একটি সেতু হলেই দুঃখ ঘুচবে ৫০ হাজার চরবাসীর
Published: 17th, April 2025 GMT
রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে সেতুর অভাবে দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন দুই ইউনিয়নের অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দা। কয়েক দশক ধরে মরা পদ্মা নদী পারাপারে খেয়া নৌকাই ভরসা দৌলতদিয়া ও উজান চরবাসীর। ঝড়-বৃষ্টিসহ নানা কারণে মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে খেয়া নৌকার চলাচল। এতে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায় চরের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর জেলার সীমানাঘেঁষে গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়ন। পদ্মাপারের বিস্তীর্ণ এ ইউনিয়নে নানা ধরনের ফসল উৎপাদনের আদর্শ অঞ্চল। পরিবহন সমস্যায় উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক। এ ইউনিয়নের একটি গ্রাম দড়াপের ডাঙ্গী। মরা পদ্মা নদী পার হলেই স্কুল-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। তবুও একটি সেতুর কারণে দড়াপের ডাঙ্গী গ্রামের অসংখ্য শিশু-কিশোরের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কেউ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নিতে ৭-৮ কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। এখানে একটি সেতু নির্মাণ হলে উজানচর ও দৌলতদিয়া ইউনিয়নবাসী সরাসরি উপকৃত হবেন। ফরিদপুর জেলা শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জামতলার হাট, মমিনখার হাটসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে দুই ইউনিয়নের চর এলাকার বাসিন্দাদের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। বদলে যাবে এলাকার কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসেবাসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে উজানচর ইউনিয়নের দড়াপের ডাঙ্গী এলাকায় ২৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তাতে সাড়া মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.
জামতলা দাখিল মাদ্রাসার ছাত্রী ইনসানা আক্তার ও লামিয়া আক্তার জানায়, তাদের মতো চর এলাকার কয়েকশ ছাত্রছাত্রী প্রতিদিন খেয়া নৌকা পাড়ি দিয়ে স্কুল-মাদ্রাসায় পড়ালেখা করতে যায়। সময়মতো খেয়া ধরতে না পারলে ঘাটে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়। আবহাওয়া খারাপ হলে স্কুলেও যাওয়া হয় না। এতে তাদের স্বাভাবিক পড়াশোনা ব্যাহত হয়।
খেয়াঘাটের মাঝি শাকিল শেখ জানান, ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াও সামান্য বাতাসে নৌকা পারাপার বন্ধ থাকে। এ ছাড়া মরা পদ্মা নদীতে থাকা ঘন কচুরিপানার কারণে চলাচলের পথ বন্ধ হয়েও মাঝেমধ্যে পারাপার বন্ধ হয়ে যায়। এখন প্রায় সব জায়গায় ব্রিজ হয়ে গেছে। শুধু এখানে হলো না। চরবাসীর দুর্দশা খুব কাছ থেকে দেখতে পাই। এখানে ব্রিজটি হলে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগ থেকে বেঁচে যেত।
গোয়ালন্দ উপজেলা প্রকৌশলী ফয়সাল জাহাঙ্গীর স্বপ্নিল বলেন, মরা পদ্মা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ হওয়াটা খুব জরুরি। সেখানে এতদিনেও সেতু না হওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক। জনসাধারণের ভোগান্তি লাঘবে বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন।
গোয়ালন্দের ইউএনও মো. নাহিদুর রহমান জানান, চর এলাকার মানুষের সুবিধার্থে দরাপের ডাঙ্গী এলাকায় সেতু নির্মাণের বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়াসহ সব ধরনের চেষ্টা করা হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার চেষ্টায় বিএনপি, লক্ষ্য ডিসেম্বরে নির্বাচন
এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনার প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিএনপি। এতে যুগপৎ কর্মসূচির শরিকেরা ছাড়াও বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, এমন রাজনৈতিক দল, জোট ও সংগঠনগুলোকেও অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা থাকবে বলে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্র থেকে জানা গেছে।
এই উদ্যোগের বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে আজ শনিবার বিকেলে ১২–দলীয় জোট ও সন্ধ্যায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে বসছে বিএনপি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মতবিনিময় শেষে দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট করে দলটির কেউ কিছু বলছেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।এ বিষয়ে গতকাল শুক্রবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির চারজন নেতার সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা বলেছেন, বিগত ফ্যাসিবাদবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যারা অংশ নিয়েছে, এমন রাজনৈতিক সব দলের সঙ্গেই তাঁরা পর্যায়ক্রমে আলোচনা করবেন।
সুনির্দিষ্ট করে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে এখনই বসার সিদ্ধান্ত নেই।
তবে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোকে একমতে আনতে বিএনপির এই উদ্যোগে জামায়াতে ইসলামী ও গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থাকছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।আরেকজন বলেছেন, আলোচনা থেকে কাউকে বাদ দেওয়ার কথা আসেনি। এ ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকের চিন্তা রয়েছে।
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমরা কথা বলব কি না, দেখতে হবে। কারণ, তাদের দুজন সরকারে আছে। এ অবস্থায় তাদের সঙ্গে কথা বলা ঠিক হবে কি না, ভাবতে হবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেকজন সদস্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
আরও পড়ুনআমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই: মির্জা ফখরুল১৬ এপ্রিল ২০২৫বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানায়, তারা ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন চায়। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে সরকারের ওপর জোরালো চাপ তৈরি করতে চাইছে বিএনপি। সে জন্য বিভিন্ন দলের সঙ্গে মতবিনিময় শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এর আগে থেকেই বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে মতবিনিময় করে আসছেন। এখন নতুন করে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, ১৬ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের পর। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাসচিব তো বলেই দিয়েছেন, আমরা সন্তুষ্ট নই। এখন আমরা কী করব, শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, যা বিএনপি মেনে নেয়নি। যে কারণে বৈঠকের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছেন, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে একেবারেই সন্তুষ্ট নন। তাঁদের ‘কাটঅফ টাইম’ ডিসেম্বর।স্থায়ী কমিটির বৈঠক–সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের দিক থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তা দু-এক মাস পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ আসে। কারণ, এখনই সরকারের বিরুদ্ধে মাঠের কর্মসূচি শুরু বা বড় আন্দোলনে যাওয়ার মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি বলে মনে করছেন নীতিনির্ধারণী নেতাদের কেউ কেউ। ফলে সে ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হওয়া পর্যন্ত সরকারকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কথাও এসেছে।
আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীওই একই সূত্র জানিয়েছে, স্থায়ী কমিটির আলোচনায় জামায়াতে ইসলামীর প্রসঙ্গও এসেছে। জামায়াতের আমির আগামী বছরের রোজার আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন না বিএনপির নেতারা। তাঁদের যুক্তি, জামায়াত যদি এ জায়গায় স্থির থাকে, তাতে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে এক-দেড় মাস পেছালে খুব একটা আপত্তি থাকবে না। তবে সেটা অবশ্যই জুনে নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কী আলোচনা হয়েছে, বিষয়গুলো আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের সঙ্গে শেয়ার করব। এরপর সবার মতামত নিয়ে আমরা করণীয় ঠিক করব। আমরা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের বাইরেও যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিল, তাদের সঙ্গেও কথা বলব।’