ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও তদন্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ফলে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দেড় শতাধিক আসামি বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের মামলার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ এখন পর্যন্ত ৩৪১টি অভিযোগ পেয়েছে। তদন্ত সংস্থা জড়িত তিন শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪০ মামলার তদন্ত করছে।
অবশ্য জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পাশাপাশি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের বিচারও চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, কারাগারে বন্দি লোকগুলো তো ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। অযথা একটা লোককে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে কেন আটকে রাখা হবে। তাদের ‘অ্যাকুইটাল’ (বিচারে খালাস) দিয়ে দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।
জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত না জেনে কিছু বলা যাবে না। তবে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারীদের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ বছরে ৫৫ মামলার রায়ে আসামি ছিলেন ১৬৯ জন। যার মধ্যে রায় হওয়ার আগেই মারা যান ১৮ জন; তাদের মধ্যে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৬ জন, পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন দু’জন। আসামির মধ্যে দু’জন খালাস পেয়েছেন। যার মধ্যে একজন শিশু বিবেচনায়। বাকি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪৯ জন।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন ১০৬ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ২৫ জন, যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ১২ জন এবং সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ছয়জন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি মামলা। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের ৭ আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড।
গত বছর রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যেখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ দেড় শতাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে নতুন মামলার ভারে স্থবির হয়ে যায় একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের পুরোনো মামলা। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে ১১৩ জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা বিচারাধীন ও তদন্ত সংস্থায় ২৫ মামলা তদন্তাধীন ছিল। অনুসন্ধানের অপেক্ষায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চার হাজার অভিযোগ। গত বছর ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৬০ সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিলেন।
এদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছয়জনের বিচার ছিল চলমান। যাদের অধিকাংশ জামায়াত ইসলামীর নেতা। গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একজনের বিচার চলমান।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫৩টি আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বেশ কয়েক বছর ধরে এসব আপিলের শুনানি হচ্ছে না। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এটিএম আজহারুল ইসলামের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আগামী ৮ মে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম নবত ব র ধ পর ধ র ব অপর ধ র তদন ত র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে সন্ধির মানববন্ধন ও মিছিল
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যা ও বর্বরতার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে দেওভোগের সামাজিক সংগঠন ‘সন্ধি।’ শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বাদ আছর শহরের চাষাঢ়াস্থ নূর মসজিদের সামনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা এ মানববন্ধন করে।
সংগঠনের সভাপতি মো: নূরউদ্দিন সাগরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক হাজী মো: খালিদ হোসেন পলাশের সঞ্চালনায় মানবন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দৈনিক আজকের নীরবাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এসএম ইমদাদুল হক মিলন, দৈনিক বিজয় পত্রিকার সম্পাদক সাব্বির আহমেদ সেন্টু, হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনাল জেলার সভাপতি অ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম টিটু, বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ক্লাব ট্রাস্ট জেলা শাখার সভাপতি এস এম জহিরুল ইসলাম বিদ্যুৎ, আইন সহায়তা তথ্য মানবাধিকার ফাউন্ডেশন জেলা শাখার সভাপতি শফিকুল ইসলাম আরজু, বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি কাজী আনিসুল হক হীরা, হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনাল জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ সোহেল।
মানববন্ধনে নেতৃবৃন্দরা বলেন, ফিলিস্তিন মুসলমান শুধুমাত্র এ জন্য আমরা এখানে দাঁড়াইনি। আমরা তথা সন্ধি সামাজিক সংগঠন বরাবরই মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে।
এখানে মুসলমান না হয়ে যদি অন্যধর্মের মানুষও গণহত্যার শিকার হতো, আমরা তাদের পক্ষেই দাঁড়াতাম। এখানে গণহত্যা হচ্ছে যেটা মানুষ হিসেবে আমাদের ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এক হয়ে এর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আমরা এখানে দাঁড়িয়েছি ফিলিস্তিনির মানুষের পক্ষে কোন ধর্মের পক্ষে নয়।
বক্তারা আরও বলেন, আমাদের দাবি সরকারের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনির হয়ে আর্ন্তজাতিকভাবে এর প্রতিবাদ জানাতে হবে। জাতিসংঘে এটা নিয়ে নিন্দার প্রস্তাব তুলতে হবে।
যুদ্ধবিরতি কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৭১-এ যেভাবে সারাবিশে^ আমাদের পক্ষে একটা জনমত গড়ে তোলা হয়েছিলো, ঠিক একই ভাবে ফিলিস্তিনির পক্ষেও জনমত গড়ে তোলতে হবে।
বক্তব্য শেষে ফিলিস্তিনিদের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়। পরে তারা শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিলও বের করেন। বিক্ষোভ মিছিলে ‘নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবার স্লোগান’ ‘ইসরায়েলের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ ‘তুমি কে আমি কে, প্যালেস্টাইন প্যালেস্টাইন’, ইত্যাদি স্লোগান দেন সন্ধি সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা।
এসময় তাদের এ স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে গোটা নগরী। পরে মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পশ্চিম দেওভোগস্থ সংগঠনটির অস্থায়ী কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
মিছিলে উপস্থিত ছিলেন, মো: রায়হান উদ্দিন, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মো: শাহাজালাল শাকিল, সাধারণ সম্পাদক মো: সোহেল, মহানগর প্রজন্মদরের যুগ্ম আহ্বায়ক মো: সানি খোকন, মো: হান্নান, মো: আদিম, আশরাফ উদ্দিন রাসেল, সন্ধি সামাজি সংগঠনের সহ সভাপতি মো: মমিনুল ইসলাম, সুমন রায়, মো: সালাউদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আতিকুর রহমান অভি, ক্রীড়া সম্পাদক মো: অভি চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক টুটুল চন্দ্র শীল, কোষাধ্যক্ষ শংকর দাস, কার্যকরী সদস্য মো: রনি, মাসুদুর রহমান, মো: সুমন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, মো: নিয়াজ, মো: সোহাগ, মো: মুকুল, মো: রতন, আব্দুর রাজ্জাক, মিলন, মো: মাহাবুব প্রমূখ।