বিক বাণিজ্য উত্তেজনা ও যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আইইএ জানায়, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা ৭ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল বাড়তে পারে। আগের মাসে তারা বলেছিল, প্রবৃদ্ধি হতে পারে দৈনিক গড়ে ১০ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, এপ্রিলের শুরুতে বাণিজ্য উত্তেজনা হঠাৎ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে অনিবার্যভাবেই বিশ্ব অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা ভবিষ্যতে আরও কমতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্যযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় চাহিদাও সবচেয়ে বেশি কমবে এই দুই দেশে। এ ছাড়া উদীয়মান বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও চাহিদা কমবে।

সাম্প্রতিক অতীতে তেলের দামে সবচেয়ে বড় উল্লম্ফন ঘটে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে, অর্থাৎ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। ওই বছর তেলের গড় দাম ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যায়, সর্বোচ্চ দাম ওঠে ১৩৯ ডলার। ফলে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়তে শুরু করে। তবে পরের বছর তেলের দাম কমে ৮০ ডলারে নেমে আসে। ২০২৪ সালেও দাম ৭০ ডলারের ঘরে ছিল। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৬৬ ডলার।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব দ ধ র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

নতুন পথনকশায় ১৪ মাসে ৬১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে

গ্যাসের সিস্টেম লস (কারিগরি ত্রুটি) কমাতে পথনকশা তৈরি করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। ৭টি গ্যাস কোম্পানিকে ২০২৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত সিস্টেম লস কমানোর লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছে এ বিভাগ। বিভাগটি বলেছে, কোম্পানিগুলোকে এ সময়ের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেকের নিচে নামিয়ে আনতে হবে গ্যাসের সিস্টেম লস। কাজটি না পারলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভোগ করতে হবে শাস্তি।

সচিবালয়ে আজ বুধবার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ পথনকশা চূড়ান্ত করা হয়। জ্বালানিসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ কোম্পানিগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বর্তমানে যে পরিমাণ সিস্টেম লস হয়, তার আর্থিক মূল্য ১০০ কোটি মার্কিন ডলার। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পথনকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিস্টেম লস অর্ধেকে নেমে এলে অন্তত ৫০ কোটি মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। বর্তমান বাজার মূল্যে এর পরিমাণ ৬১ হাজার কোটি টাকা।

দেশীয় কোম্পানি, আন্তর্জাতিক কোম্পানি ও চট্টগ্রামের মহেশখালীতে থাকা দুই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল থেকে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন পিএলসি লিমিটেডে (জিটিসিএল)।

জিটিসিএল পরে মিটারিংয়ের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে ছয় কোম্পানিকে। এগুলো হচ্ছে তিতাস, বাখরাবাদ, কর্ণফুলী, জালালাবাদ, সুন্দরবন ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি। এসব কোম্পানিই পরে গ্যাস সরবরাহ করে গ্রাহকদের। সিস্টেম লসের মধ্যে তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাসেরই বেশি, যা সুন্দরবন গ্যাস ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসের নেই বললেই চলে।

এখন থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে কোন কোম্পানি কোন মাসে সিস্টেম লস কতটা নামিয়ে আনবে, তা বেঁধে দেওয়া হয়েছে পথনকশায়। পথনকশা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে কি না, তিন মাস পর তা আবার খতিয়ে দেখবেন উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

তিতাস গ্যাসের গত জানুয়ারি মাসে সিস্টেম লস ছিল ১০ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০২৬ সালের জানুয়ারিতে কোম্পানিটিকে এ হার ৫ দশমিক ৫ শতাংশে এবং ডিসেম্বরে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে। একইভাবে বাখরাবাদের জানুয়ারিতে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ সিস্টেম লস থাকলেও আগামী বছরের জানুয়ারি ও ডিসেম্বরেও কোম্পানিটিকে এ হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে।

পথনকশায় সিস্টেম লস কমিয়ে আনার ব্যাপারে তিতাসের ৩৯১ ও বাখরাবাদের ১৩৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কর্ণফুলী গ্যাসে ২০০, জালালাবাদে ৬৪ এবং পশ্চিমাঞ্চল গ্যাসে ৩৬ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

সিস্টেম লস কমাতে সাতটি ভিজিল্যান্স দল গঠন করা হয়েছে। অবৈধ বিতরণ পাইপলাইন অপসারণ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং বিচ্ছিন্ন করার পর এগুলো আবার পুনঃস্থাপিত হয়েছে কি না, সেগুলো সরেজমিন দেখবে দলগুলো। পুনঃস্থাপনের সঙ্গে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী বা কোনো ঠিকাদার জড়িত কি না, তা–ও চিহ্নিত করা হবে।

সূত্রগুলো জানায়, গত ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ২ মাসে ৭০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন উচ্ছেদ করা হয়েছে। আর অবৈধ আবাসিক বার্নার বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। এ সময় ৯৬টি মোবাইল কোর্টসহ ও ১ হাজার ১৮৮টি মোবাইল কোর্ট ছাড়া অভিযান করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানালেন মেসি
  • নিজের প্রতি সৎ থেকে ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলতে চাই: মেসি 
  • ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে নিজের সঙ্গে ‘সৎ’ থাকতে চান মেসি
  • নতুন পথনকশায় ১৪ মাসে ৬১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে