ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধে বাংলাদেশের লাভ কী
Published: 17th, April 2025 GMT
ভারত থেকে স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানি বন্ধ করেছে বাংলাদেশ। এত দিন বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ ছিল। গত মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) স্থলপথে সুতা আমদানির সুবিধা বন্ধ করে দেয়।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা ভারত বাতিল করার এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশ এমন সিদ্ধান্ত নিল। সুতা আমদানি বন্ধ করায় বাংলাদেশের কী লাভ হলো?
মিথ্যা ঘোষণার অভিযোগ
ভারত থেকে সুতা আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা ও কম মূল্যে সুতা রপ্তানির অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশের বস্ত্র খাতের ব্যবসায়ীরা। উদাহরণ দিয়ে বলা যেতে পারে, স্থলসীমান্তে বাংলাদেশ কাস্টমসে যে পরিমাণ সুতা আমদানির কথা বলা হয়, এর চেয়ে বেশি সুতা দেশে আসে। লোকবলের অভাবে সশরীরে পরিদর্শন করার সক্ষমতা কম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। এই সুযোগে ৩০ কাউন্টের সুতার চালানের ভেতরে ৮০ কাউন্টের সুতা আনার অভিযোগও আছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের সুতার চেয়ে কম দামে ভারত সুতা রপ্তানি করত। গড়পড়তায় দেশের বাজারের সুতার চেয়ে ৩ থেকে ৫ শতাংশ কম দামে ভারত থেকে সুতা আসত। বেনাপোল সীমান্তের আশপাশে সুতা মজুত করা হতো এবং আমদানি আদেশ পাওয়ার দু–এক দিনের মাথায় পণ্য পাঠিয়ে দিতেন ভারতীয় রপ্তানিকারকেরা।
এত দিন বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে আসার সুযোগ ছিল। সুতার সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা পরিমাপ হয় কাউন্ট দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের স্থলবন্দরে সুতার সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা মাপার পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি নেই। কয়েক বছর আগে বেনাপোল স্থলবন্দরে সুতার সূক্ষ্মতা ও স্থূলতা পরিমাপের জন্য যন্ত্রপাতি বসালেও দুই মাসের মাথায় তা অকেজো হয়ে যায়। ফলে অনেক আমদানিকারক মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে বেশি কাউন্টের সুতা এনেছেন।
শুল্ক কর্মকর্তারা জানান, স্থলপথে সুতা এলে প্রকৃতভাবে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কঠিন। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য চলে আসে। তাই সমুদ্রপথে সুতা আনলে আমদানির প্রবাহ এক জায়গা দিয়ে হয়, তাতে শুল্ক কর্মকর্তা ও আমদানিকারকদের জন্য সুবিধা হয়।
চীন, তুরস্ক, উজবেকিস্তান এবং দেশে উৎপাদিত সুতার দাম প্রায় একই রকম হলেও স্থলবন্দর দিয়ে আসা ভারতীয় সুতার দাম অনেক কম থাকে। অর্থাৎ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা সুতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে ঘোষিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে আসে। এতে দেশের সুতা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না।
কী লাভ হবে বাংলাদেশের
মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে সুতা আনা বন্ধ হবে। এতে স্থানীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে। আবার ভারত থেকে সমুদ্রপথে সুতা আমদানি করলে আর্থিকভাবে লাভ হবে। আবার স্থলপথের চেয়ে সমুদ্রপথে সময় খুব বেশি লাগবে না।
জানা গেছে, ভারতের কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও গুজরাট থেকে বাংলাদেশে সুতা আসে। সড়কপথে সুতা আসতে ১০-১২ দিন সময় লাগে। অন্যদিকে চেন্নাই সমুদ্রবন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত আসতে সময় লাগে দুই সপ্তাহের মতো। আর সমুদ্রপথে পণ্য এলে তিন-চার দিন বেশি সময় লাগে। কিন্তু জাহাজে সুতা আনলে ভাড়া ১০ শতাংশ কম পড়ে।
এ বিষয়ে বিটিএমএর পরিচালক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিট পোশাকশিল্পের মালিকেরা আগে যত সুতা লাগত, এর চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি সুতা আমদানি করতে পারে। স্থলপথে সুতা আমদানিতে এই সুযোগের অপব্যবহার হয়। তিনি বলেন, স্থলপথে সুতা আমদানি বন্ধ করায় এসব অনিয়ম বন্ধ হবে। এতে স্থানীয় উৎপাদকেরা লাভবান হবেন।
২০২৪ সালে সুতা আমদানি বেড়েছে ৩১%
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রায় ১২ লাখ টন সুতা আমদানি করেছেন দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তারা, যা ২০২৩ সালের তুলনায় ৩১ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি। এই সুতার বড় অংশই এসেছে ভারত থেকে। গত বছর যে পরিমাণ সুতা আমদানি হয়েছে, তা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
দেশের নিট কাপড়ের বেশির ভাগ এবং ওভেন কাপড়ের প্রায় অর্ধেক সুতার সরবরাহ করে দেশি স্পিনিং মিলগুলো।
বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, দেশের ৫১৯টি স্পিনিং মিল রয়েছে। এসব স্পিনিং মিল নিট কাপড়ের ৮৫-৯০ শতাংশ এবং ওভেন কাপড়ের প্রায় ৪০ শতাংশ সুতা সরবরাহ করে থাকে। এত স্পিনিং মিল থাকার পরও ভারত থেকে আমদানি করা সুতায় দাম একটু কম থাকায় আমদানি বাড়ছে।
কেন আমদানি বেড়েছিল—এমন প্রশ্নের জবাবে স্পিনিং মিলের মালিকেরা বলছেন, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে অধিকাংশ স্পিনিং মিল উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৫০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছে না। এ ছাড়া গত দুই বছরে গ্যাসের দাম ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এতে সুতার উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অন্যদিকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা দেশি বস্ত্রকলের সুতা ব্যবহারে নগদ সহায়তার হারও কমানো হয়েছে। এতে অনেক রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার মালিকেরা ভারতের সুতা ব্যবহারে উৎসাহী হন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আমদ ন র ব যবহ র উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-বাংলাদেশ শীতল সম্পর্ক আন্তসীমান্ত বাণিজ্য ও অবকাঠামোর ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলছে
সম্প্রতি আসাম রাইফেলস ও এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স যৌথভাবে এক সম্মেলন আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে আগরতলায় এক সফরে গিয়ে আমাদের আবারও ‘আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি)’ পরিদর্শন ও সেখানে আলোচনা করার সুযোগ হয়েছে। কাস্টমস ল্যান্ড স্টেশনগুলোতে আগরতলা আইসিপির মতো সুযোগ–সুবিধা না থাকলেও স্থানটি এক বছরের কম সময় আগেও সীমান্ত কর্মকাণ্ডের এক জমজমাট কেন্দ্র ছিল।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিটি সীমান্ত পয়েন্টে বাণিজ্যের গতি ভীষণভাবে কমিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আগরতলা-আখাউড়া সীমান্তও। প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার মানুষ এ চেকপোস্ট ব্যবহার করেন। এ সংখ্যা ২০০–এর নিচে নেমে গেছে। ২০২৩–২৪ সালে আগরতলা স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৩১৮ কোটি রুপি। দৃশ্যত আজ সেখানে কোনো পণ্য চলাচল নেই। আধুনিক, ঝকঝকে আইসিপি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রজন্মগত পরিবর্তনের প্রতীক। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, বাণিজ্য ও আন্তসীমান্ত অবকাঠামোর উন্নয়নে উভয় দেশ উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে।
অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ কলম্বো, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাংয়ের মতো গভীর আঞ্চলিক সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভর করে আছে। মাতারবাড়ী বন্দর একবার চালু হলে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট খরচ কমবে, জাহাজে পণ্য পরিবহন সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটবে ও দেশটি তার সামুদ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।বর্তমানে আগরতলা আইসিপি–ই যে শুধু দৃশ্যত ফাঁকা পড়ে আছে তা নয়, কয়েক কিলোমিটার দূরে সাব্রুমে নতুন নির্মিত আইসিপিও নীরব। এটি কার্যক্রম শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে। আন্তসীমান্ত ফেনী নদীর মৈত্রী সেতুর কাছে ২৫০ কোটি রুপিতে এ আইসিপি নির্মিত হয়েছে। ভারতের দক্ষিণ ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের দক্ষিণ–পূর্বের জেলা খাগড়াছড়ির মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে নদীটি। প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির জন্য এ সুবিধা একসময় অপরিসীম প্রতিশ্রুতির ছিল।
বাংলাদেশও রামগড় স্থল বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ করেছে। এটি একবার চালু হলে ভারতের মধ্য দিয়ে সংযোগ সড়ক হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ময়মনসিংহ এবং সিলেটে কার্যকর যাতায়াতের পথ সুগম হবে। পণ্য পরিবহন ও মানুষ চলাচলের ক্ষেত্রে বিশাল সম্ভাবনা থাকায় সাব্রুম ও রামগড় স্থলবন্দর একত্রে এই অঞ্চলের জন্য যুগান্তকারী পরিবর্তন বয়ে আনবে বলে আশা করা হয়েছিল। এতে ভারতের ত্রিপুরা ও উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর বাসিন্দারা শুধু চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধাই নয়, বরং চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ব্যবহারেরও সুযোগ পেতেন। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে এক নতুন বাণিজ্যিক করিডর হয়ে উঠতে পারত রামগড় স্থলবন্দর।
অপ্রকাশ্য সম্ভাবনা
বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত বাংলাদেশের কক্সবাজার। ভারত থেকে এ সৈকতে উল্লেখযোগ্য পর্যটক আসতে দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্বিমুখী চলাচল সুবিধার উন্নয়নে কিছু পরিবর্তন আনতে পারে এ সৈকত। বাস্তবে, এসব আন্তসীমান্ত পথের মাধ্যমে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যও লাভবান হবে বলে ধারণা করা হয়।
আরও গুরুত্বপূর্ণ হলো, মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে কখনো যুক্ত হলেই শুধু আন্তসীমান্ত সুবিধাগুলো পূর্ণ সম্ভাবনার স্তরে পৌঁছাবে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) সহায়তায় কক্সবাজার জেলায় এ গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষিণে অবস্থিত মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর শুধু বাংলাদেশ ও জাপানের জন্যই নয়, ভারতের জন্যও বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক বছর ধরেই বাংলাদেশ কলম্বো, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাংয়ের মতো গভীর আঞ্চলিক সমুদ্রবন্দরের ওপর নির্ভর করে আছে। মাতারবাড়ী বন্দর একবার চালু হলে বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট খরচ কমবে, জাহাজে পণ্য পরিবহন সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটবে ও দেশটি তার সামুদ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর আরও বেশি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে।
ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের ওপর বৈশ্বিক মনোযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান বাণিজ্যিক ও কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেশটির আবেদন বাড়িয়েছে। কৌশলগত লক্ষ্য এগিয়ে নেওয়ার অংশ হিসেবে ঢাকা নিজেকে তার ঐতিহ্যগত দক্ষিণ এশীয় পরিচয় ছাপিয়ে ক্রমেই আরও বেশি আঞ্চলিক খেলোয়াড় হিসেবে দেখছে। বৃহত্তর পরিসরে ইন্দো–প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে তার। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আঞ্চলিকতার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আছে। মাতারবাড়ী বন্দর দেশটিকে আঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্টের একটি কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে বড় জাহাজগুলো সেখানে সরাসরি নোঙর করতে পারবে। এতে এ বন্দর বাংলাদেশের সামুদ্রিক সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে বড় জাহাজের সরাসরি নোঙর করার সুবিধা নেই। আনুমানিক পরিসংখ্যানে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ‘টোয়েন্টি ফুট ইক্যুইভ্যালেন্ট ইউনিটের (টিইইউ)’ কনটেইনার বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে পরিবহন করতে বর্তমানে ৩ হাজার ডলার খরচ পড়ে ও সময় লাগে ৪০–৪২ দিন।
মাতারবাড়ী ৮ হাজার ২০০ টিইইউ–এর বেশি বৃহৎ কনটেইনারবাহী জাহাজগুলো ভেড়ার সুবিধা দিতে পারবে। এতে দ্রুততার সঙ্গে ও সুলভে জাহাজে পণ্য সরবরাহের সম্ভাবনা তৈরি হবে। রামগড় স্থলবন্দর ভারতের আইসিপিগুলো যুক্ত করবে। বাংলাদেশ গভীর সমুদ্রবন্দরকে কক্সবাজারের সঙ্গে যুক্ত করতে ২৭ দশমিক ২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কও নির্মাণ করছে।
বাংলাদেশ বলেছে, ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের ফিডার নৌযান সেবাকেও সহায়তা করতে পারবে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর। এই ট্রান্সশিপমেন্ট রূপরেখা শুধু ভারত নয়, স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশীর জন্যও কার্যকর বাণিজ্য–সুবিধা ত্বরান্বিত করতে পারে। যাহোক, এসব সম্ভাবনার অনেকটাই অপ্রকাশ্য রয়ে গেছে।বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভারতের কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের ফিডার নৌযান সেবাকেও সহায়তা করতে পারবে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর। এই ট্রান্সশিপমেন্ট রূপরেখা শুধু ভারত নয়, স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানের মতো প্রতিবেশীর জন্যও কার্যকর বাণিজ্য–সুবিধা ত্বরান্বিত করতে পারে। যাহোক, এসব সম্ভাবনার অনেকটাই অপ্রকাশ্য রয়ে গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ ও ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা চলার মধ্যে এটি অব্যাহত থাকতে পারে।
হারানো সুযোগ
বিশ্ববাণিজ্যে অনিশ্চয়তা চলার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর শুল্কারোপ তা আরও তীব্র করেছে। সেই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের শীতলতা দক্ষিণ এশীয় উপ–আঞ্চলিক সম্ভাবনাকে আরও বাধাগ্রস্ত করছে। সম্প্রতি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার বৈঠকও (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি) দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উত্তেজনা কাটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলাফল, দুই দেশের অধিকাংশ সীমান্ত অবকাঠামো অব্যবহৃত পড়ে আছে। কূটনৈতিক সম্পর্কে উষ্ণতা ফেরানো না গেলে মাতারবাড়ী বন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হলেও এর পূর্ণ সম্ভাবনা উন্মোচিত করা সম্ভব হবে না।
দৃশ্যত, বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেই শুধু এ সম্পর্কের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। ততক্ষণ পর্যন্ত উভয় পাশের সাধারণ জনগণকে সুযোগ হারানোর ভার টানতে হবে।