প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবালের ফ্রিজ করা অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়ায় ব্যাংকটিকে বড় অঙ্কের জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ইকবালের ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে বিষয়টি ধরা পড়ার পর সমপরিমাণ ১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার ডলার সমপরিমাণ প্রায় ৩৭ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বুধবার বিএফআইইউ এ-সংক্রান্ত চিঠি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে।

বিএফআইইউ গত নভেম্বরে এইচবিএম ইকবাল, তার বর্তমান স্ত্রী অভিনেত্রী আঞ্জুমান আরা শিল্পী এবং তিন সন্তান মঈন উদ্দিন ইকবাল, ইমরান ইকবাল ও নওরীন ইকবালের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে। পাশাপাশি তাদের একক মালিকানায় কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে সে হিসাবও ফ্রিজ করতে বলা হয়। এই নির্দেশনা অমান্য করে ব্যক্তি হিসাব থেকে ১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং ৩০ হাজার ডলার সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক। যে কারণে ব্যাংকটিকে সমপরিমাণ জরিমানা করা হয়েছে।

ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ আশীর্বাদে এইচবিএম ইকবাল পরিবারই এখনও প্রিমিয়ার ব্যাংক চালাচ্ছে। বিভিন্ন জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকার পরও অদৃশ্য কারণে সরকার পতনের পর প্রিমিয়ার ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন চেয়ারম্যান এইচবিএম ইকবালের ছেলে মোহাম্মদ ইমরান ইকবাল। 

গত ৫ আগস্টের পর থেকে এইচবিএম ইকবাল পলাতক। বিদ্যমান নিয়মে টানা তিন মাস পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে অনুপস্থিত থাকলে পদ হারাবেন। এ রকম ঝুঁকির কারণে গত ১২ জানুয়ারি তিনি এবং তার আরেক ছেলে ব্যাংকটির ভাইস চেয়ারম্যান মইন ইকবাল ই-মেইল যোগে পদত্যাগপত্র পাঠান। এরপর ১৪ জানুয়ারি পরিচালনা পর্ষদের সভায় তা অনুমোদন হয়। এছাড়া এইচবিএম ইকবালের পছন্দের অন্য পরিচালকরা বহাল আছেন। ইকবাল পরিবারের একক আধিপত্যের কারণে ব্যাংকের কাছে বিভিন্ন ভবন ভাড়া দিয়ে কয়েকগুণ টাকা নেওয়া, বিভিন্ন কমিশন বাণিজ্যসহ নানা উপায়ে অনৈতিক সুবিধা অব্যাহত আছে।

জানা যায়, এইচবিএম ইকবাল প্রিমিয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান। গ্রুপটির অধীনে পাঁচ তারকা হোটেল, রেস্টুরেন্ট, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে গুলশানে হোটেল রেনেসন্স, হিলটন হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এবং রয়াল ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়েছে। নানা অনিয়ম হয়েছে এরকম ১৫টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিগত সরকারের সময়ে প্রিমিয়ার ব্যাংক বিভিন্ন অনিয়মের কারণে আলোচনায় ছিল। ১৯৯৯ সালে ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তিনি চেয়ারম্যানের পদ আঁকড়ে রাখেন। এবারই প্রথম তার ছেলেকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইকব ল র ইকব ল প ন ইকব ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

জব্দ করা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর পরিবার এবং ১০ শিল্পগোষ্ঠীর প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করেছে আদালত। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা তাঁদের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে ও ৮৪ জনকে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে থাকা তাঁদের কিছু সম্পদও জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদুক) আবেদনে তাদের অর্থ ও সম্পদ জব্দ করা হয়। এসব অর্থের মধ্যে বিদেশি মুদ্রা ও বিদেশে থাকা সম্পদও রয়েছে।

বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তসংস্থা টাস্কফোর্সের সভায় এসব তথ্য জানানো হয়। এসব ঘটনায় দ্রুততম সময়ে মামলা করে তা নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয় সভায়। এরপর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে গতকাল দুপুরে আন্তসংস্থা টাস্কফোর্সের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শেখ পরিবার ও ১০ শিল্পগোষ্ঠীর অনিয়ম ও অর্থ পাচার নিয়ে আলোচনা হয়। শেখ হাসিনার পরিবারের বাইরে যে ১০ শিল্পগোষ্ঠীর আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্ত চলছে, সেগুলো হলো এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। এসব গ্রুপের পাশাপাশি গ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তাঁদের কয়েকজন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন।

অর্থ পাচারের ঘটনা তদন্তে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এরপরই এসব বিষয়ে জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও দুদকের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ তদন্ত দল। সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। আর এ কাজের জন্য পুনর্গঠন করা হয় আন্তসংস্থা টাস্কফোর্স।

এই টাস্কফোর্সের কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ বা সম্পদ চিহ্নিত করা। পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে হওয়া মামলাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত নিষ্পত্তি করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে তা দূর করা। বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নেওয়া। জব্দ বা উদ্ধার সম্পদের ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দেশি–বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও তথ্য বিনিময় এবং পাচার করা সম্পদ উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ সমন্বয় সাধন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শেখ পরিবার ও দেশের ১০ শিল্পগোষ্ঠীর বিষয়ে বিএফআইইউ নিজে ও বিভিন্ন দেশের এফআইইউ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে দেশের ব্যাংকগুলো থেকে নামে-বেনামে এসব শিল্পগোষ্ঠী ও ব্যক্তিরা কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, এসব অর্থের গতিপথ, দেশের বাইরে কোথায় কত সম্পদ গড়ে তুলেছেন ও বাইরের ব্যাংকে কত অর্থ জমা আছে। এ ছাড়া ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতারণা, জালিয়াতির তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কর ফাঁকি, পাচার করা অর্থের গন্তব্য—এসব অনিয়ম কোন আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য, তা নির্ধারণ করছে দুদক, এনবিআর ও সিআইডি। ইতিমধ্যে বেশির ভাগ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। আরও মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, তদন্তে শেখ পরিবার ও আটটি শিল্পগোষ্ঠীর বিদেশে সম্পদের খোঁজ মিলেছে। সংশ্লিষ্ট দেশের এফআইইউ এ নিয়ে বাংলাদেশকে তথ্য ও নথিপত্র দিয়েছে। এখন দেশে মামলার মাধ্যমে এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেওয়া হচ্ছে। বিদেশে থাকা সম্পদ জব্দে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালতে মামলা করা হবে। এরপর সে দেশ থেকে রায় হলে সম্পদ জব্দ হবে।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে পাচার করা অর্থ উদ্ধারে বিশেষ অধ্যাদেশ তৈরির কাজ চলছে। অধ্যাদেশ তৈরি হলে সেটির আলোকে বিদেশে চিহ্নিত হওয়া সম্পদ জব্দ ও তা আইনি পদ্ধতিতে ফেরত আনতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে। কমিশন ভিত্তিতে এই কাজ পাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। এরপর অর্থ ফেরত আনতে কয়েক বছর সময় লাগবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ থেকে কাউকে সম্পদ কেনার জন্য বিদেশে অর্থ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফলে যাঁরা সম্পদ গড়েছেন, সবাই অপরাধ করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সবুজ প্রকৃতির অপরিহার্য প্রাণী 
  • মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব স্থগিত
  • জব্দ হিসাব থেকে টাকা তুললেন এইচ বি এম ইকবাল, প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানা
  • জব্দ করা হয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার