এবার জিমন্যাস্টিকসে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী!
Published: 17th, April 2025 GMT
ইংল্যান্ডপ্রবাসী হামজা দেওয়ান চৌধুরীর আবির্ভাবের পর বাংলাদেশের ফুটবলের চেহারা বদলে গেছে। প্রিমিয়ার লিগ খেলা এ তারকার লাল-সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর পর কানাডাপ্রবাসী সামিত সোমও আগ্রহ দেখিয়েছেন। ইতোমধ্যে তাঁর পাসপোর্ট করার কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। ফুটবলের বাইরে অন্য ফেডারেশনগুলোতে প্রবাসী খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার জন্য চিঠি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। তাদের চিঠি দেওয়ার আগে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন খুঁজে পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জ্যাক আশিকুল ইসলামকে। বাংলাদেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা এ অ্যাথলেটের পাসপোর্ট করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। ইতোমধ্যে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কাছে চিঠিও দিয়েছে তারা।
ছেলেদের ছয়টি ইভেন্টের মধ্যে জ্যাক আশিকুল তিনটিতে বেশ ভালো। পোমেল হর্স, ফ্লোর এবং ভল্টিং ইভেন্টে তিনি অসাধারণ শৈলী দেখিয়ে মুগ্ধ করেছেন বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন কর্তাদের। ভিডিওতে তাঁর পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হলেও পাসপোর্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ অ্যাথলেটকে ঢাকায় এনে ট্রায়াল দিতে চায় ফেডারেশন। ‘আগে তার পাসপোর্ট হোক। তার পরই দেশে এনে তাকে আমরা দেখব। ভিডিওতে যা দেখেছি, আশা করি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের তারকা সে হতে পারবে’–আত্মবিশ্বাসের সুরে গতকাল সমকালকে জানান বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিল।
তবে কবে নাগাদ জ্যাক আশিকুলকে পাওয়া যাবে, সেটি এখনই বলতে পারছেন না জামিল। সামনে কমনওয়েলথ, এশিয়ান গেমসে তাকে পাওয়া যাবে বলে বিশ্বাস জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের, ‘এটি বলা যাচ্ছে না। কারণ, সবকিছু নির্ভর করছে তার পুরো প্রক্রিয়ার ওপরে। প্রক্রিয়াগুলো একটু জটিল। অনেক ধাপ আছে। এশিয়ান গেমসের মতো আসরগুলোতে তাকে পাওয়া গেলে আমাদের দলটা শক্তিশালী হবে।’ প্রতিনিয়ত আশিকুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন জামিল। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ জিমন্যাস্টও বাবার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে মুখিয়ে আছেন বলে জানিয়েছেন জামিল, ‘বাংলাদেশে খেলার জন্য সে খুবই আগ্রহী। তার মধ্যে অন্যরকম রোমাঞ্চ কাজ করছে। আমার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখে চলেছে সে।’
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ যাতে ভালো করে সেই জন্য সরকারও চাচ্ছে ভালো মানের প্রবাসীরা যেন এই দেশে আসেন। স্বপ্ন জাগিয়েও নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদের বেশি দিন বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারেননি। ২০২২ কমনওয়েলথ এবং একই বছর তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে অংশ নেওয়া আলী কাদের পরবর্তীতে হারিয়ে যান। এরপর থেকেই বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন নতুন প্রবাসীর সন্ধানে নামে। তারই ধারাবাহিকতায় খুঁজে পায় জ্যাক আশিকুল ইসলামকে। ১৮ বছর বয়সী এ তরুণ যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তাঁর বাবা আশিকুল ইসলামের বাড়ি রংপুরে। মা আমেরিকান। মূলত চাচার মাধ্যমে জ্যাক আশিকুলের সন্ধান পায় বাংলাদেশ জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন। আশিকুলের খেলার ভিডিওগুলো দেখে ভালো লেগেছে ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান জামিলের।
গতকাল সমকালের সঙ্গে নতুন এ প্রবাসী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘গত বছরের মে মাসের দিকে যোগাযোগ হয়েছে। তার পরে দেশের পট পরিবর্তনের কারণে অনেক দিন যোগাযোগ বন্ধ ছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি তার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি। এখন কাজটা দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেওয়ার সব চেষ্টাই করা হচ্ছে। এখন তার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা হয়েছে। আমি যতটুকু তার পারফরম্যান্স দেখেছি তাতে সন্তুষ্ট বলা যায়। আমি বলব না, একেবারে অলিম্পিক লেভেলের। সাইক সিজার যখন খেলছিল সে অন্য লেভেলের ছিল। জ্যাক ইসলামের মাত্র ১৮ বছর বয়স। এখনও ইয়ং। তার মধ্যে ভালো সম্ভাবনা আছে। পারফরম্যান্স যতটুকু দেখলাম, আমাদের জাতীয় দল যেটা করছে, তাদের মতোই কিংবা তাদের চেয়ে একটু ভালো বলা যায়।’
বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে আলোচিত অ্যাথলেট ছিলেন জিমন্যাস্ট সাইক সিজার। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এ অ্যাথলেট ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। তিনি ভোল্ট, ফ্লোর এবং অলরাউন্ড ইভেন্টে পারদর্শী ছিলেন। ২০২৪ প্যারিস অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের জিমন্যাস্ট দলের সহকারী কোচ ছিলেন সিজার। তাঁর মতো প্রতিভাবান না হলেও জ্যাক আশিকুল ইসলামকে নিয়ে আশাবাদী জিমন্যাস্টিকস ফেডারেশন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
কেমন খেললেন ভিনি-এমবাপ্পেরা, দেখুন রেটিংসহ বিশ্লেষণ
নিজেদের চেনা রূপে ফেরার সুযোগ ছিল, ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আরেকটি ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনের আশা। তবে কিছুই হলো না। বরং নিজেদের মাঠেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে মুখ থুবড়ে বিদায় নিল রিয়াল মাদ্রিদ। ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের কাছে দ্বিতীয় লেগে ২-১ গোলে হেরে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে শেষ হলো তাদের ইউরোপীয় অভিযান।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচটা শুরু থেকেই রিয়ালের জন্য কঠিন ছিল। যদিও প্রথমার্ধে তাদের কিছুটা আশার আলো দেখান থিবো কর্তোয়া। পেনাল্টি থেকে বুকে বল ঠেকিয়ে দেন বুকায়ো সাকার শট। তবে সেই স্বস্তি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। এমবাপ্পেকে নিয়ে যতটা আশা ছিল, মাঠে তিনি ছিলেন নিস্তেজ। একই চিত্র ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের ক্ষেত্রেও।
দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত দলীয় প্রচেষ্টায় এগিয়ে যায় আর্সেনাল, গোল করেন সাকা। তবে এক ভুলে আবারও রিয়ালকে ম্যাচে ফেরান আর্সেনালের ডিফেন্ডার উইলিয়াম সালিবার। তার ভুলের সুযোগ নিয়ে সমতায় ফেরান ভিনিসিয়ুস। কিন্তু এরপর আর রিয়ালের ঘুড়ে দাঁড়ানো হয়নি। বরং ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গ্যাব্রিয়েল মার্টিনেলির গোলে নিশ্চিত হয় তাদের বিদায়।
এমন এক রাতে রিয়ালের তারকারা যেন কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি। এমবাপ্পে ও ভিনিসিয়ুস ছিলেন ছায়ামানব। মধ্যমাঠে জুড বেলিংহাম একাই লড়েছেন, কিন্তু দলীয় সমন্বয়ের অভাব ছিল প্রকট। বদলি হিসেবে নামা রদ্রিগো, সেবায়োস কিংবা এন্ড্রিকও ম্যাচের গতি বদলাতে পারেননি। তাদের পারফরম্যান্সের রেটিং করেছে সংবাদ মাধ্যম গোল ডটকম।
গোলরক্ষক ও রক্ষণভাগ:
থিবো কর্তোয়া (৬/১০): ম্যাচের শুরুতে বুকায়ো সাকার পেনাল্টি ঠেকিয়ে দলের জন্য বড় মুহূর্ত এনে দিয়েছিলেন কর্তোয়া। তবে এরপর আর তেমন কিছু করার ছিল না। গোল দুটি ঠেকানো তার পক্ষে সম্ভব ছিল না।
লুকাস ভাসকেজ (৫/১০): দৌড়ঝাঁপে কমতি ছিল না, কিন্তু ভাসকাজের কার্যকারিতা ছিল খুব কম। ক্রসগুলো ছিল অগোছালো, এবং দুইবার গোলবারের দিকে দুর্বল শট নেন, যা একটিও বিপজ্জনক হয়নি।
রাউল আসেনসিও (৫/১০): ভাগ্য খারাপ বলতেই হয়। পেনাল্টি ফাউলের ঘটনায় ভাগ্য তার সহায় হয়নি।
আন্তোনিও রুডিগার (৬/১০): কিছু ট্যাকল আর ব্যক্তিগত দ্বৈরথে সফলতা পেলেও আর্সেনালের চলমান আক্রমণে খানিকটা অস্থির দেখিয়েছে তাকে। মেরিনোদের আক্রমণে অনেকটা বেসামাল ছিলেন তিনি।
ডেভিড আলাবা (৪/১০): ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই হলুদ কার্ড খেয়ে চাপে পড়ে যান আলাবা। এরপর পুরো সময়ই সাকার বিপক্ষে ছায়ার মতো ছিলেন। একাধিকবার পজিশনিংয়ে ভুল করেন।
মধ্যমাঠ:
চুয়ামেনি (৫/১০): ওয়ান ওয়ান পাসে ভালোই ছিলেন, কিন্তু মাঠে জায়গা দখলে একেবারেই দুর্বল। ওডেগার্ডের পজিশন বদলের কৌশলে বারবার বিভ্রান্ত হন।
ফেদেরিকো ভালভার্দে (৫/১০): তাকে চেনা ফর্মে পাওয়া যায়নি। মাঝমাঠে ছুটে বেড়িয়েছেন, যদি আর্সেনাল ফরোয়ার্ডদের দাপটে তেমন কিছু করতে পারেননি।
জুড বেলিংহ্যাম (৫/১০): মাঝমাঠে একপ্রকার একাই লড়েছেন। পুরো খেলায় একা তিনজনের বিরুদ্ধে খেলেছেন।
আক্রমণভাগ:
রদ্রিগো (৫/১০): কিছু কিছু মুহূর্তে দারুণ চেষ্টা করেছেন, দুই-একটি ভালো বল ক্রস করেছেন। তবে এক ঘন্টা পর তাকে বদলি করায় ম্যাচে প্রভাব ফেলার সুযোগ কমে যায়।
কিলিয়ান এমবাপ্পে (৪/১০): শুরুতে ভালো কিছুর আশা দেখালেও ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কিছু করতে পারেননি। ইনজুরির কারণে সময়ের আগেই মাঠ ছাড়তে হয়। তার রাতটা ছিল ভুলে যাওয়ার মতো।
ভিনিসিয়ুস জুনিয়র (৪/১০): একটি গোল করলেও ভিনি কার্যকর কিছু করতে পারেননি। বল নিয়ে একাধিকবার ড্রিবল করতে গিয়ে বল হারিয়েছেন। বড় ম্যাচে তার যে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল, সেখানে পুরোপুরি ব্যর্থ।
এদিকে বদলি খেলোয়াড়দের মধ্যে আক্রমণে কিছুটা সাহস দেখানোয় ১০ এর মধ্যে ৬ পয়েন্ট পেয়েছেন ফ্যান গার্সিয়া। তবে রক্ষণে তার দুর্বলতা ছিল। একটা শট গোলমুখে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছন্দহীন দানী সেবাইয়োসও ৫ পয়েন্টের বেশি পাননি। শেষদিকে আসায় লুকা মডরিচও তেমন কিছু করে দেখানোর সুযোগ পাননি। ভালো কিছু করার চেষ্টা করেছিলেন বলে ৬ পয়েন্ট পেয়েছেন এন্ড্রিক।
রিয়ালের এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্সে ভিলেনে পরিণত হয়েছেন কোচ কার্লো আনচেলত্তি। পরিকল্পনায় ঘাটতির প্রশ্ন রেখে গোল তাকে দিয়েছে মাত্র ৩ পয়েন্ট। এই হারে তার ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গেছে।