মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে প্রতারণার ফাঁদ
Published: 17th, April 2025 GMT
ফরিদপুর সদর উপজেলায় একটি পরিবারের বিরুদ্ধে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে অভিনব প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েক বছর ধরে মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন করে প্রবাসীসহ বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে অর্থ ওঠানো হলেও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় কোনো বাস্তব উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। প্রস্তাবিত মাদ্রাসার জন্য এখনও এক ছটাক জমিও কেনা হয়নি, এমনকি কোনো ব্যাংক হিসাব নম্বরও খোলা হয়নি। শুধু মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার কথা বলে টাকা তোলার একটি কার্যক্রমই দৃশ্যমান!
মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে অভিনব প্রতারণার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের পরমানন্দপুর বাজার এলাকার বাসিন্দা মীর ইন্তাজ আলী ও তাঁর তিন ছেলে মো.
স্থানীয় বাসিন্দা ও ইন্তাজ আলীর ভাতিজা মো. মিজানুর রহমান মিজান জানান, প্রস্তাবিত মাদ্রাসাটির নামে ২০২১ সাল থেকে তাদের এই অভিনব প্রতারণা শুরু হয়। মাদ্রাসার কথা বলে এ পর্যন্ত চারটি ওয়াজ মাহফিল করা হয়েছে। মুফতি আমির হামজাও এখানে এসে ওয়াজ করেছেন। প্রতি ওয়াজেই মাহফিলের মাঠ থেকে মাদ্রাসার নামে লাখ লাখ টাকা ওঠানো হয়েছে। এমনকি প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
কল্পিত মাদ্রাসার নামে গত কয়েক বছরে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ ইন্তাজ আলী বা তাঁর ছেলেরা মাদ্রাসার নামে তোলা অর্থের বিষয়ে কারও কাছেই হিসাব দেননি। মাদ্রাসার জন্য এক ছটাক জমিও কেনেননি।
ইন্তাজ আলীর প্রতিবেশী ও কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুদ মোল্লা বলেন, ইন্তাজ আলী ও তাঁর ছেলেরা একটি প্রস্তাবিত মাদ্রাসার নাম দিয়ে প্রতিবছর ওয়াজ মাহফিল করেন। তাদের বক্তব্য ছিল, এভাবে অর্থ সংগ্রহ করে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করবেন। তারা প্রতিবছর অর্থ সংগ্রহ করেন কিন্তু মাদ্রাসার জন্য কিছু করেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা ও সাবেক ইউপি সদস্য মো. মিলু বলেন, ওই মাদ্রাসার দৃশ্যমান কোনো কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। কোনো কিছুই নেই।
অভিযোগ অস্বীকার করে মীর ইন্তাজ আলী বলেন, ইসলামের অগ্রগতির জন্য তিনি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে মাদ্রাসার নামে কোনো অর্থ সংগ্রহ করা হয়নি।
ইন্তাজ আলীর ছেলে ইয়ামিন আলীর ভাষ্য, এটি একটি প্রস্তাবিত মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। ইন্তাজ আলীর আরেক ছেলে প্রস্তাবিত মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা ইব্রাহীম আলী বলেন, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হবে। অর্থ সংগ্রহ ও আত্মসাতের বিষয়টি মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।
কৃষ্ণনগর ইউপি চেয়ারম্যান এ.কে.এম বাশারুল আলম বাদশা বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার নামে ওই পরিবার প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে। এলাকাবাসীর কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তারা নিজেরা কোটিপতি হচ্ছে। এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা না করে আর কোনো ওয়াজ মাহফিল তারা আয়োজন করতে পারবেন না।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা ইউএনও ইশরাত জাহান বলেন, এখনও তাঁর কাছে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ম দ র স র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি মাসেই আইএমএফের ঋণের কিস্তির বিষয়ে সমঝোতা, জুনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে একইসঙ্গে কর ব্যবস্থা সংস্কার, বিনিময় হারে নমনীয়তা এবং আর্থিক খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনার সুপারিশও করেছে সংস্থাটি। আইএমএফ জানিয়েছে, চলতি এপ্রিল মাসেই ঋণের তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির বিষয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে আগামী জুনে বোর্ড সভায়।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ঢাকায় ১২ দিনের সফর শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন আইএমএফ মিশনের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও। তিনি জানান, ৬ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত সফরে সংস্থার তিনটি ঋণ কর্মসূচি—এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ)—এর আওতায় তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার অংশ হিসেবে নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
আইএমএফ-এর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচি রয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত তিন কিস্তিতে ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির আওতায় বাকি রয়েছে আরো ২৩৯ কোটি ডলার। সংস্থাটি আশা করছে, আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠেয় আইএমএফ-ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বসন্তকালীন বৈঠকে ঋণ কিস্তির বিষয়ে একটি সমঝোতা চূড়ান্ত হবে।
আইএমএফ বলছে, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশকে আরো নীতিগত কড়াকড়ি অবলম্বন করতে হবে। মূল্যস্ফীতি এখনও উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে। ২০২৪ সালের মার্চে তা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, যা এখনও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৫-৬ শতাংশের অনেক বেশি। সংস্থাটি জানায়, ২০২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩.৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যেখানে গত বছর একই সময়ে ছিল ৫.১ শতাংশ। ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং বিনিয়োগ কমে যাওয়াকেও অর্থনীতির দুর্বলতার কারণ হিসেবে তুলে ধরে আইএমএফ।
সংস্থাটির মতে, রাজস্ব আয় বাড়াতে একটি স্বচ্ছ, সহজ এবং ন্যায্য কর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। কর-জিডিপি অনুপাত এখনও অনেক কম। ভর্তুকিনির্ভর করছাড় কমানোরও তাগিদ দিয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি দুর্বল ব্যাংকগুলো পুনর্গঠন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা জোরদার এবং ঝুঁকিভিত্তিক তদারকির ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে তারা।
বিনিময় হারের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘ক্রলিং পেগ’ ব্যবস্থায় বর্তমানে ডলারের বিনিময় হার ১২২ টাকায় স্থিতিশীল রয়েছে। এ পদ্ধতি চালু থাকায় হঠাৎ করে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি নেই। সংস্থাটির মতে, আরও নমনীয় বিনিময় হার প্রয়োগ করা হলে মূল্য প্রতিযোগিতা বজায় থাকবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পুনর্গঠিত হবে এবং অর্থনীতি বাহ্যিক চাপ মোকাবিলায় আরো সক্ষম হবে।
এ সফরে আইএমএফ প্রতিনিধিদল অর্থ উপদেষ্টা, অর্থসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাতের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পর প্রথম কিস্তি হিসেবে বাংলাদেশ ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে আসে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে আসে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার। সরকার আশা করছে, আগামী জুনেই চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড় হবে।
ঢাকা/এনএফ/এনএইচ