অপারেশন থিয়েটার থেকে কাপড়ে মোড়ানো শিশুটিকে বের করতেই নার্সের কোল থেকে দ্রুত নিজের কোলে তুলে নিলেন সোহাগ হোসেন। মনে হলো, তিনি এর জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় ছিলেন। কোলে নিয়ে শিশুটিকে আদর করতে থাকেন সোহাগ। এরপর তার কাছ থেকে একে একে নানি, খালাসহ উপস্থিত অন্য স্বজনরা কোলে নেন। সবার মুখে হাসি। সবাই খুব উচ্ছ্বসিত। সবার এত খুশি হওয়ার কারণ, এটা সোহাগ হোসেন ও সুমি আক্তারের প্রথম সন্তান। তার ওপর পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়ায় তাদের আনন্দ যেন একটু বেশিই।

জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা গ্রামের আসবাব ব্যবসায়ী সোহাগ। গত সোমবার বাংলা নববর্ষের প্রথম প্রহরে জয়পুরহাট শহরের আমতলী এলাকার বেসরকারি হাসপাতাল ফ্যামেলি কেয়ারে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে কন্যাসন্তান জন্ম দিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সুমি। সারা শহর যখন বৈশাখের আমেজে মাতোয়ারা, তখন সন্তানকে কোলে পেয়ে আত্মহারা এই দম্পতি।

তাঁরা জানান, পারিবারিকভাবে বছর খানেক আগে সোহাগ ও সুমির বিয়ে হয়। এর দেড়-দুই মাসের মাথায় সুমির গর্ভে সন্তান আসে। তখন থেকেই এই দম্পতি প্রহর গুনছিলেন– কখন তাঁরা সন্তানের মুখ দেখবেন। এলাকার রীতি অনুযায়ী প্রত্যক নারী প্রথম সন্তান জন্ম নেওয়ার দেড়-দুই মাস আগে বাবার বাড়িতে যান। সে অনুযায়ী গত রমজান মাসে বাবার বাড়িতে যান সুমি। চিকিৎসকের ধারণা অনুযায়ী তাঁর সন্তান জন্ম নেওয়ার কথা আরও এক সপ্তাহ পর। কিন্তু এর আগেই সোমবার রাত দেড়টার দিকে হঠাৎ সুমির প্রসব ব্যথা শুরু হয়। তখন তাঁর স্বামী সোহাগ কাছে ছিলেন না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন রাতেই তাঁকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে আমতলী এলাকায় ফ্যামেলি কেয়ারে নিয়ে যান। সোহাগ খবর পেয়ে ছুটে যান সেখানে। তখন থেকে চিকিৎসকরা নরমালে প্রসব করানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে সকাল ৬টায় সিজারিয়ান অপারেশন করেন। এর মাধ্যমে পহেলা বৈশাখে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয় সোহাগ-সুমির। সেই সঙ্গে বিশেষ দিনটি আরও স্মরণীয় হয়ে থাকল।

সুমি আক্তার বলেন, ‘হঠাৎ করে ব্যথা ওঠায় খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হচ্ছিল আর বাঁচবো না। এ সময় আমার স্বামীও কাছে ছিল না। তাই মনে হচ্ছিল, এই রাতই আমার শেষ রাত। স্বামী-সন্তানের মুখ আর দেখতে পাবো না। গভীর রাতে বাবা-মা কীভাবে হাসপাতালে নিয়ে গেছে তাও ঠিকঠাক বলতে পারি না। ওই মুহূর্তে অনেক বার আল্লাহকে স্মরণ করেছি। একবার দেখি আমার স্বামী কাছেই দাঁড়িয়ে আছে। তখন মনে শক্তি পাই। ভাবলাম– এখন মারা গেলেও অন্তত সন্তানের বাবা ওর দায়িত্ব নেবে। ওকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে বড় করে তুলবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আগে থেকেই দু’জন মিলে সন্তানের নাম রেখেছি সিদরাতুল মুনতাহা। সাত দিনের মাথায় এই নামেই আকিকা দেওয়া হবে। আমার সন্তান বড় হয়ে কোরাআনের হাফেজা হবে। দ্বীন শিক্ষা দেবে। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।’

পহেলা বৈশাখে সন্তানের জন্ম হবে, এ কথা কখনও ভাবেননি সুমি। তিনি বলেন, ‘ডাক্তার বলেছিল, এ মাসের ২১ অথবা ২২ তারিখে সন্তান হবে। কিন্তু তার আগে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনেই আমাদের সন্তান পৃথিবীতে এলো। তবে যেটা হয়েছে মন্দ না। আর যাই হউক অন্তত সন্তানের জন্ম তারিখ সব সময় মনে থাকবে!’

সুমির মা আনজু আরা বেগম বলেন, ‘সম্ভাব্য তারিখের আগে সিজার করে সন্তান প্রসব করাতে হবে, এটা নিয়ে ভয়েই ছিলাম। তবে ডাক্তার ও নার্সদের আন্তরিকতায় সব ভয় কেটে গেছে। নাতনির মুখ দেখে সব ভুল গেছি।’

শিশুটির ছোট খালা হাবিবা আক্তার বলেন, ‘বাচ্চা ঠিক আমার বড় আপার মতো হয়েছে। ওর বাবা-মা আগেই নাম ঠিক করে রেখেছে। তা না হলে আমি ওর নাম বৈশাখী রাখার জন্য দুলাভাইকে বলতাম। তবে আমি ওকে বৈশাখী বলেই ডাকবো।’

সোহাগ হোসেন বলেন, ‘বৈশাখ কী, আর চৈত্র কী, ছেলে কী আর মেয়ে কী, সন্তান তো সন্তানই। সন্তানের মুখ দেখে খুবই ভালো লাগছে। দুই দিন আগেও কাজের চাপে বাড়িতে যাওয়া ভুলে যেতাম। কিন্তু এখন সন্তানকে রেখে কোথায় যেতে মন চাইছে না।’

সুমির সিজারিয়ান অপারেশন করেন জয়পুরহাট ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক জান্নাতুল ফেরদৌসী শাপলা। তিনি বলেন, ‘এই রোগী রোববার রাত দেড়টায় ভর্তি হন। সব স্বাভাবিক থাকায় তখন থেকে নরমালে প্রসব করার চেষ্টা করি। পরে ভোর ৬টায় সিজার করে শিশুটি জন্ম নেয়। তার ওজন ৩ কেজি ২০০ গ্রাম। মা ও মেয়ে দু’জনই সুস্থ আছে। নববর্ষের প্রথম দিনে প্রথম এই শিশুর জন্ম হওয়ায় হাসপাতালের পক্ষ থেকে শিশুটির বাবা, নানি ও খালাকে মিষ্টি খাওয়ানো হয়েছে।’

হাসপাতালের পরিচালক জামাল উদ্দীন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি নরমালে প্রসব করানোর। তবে তা সম্ভব হয়নি। ভোর ৬টায় পরিবারের অনুমতি নিয়ে সিজার করা হয়। নববর্ষের প্রথম প্রহরে প্রথম শিশুটি জন্ম নেওয়ায় সবার নজর কেড়েছে। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: নববর ষ র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষের ২দিন পর শোভাযাত্রা, অংশ না নেওয়ায় খাবার বন্ধ করলেন প্রাধ্যক্ষ

'এবারের বৈশাখের স্বপ্ন-শপথ, আগামীর বৈষম্যের বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে দুইদিন পর আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়েছে।

এদিকে, এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ না করায় খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন ডাইনিংয়ে খাবার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দুপুরের খাবার নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি করেন তারা। 

বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলা মঞ্চে এসে শেষ হয়।

আরো পড়ুন:

কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের

কুয়েটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নের

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মনজুরুল হক, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, আবাসিক হল ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন। 

শোভাযাত্রায় শিক্ষার্থীরা বর-কনে, কৃষক, জমিদার, কুলি, চাষী, জেলে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, জাতীয় কবি নজরুল, আবু সাইস-মুগ্ধসহ ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের দৃষ্টান্ত, ঐতিহ্যবাহী পালকি, ঢেঁকি, গরু ও মহিষের গাড়ি, সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবিসহ নানা চরিত্র উপস্থাপন করেন।

এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।

নববর্ষের দুইদিন পর শোভাযাত্রার বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম এয়াকুব আলী বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ক্যাম্পাস বন্ধের দিন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত খুব একটা হয় না। যেহেতু আমাদের মূল আয়োজন শিক্ষার্থীদের নিয়েই, সেহেতু তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস খোলার দিন আয়োজন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রোগ্রামটি প্রাণবন্ত হয়েছে।” 

নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। আজকের শোভাযাত্রা আমাদের জন্য আনন্দের মেলা। এটি বাঙালি ও বাংলাদেশি সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার অংশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ঐক্য আমরা গড়েছি, সেই ঐক্য হবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি। আমরা এই ঐক্য নিয়ে এগিয়ে যাব শিক্ষা ও গবেষণার পথে।”

এদিকে খালেদা জিয়া হল ডাইনিংয়ের খাবার বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে হলটিতে দুপুরে পান্তাভাত, ভর্তা ও রুই মাছ ভাজির বিশেষ আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি র‍্যালিরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আশানুরূপ সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় প্রাধ্যক্ষ হতাশ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুপুরের খাবার পরিবেশন বন্ধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে রাত ৯টায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মিটিং ডাকার নির্দেশ দেন। এটা খুবই দুঃখজনক।

শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। এজন্য অনতিবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।

না প্রকাশে অনিচ্ছুক হল ডাইনিংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ২টা থেকে রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়। দুপুরের আগে সবকিছু প্রায় প্রস্তুত থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রাধ্যক্ষ স্যার রান্না বন্ধ করতে বলেন।”

অভিযোগের বিষয়ে খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ জালাল উদ্দীন বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি বছরের ন্যায় হল থেকেও আমরা অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। একটা হলে ৪০০ মেয়ে আছে, অথচ সেখানে ৬/৭ জন উপস্থিত হয়। আমাদের ব্যান্ড পার্টি ছিলো, এই সাতজন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় পরিকল্পনা বাদ দেই। আর অল্প সময়ের মধ্যে ডাইনিংয়ের খাবারের ব্যবস্থা করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। তাই সাড়ে ১১টার দিকে নোটিশে জানিয়ে দেওয়া হয়. দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে না।  

শিক্ষার্থীদের পদত্যাগ দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে ইবি প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।”

ঢাকা/তানিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউসিবি বৈশাখী ফেস্টিভ্যালের বর্ণিল উদ্বোধন
  • গোপালগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী চড়ক ঘুল্লী অনুষ্ঠিত
  • ডিসি হিলে নববর্ষের অনুষ্ঠান হলো না কেন
  • মানুষের মত মানুষ হিসেবে বড় করে তুলবো
  • ‘নববর্ষে আসা মেয়েটি ঘুরিয়ে দিতে পারে ভাগ্যের চাকা’ 
  • ‘এই নিন আপনার পহেলা বৈশাখ’
  • হা-ডু-ডু খেলে দর্শক মাতালেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা
  • নববর্ষের ২দিন পর শোভাযাত্রা, অংশ না নেওয়ায় খাবার বন্ধ করলেন প্রাধ্যক্ষ
  • মেয়েকে হাফেজ বানাতে চান বাবা