চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের হাতিয়ার মিলতে পারে বাংলাদেশেও
Published: 17th, April 2025 GMT
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় এসেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। ঠিক এক বছরের মাথায় চীনের প্রেসিডেন্ট তাঁর বুদ্ধিদীপ্ত খেল দেখিয়েছিলেন। তিনি চীনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শিল্পনগরী গানঝোতে এক উচ্চ পর্যায়ের সফর করেন। সেখানকার কারখানায় তৈরি হওয়া ধাতব পাত হাতে নিয়ে বলে ওঠেন, ‘এটাই এখনকার পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদ।’ আর এই পাত ‘রেয়ার আর্থ’ বা বিরল খনিজ (মৃত্তিকা ধাতু) দিয়ে তৈরি, যার উৎপাদন চীনেই সর্বোচ্চ।
শি যখন এই চ্যালেঞ্জের কথা ঘোষণা করছিলেন, তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির বাঘা বাঘা নেতা। এখন নতুন করে ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, সেই লড়াইয়ে বিরল খনিজের তৈরি ধাতবই আসল হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
এদিকে বাংলাদেশেও এই বিরল খনিজের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনও এসব নিয়ে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। যাচাই করা হয়নি বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা।
বিরল ওই মাটি দিয়ে যেমন তেমন জিনিস তৈরি হয় না। এই মাটি দিয়ে এমন সব যন্ত্রাংশ তৈরি করা যায়, যেগুলো উন্নত প্রযুক্তিগত পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেগুলো আইফোন থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক সব যানবাহনেও ব্যবহার করা সম্ভব। যা ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে বদলে দিতে সক্ষম।
শুল্কের বিপরীতে এটি এমন একটি খাত, যেখানে ট্রাম্প প্রতিশোধমূলক কোনো কৌশলই কাজে লাগাতে পারবেন না। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই মৌলটি পাওয়া গেলেও পরিমাণে চীনের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া এগুলো উত্তোলন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কঠিন ও ব্যয়বহুল। এমনকি পরিবেশগত দূষণের ঝুঁকি রয়েছে।
কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশ চীনের এই প্রক্রিয়াজাত ধাতব পদার্থের ওপর নির্ভরশীল। আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) মতে, বিশ্বব্যাপী খনি থেকে উৎপাদিত এই বিরল মাটির ৬১ শতাংশই চীনে পাওয়া যায়। তবে প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে এই খাতে চীনের নিয়ন্ত্রণ উৎপাদনের ৯২ শতাংশ।
এই বিরল খনিজ থেকে উৎপাদন হয় এক প্রকার চুম্বক, যা স্মার্টফোন, গাড়ি ও জেট ইঞ্জিন এবং এমআরআই মেশিনে ব্যবহৃত হয়। এমনকি এই চুম্বক যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ স্টিলথ যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে পারমাণবিক সাবমেরিন এবং অন্যান্য বড় অস্ত্র তৈরির অপরিহার্য উপাদান।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও জননীতির অধ্যাপক জাস্টিন ওলফার্স বলছেন, এভাবেই চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কৌশলগত অস্ত্র প্রয়োগ করতে পারে। ঠিক যেখানে আঘাত করলে আমেরিকান শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে, ঠিক সেখানেই আঘাত করতে সক্ষম চীন।
বেইজিং আপাতত বিরল খনিজ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের রেয়ার আর্থের সিইও জোশুয়া ব্যালর্ড বলেন, বিশ্বব্যাপী বিরল মাটি রপ্তানির ৯৮ শতাংশ চীন নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। চীন এখন রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমেরিকান কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে।
চীন এই বিরল খনিজ প্রক্রিয়াজাত প্রযুক্তিতে উন্নতি ঘটিয়েছে। প্রাথমিক প্রযুক্তিগত সহায়তা তারা যুক্তরাষ্ট্র, জাপান বা ইউরোপ থেকেই পেয়েছে। এখন সেই প্রযুক্তিও তারা নিজেরা রপ্ত করে নিয়েছে।
চলতি বছর মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপে দেখা যায়, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরল খনিজ আমদানির ৭০ শতাংশই চীন থেকে করা হয়েছে।
বাংলাদেশে বিরল খনিজের সম্ভাবনা
বাংলাদেশেও এই মূল্যবান বিরল খনিজ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর অববাহিকায় গড়ে ওঠা চরে, বঙ্গোপসাগরে সৈকতের বালুতে এবং উত্তরবঙ্গের কয়লা খনিতে বিভিন্ন বিরল খনিজের সন্ধান মিলেছে। তবে এখনও এসব খনিজ নিয়ে সমন্বিত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। যাচাই করা হয়নি বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা। তবে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান, শিল্প গবেষণা পরিষদসহ (বিসিএসআইআর) বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব নিয়ে কাজ করছে।
ব্রহ্মপুত্র নদের বালুতে ৩ থেকে ৫ শতাংশ মূল্যবান খনিজ পদার্থ আছে বলে নিশ্চিত করছেন গবেষকরা। আইএমএমএমের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
শিশু জুঁই হত্যা: অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
পাবনার চাটমোহরে ছয় বছরের শিশু জুঁইকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী। বৃহস্পতিবার সকালে চাটমোহর উপজেলার কাটাখালী বাজারে প্যাসিফিক একাডেমীর আয়োজনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী অংশ নেন। তারা জুঁই হত্যার প্রতিবাদ এবং বিচার দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, ঘটনার দু’দিন পেরিয়ে গেলেও পুলিশ এখনও জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত কেউই স্বস্তি পাচ্ছেন না। সবার মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। হত্যাকারীরা যেন কোনোভাবেই রেহাই না পায়। হত্যাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে শাস্তির দাবি জানান বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চড়ইকোল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাপস রঞ্জন তলাপাত্র, কাটাখালি আইনুল উলুম দাখিল মাদ্রাসার সুপার মাওলানা নাসির উদ্দীন, কাটাখালি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় মিরাজুল ইসলাম জুয়েল, কুদরত আলী, প্যাসিফিক একাডেমির পরিচালক হুমায়ুন কবির ও প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আহসান হাবিব আরিফ প্রমুখ।
সোমবার বিকেলে দাদির কাছে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় জুঁই। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পায়নি পরিবার। পরদিন মঙ্গলবার বাড়ির পাশে একটি ভুট্টা ক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত শিশুর মা বাদী হয়ে চাটমোহর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। কিন্তু এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।