সন্ধ্যায় জিডি, মধ্যরাতে বাড়িতে আগুন
Published: 17th, April 2025 GMT
ফেসবুকে অপপ্রচার চলছিল চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষকে নিয়ে। নিরাপত্তা চেয়ে সন্ধ্যায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। মধ্যরাতে মানিকগঞ্জের গড়পাড়া গ্রামে তাঁর বাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
মানবেন্দ্র জানান, দু-তিন দিন ধরে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে অপপ্রচার চলছিল। এসব কথাবার্তাকে তিনি হুমকি বলে মনে করছিলেন। এ জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মানিকগঞ্জ সদর থানায় জিডি করেন। মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা তাঁর বাড়িতে আগুন দেয়। তিনি অন্য একটি ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। অন্যদের চিৎকারে জেগে ওঠেন। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। আগুনে মোটরসাইকেল, ফ্রিজ, ধান ভাঙানোর মেশিনসহ শিল্পকর্ম পুড়ে গেছে।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল হামিদ মিয়া জানান, ভোর ৪টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে যান। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা যায়নি।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমান উল্লাহ জানান, শিল্পী মানবেন্দ্র মামলা করেছেন।
ফেসবুকে অপপ্রচার
ফেসবুকে ‘বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ’, ‘মুজিববাদ’সহ আওয়ামী লীগের নামসংবলিত কয়েকটি পেজে প্রকাশ করা হয়, ‘শেখ হাসিনার বিকৃত মুখাবয়ব তৈরির দায়িত্ব নিয়েছেন মানবেন্দ্র ঘোষ। তাঁর বাড়ি মানিকগঞ্জের গড়পাড়ায়।’ আইনজীবী নিঝুম মজুমদার তাঁর ফেসবুকে এটি শেয়ার করেন।
পরে মানবেন্দ্র ফেসবুকে লেখেন, ‘এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনে বাঘের মোটিফ ছাড়া অন্য কোনো কাজে আমি নিয়োজিত ছিলাম না।’
পরিদর্শন ও তদন্ত
গতকাল বুধবার দুপুরে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পরিদর্শন করেন মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড.
জেলা প্রশাসক মানোয়ার বলেন, ‘এ ঘটনায় ছয় সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।’
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আবেদীন কায়সার সমকালকে বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, এই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক রয়েছে। কারণ সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বাড়ির পাশে এই চিত্রশিল্পীর বাড়ি।’
বাড়ি পুনর্নির্মাণ করে দেবে সরকার
চিত্রশিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িটি পুনর্নির্মাণ করে দেবে সরকার। গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এ তথ্য জানিয়েছে। পরে রাত পৌনে ৮টায় জানানো হয়, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নিন্দা-সমাবেশ
ভাস্কর মানবেন্দ্রর বাড়িতে আগুন দেওয়ায় নিন্দা জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ও বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।
গতকাল বিকেলে প্রতিবাদী সমাবেশ করেছে গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সমাবেশে সংগঠনের আহ্বায়ক আবদুল কাদের দুটি দাবি জানান। তিনি বলেন, শিল্পী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তা এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হবে রাষ্ট্রকে। জড়িতদের বিচার করতে হবে।
(তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম ন কগঞ জ ফ সব ক সদস য ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার চেষ্টায় বিএনপি, লক্ষ্য ডিসেম্বরে নির্বাচন
এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিএনপি। এতে যুগপৎ কর্মসূচির শরিকেরা ছাড়াও বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এমন রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে।
এই উদ্যোগের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে ১২–দলীয় জোট ও সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বসছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মতবিনিময় শেষে দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে দলটির কেউ কিছু বলছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে, এমন রাজনৈতিক সব দলের সঙ্গেই তাঁরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবেন।
সুনির্দিষ্ট করে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।
তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।আরেকজন বলেছেন, আলোচনা থেকে কাউকে বাদ দেওয়ার কথা আসেনি। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চিন্তা রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমরা কথা বলব কি না, দেখতে হবে। কারণ, তাদের দুজন সরকারে আছে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে কি না, ভাবতে হবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুনআমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই: মির্জা ফখরুল১৬ এপ্রিল ২০২৫বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে সরকারের ওপর জোরালো চাপ তৈরি করতে চাইছে বিএনপি। সে জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে মতবিনিময় শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এর আগে থেকেই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসছেন। এখন নতুন করে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসচিব তো বলেই দিয়েছেন, আমরা সন্তুষ্ট নই। এখন আমরা কী করব, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।স্থায়ী কমিটির বৈঠক–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দু-এক মাস পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ আসে। কারণ, এখনই সরকারের বিরুদ্ধে মাঠের কর্মসূচি শুরু বা বড় আন্দোলনে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারণী নেতাদের কেউ কেউ। ফলে সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও এসেছে।
আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীওই একই সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গও এসেছে। জামায়াতের আমির আগামী বছরের রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। তাঁদের যুক্তি, জামায়াত যদি এ জায়গায় স্থির থাকে, তাতে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে এক-দেড় মাস পেছালে খুব একটা আপত্তি থাকবে না। তবে সেটা অবশ্যই জুনে নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কী আলোচনা হয়েছে, বিষয়গুলো আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে শেয়ার করব। এরপর সবার মতামত নিয়ে আমরা করণীয় ঠিক করব। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।’