বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন ঢাকা সফররত মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ফরেন সেক্রেটারি নিকোল অ্যান চুলিক।

বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম, দলগুলোর অর্থনৈতিক পলিসি ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর। বৈঠকে বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা ৩৭ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন তিন দলের নেতারা।

গতকাল বুধবার গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসায় পর্যায়ক্রমে তিন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন এ কূটনীতিক। প্রথম আলোচনা হয় জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে। এতে উপস্থিত ছিলেন আমির ডা.

শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। 

বৈঠক শেষে শফিকুর রহমান বলেন, বৈঠকে রাজনীতি এবং নির্বাচন নিয়ে খোলামেলা কথা হয়েছে। চুলিক বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, ক্ষমতায় গেলে জামায়াতের অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক নীতি কী হবে, তা জানতে চেয়েছেন। আঞ্চলিক বিষয়, সংখ্যালঘু, নারী অধিকার, শ্রমিক অধিকার নিয়েও জামায়াতের অভিমত জানতে চেয়েছেন। এসব বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছি। বাংলাদেশ একটি নাজুক সময় পার করছে। আশা করি, তা উপলব্ধি করে যুক্তরাষ্ট্র সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে। 

দ্বিতীয় বৈঠকটি হয় বিএনপির সঙ্গে। বিকেল সাড়ে ৪টার এ বৈঠকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ অংশ নেন। বৈঠক বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন ও সংস্কারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে অর্থনীতি ও ট্যারিফের বিষয়টা আসছে। সবাই মিলে শুল্ক কীভাবে প্রত্যাহার করা যায়, তা নিয়ে কথা হয়েছে। আমরা বলেছি, শুল্ক একটা সহনীয় সীমার মধ্যে না আনলে রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

বিএনপির অর্থনৈতিক নীতি কী হবে, তা বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত দিনে যত সংস্কার হয়েছে, বিএনপির সময়ে হয়েছে। অর্থনীতির সংস্কার বিএনপির সময়ে হয়েছে; রাজনৈতিক সংস্কার বিএনপির সময়ে হয়েছে। বহুদলীয় গণতন্ত্র, মুক্তবাজার অর্থনীতি থেকে শুরু করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা– সব সংস্কার বিএনপির সময়ে হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা আমাদের সংস্কারের কারণে আসছে। আগামী দিনে আমরাও বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কারে যাব।
সবার শেষে নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক করেন এনসিপির প্রতিনিধিরা। বৈঠকে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে অংশ নেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। 

আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে নাহিদ ইসলাম বলেন, মূলত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম, নির্বাচন বিষয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দলের আগ্রহ ছিল। এ ছাড়া সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশের সামনের রাজনীতি কোন দিকে যাবে এবং এনসিপির গঠন প্রক্রিয়া, সাংগঠনিক কার্যক্রম, আদর্শ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। 

এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, আমরা আমাদের জায়গা থেকে ব্যাখ্যা করেছি, আমাদের রাজনৈতিক দল কেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সংস্কার বিষয়ে সংস্কার কমিশনে আমরা যে প্রস্তাবগুলো দিয়েছি, সেটি আমরা বলেছি। আমাদের যে তিনটি দাবি– বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন; সেটা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলেছি। 

আওয়ামী লীগের বিচার এবং নির্বাচনে আসার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ বলেন, এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো আলোচনা হয়নি।

আমাদের যে দলীয় অবস্থান– আমরা বলেছি যে বিচারের আগে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক, রাজনৈতিক কার্যক্রম এবং নির্বাচনে আসার কোনো সুযোগ নেই। পাশাপাশি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত ব এনপ র সময় র জন ত ক এনস প র আম দ র ন র জন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার চেষ্টায় বিএনপি, লক্ষ্য ডিসেম্বরে নির্বাচন

এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিএনপি। এতে যুগপৎ কর্মসূচির শরিকেরা ছাড়াও বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এমন রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে।

এই উদ্যোগের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে ১২–দলীয় জোট ও সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বসছে বিএনপি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মতবিনিময় শেষে দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে দলটির কেউ কিছু বলছেন না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।

এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে, এমন রাজনৈতিক সব দলের সঙ্গেই তাঁরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবেন।

সুনির্দিষ্ট করে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।

তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।

আরেকজন বলেছেন, আলোচনা থেকে কাউকে বাদ দেওয়ার কথা আসেনি। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চিন্তা রয়েছে।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমরা কথা বলব কি না, দেখতে হবে। কারণ, তাদের দুজন সরকারে আছে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে কি না, ভাবতে হবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আরও পড়ুনআমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই: মির্জা ফখরুল১৬ এপ্রিল ২০২৫

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে সরকারের ওপর জোরালো চাপ তৈরি করতে চাইছে বিএনপি। সে জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে মতবিনিময় শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এর আগে থেকেই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসছেন। এখন নতুন করে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসচিব তো বলেই দিয়েছেন, আমরা সন্তুষ্ট নই। এখন আমরা কী করব, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।

স্থায়ী কমিটির বৈঠক–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দু-এক মাস পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ আসে। কারণ, এখনই সরকারের বিরুদ্ধে মাঠের কর্মসূচি শুরু বা বড় আন্দোলনে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারণী নেতাদের কেউ কেউ। ফলে সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও এসেছে।

আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী

ওই একই সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গও এসেছে। জামায়াতের আমির আগামী বছরের রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। তাঁদের যুক্তি, জামায়াত যদি এ জায়গায় স্থির থাকে, তাতে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে এক-দেড় মাস পেছালে খুব একটা আপত্তি থাকবে না। তবে সেটা অবশ্যই জুনে নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কী আলোচনা হয়েছে, বিষয়গুলো আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে শেয়ার করব। এরপর সবার মতামত নিয়ে আমরা করণীয় ঠিক করব। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ