‘নববর্ষে আসা মেয়েটি ঘুরিয়ে দিতে পারে ভাগ্যের চাকা’
Published: 16th, April 2025 GMT
বৈশাখের প্রথম দিন। সন্তান আসবে ঘরে। কথাটি আগেই বলেছিলেন চিকিৎসক। এ জন্যই শাহাদাত হোসেন ও রিনা আক্তারের মনে বাড়তি আনন্দ। তর সইছিল না যেন তাদের! হ্যাঁ, ঠিকই বৈশাখের নতুন সূর্য হয়ে তাদের কোল আলোকিত করে সন্তান।
চরম এক টানাপোড়েনের সংসারে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে তৃতীয় সন্তানের আগমনে তাদের খুশি বেড়ে যায় বহুগুণে। সকাল বেলায় তাদের মেয়ের মিষ্টিমুখটা দেখে চিকিৎসক এবং দু’জন নার্স কোলে নেওয়ার পর হাসপাতালের তালিকায় যখন নামটি দেবেন তখন তারা বলেন, ‘এই যে শুনেন মা-বাপ দু’জন। আজ বাংলা নববর্ষ এবং পহেলা বৈশাখ। তাই মেয়ের নামটি আমরা তালিকায় ‘বৈশাখী’ দিয়ে দিলাম। খুশি তো?’ শাহাদাত আর রিনা বেগম মাথা নেড়ে সায় দিলেন। তবে চিকিৎসক আবার সঙ্গে সঙ্গে একটু স্পষ্ট করে বলেন, ‘ইচ্ছা করলে আপনারা এই বিশেষ দিনের নামের সঙ্গে নিজেদের পছন্দের আরও নাম জুড়ে দিতে পারেন।’
নবজাতকের বাবা শাহাদাত হোসেন পেশায় রিকশাচালক। গত আট বছর ধরে অভাব-অনটনের তাড়নায় দুই ছেলে- পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র রহমত আর ছোট ছেলে মাদ্রাসায় পড়ুয়া ইসমাইলকে নিয়ে চলে আসেন চাঁদপুর জেলা শহরের রহমতপুর কলোনিতে। এখানে একটা সেমিপাকা ছোট এক রুমের ভাড়া বাসা নেন। তার মূল বাড়ি ফরিদগঞ্জ উপজেলার সকদী রামপুর গ্রামে। স্ত্রী রিনা আক্তারের বাড়িও একই উপজেলার পাশের গ্রামে। শহরে এসে শাহাদাত রিকশা নিয়ে ভাড়ায় তা চালান। ৩০০ টাকা ভাড়া শোধ করেন আর এক-দেড়শ টাকায় চলে সংসার।
পহেলা বৈশাখে জন্ম নেওয়া মেয়েকে নিয়ে কথা হয় বাবা শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাত ৩টায় স্ত্রী রিনার প্রসব ব্যথা ওঠে। ক্রমেই ব্যথা বাড়তে থাকলে একটা অটো ডেকে আমার এক ভাবিসহ বাসা থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সরকারি মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে (যেটি মাতৃমঙ্গল নামে পরিচিত) নিয়া আসি। সঙ্গে সঙ্গেই দারোয়ান হাসপাতালের গেইট খুইলা দেয় এবং নার্স এসে আমার স্ত্রীকে বেডে দেয়। পরপরই ডিউটি ডাক্তার আসেন। তারা ভাবিকে বললেন, চিন্তা করবেন না, সবকিছু ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ। উনার নরমাল ডেলিভারিই হবে এবং মায়ের গর্ভের সন্তান ভালো আছে।’
শাহাদাত বলেন, ‘আমি হাসপাতালের বাহিরে দাঁড়ানো থাকতে থাকতেই ভোর রাইত শেষ হইয়া চারদিক ফর্সা হইতাছে দেখতাছি। এক সময় ভেতর থেইকা দারোয়ান আইসা বলল– আসেন ভেতরে। আপনে মেয়ের বাপ হইছেন। তখন আল্লার কাছে শুকরিয়া আদায় করলাম। ডাক্তার এবং নার্স বলল, সকাল সাড়ে ৮টায় আমরা আপনার সন্তান প্রসব করিয়েছি। একটা স্যালাইন আর সামান্য কিছু ওষুধ শেষ হলেই ১০টার মধ্যেই বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডাক্তার ও নার্সরা প্রথমে আমার ভাবির কোলে দেয় আমার মেয়েকে। পরে তার মায়ের কাছে। এ সময় সন্তানটির পরনে ছিল একটা লুঙ্গি কাটা আর ছেঁড়া কাঁথা মোড়ানো। সকাল ১০টার একটু পরে একটা অটোরিকশায় বাসায় তাদের পাঠাইলেও আমি গেলাম না। কারণ আমি আমার একমাত্র মাইয়াডার লেইগা দুইডা পাতলা জামা, মশারি আর ওষুধ কিনার লাইগা কালীবাড়ি এলাকায় গেলাম। পরে কিন্না বাসায় ফিরা আইলাম।
‘একটা ভালো খবর হইলো কী জানেন স্যার, ফরিদগঞ্জের ডাক্তার পরেশ আর এই কেন্দ্রের ডাক্তাররা বলছে, আমার সন্তানের জন্ম হবে ১৪ এপ্রিল মানে বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ। একদম ঠিক ঠিক মেয়েটা সেই দিনই হইলো।’
মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের চিকিৎসক মেহেদী আল মাসুদ বলেন, ‘নববর্ষের প্রথম প্রহরের রোগীই রিনা আক্তার। তার চিকিৎসার কোনোরূপ ত্রুটিই আমরা করিনি।’
২০১৩ সালে বিয়ে হয়েছে এই দম্পতির। অভাব-অনটনের সঙ্গেই তাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে।
শাহাদাত বলেন, ‘একটা ভালো কোনো কাজ পাইলে রিকশা চালানো ছাইরা দিতাম। অনেক কষ্ট হয়। দুই ছেলে সন্তানের পর নববর্ষে আসা মেয়েটি ঘুরিয়ে দিতে পারে ভাগ্যের চাকা। মেয়ে আমার সুস্থ থাক বাইচা থাক– এই দোয়া চাই সবার কাছে আর মা রিনা বেগমও যেন ভালো থাকে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক নববর ষ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষের ২দিন পর শোভাযাত্রা, অংশ না নেওয়ায় খাবার বন্ধ করলেন প্রাধ্যক্ষ
'এবারের বৈশাখের স্বপ্ন-শপথ, আগামীর বৈষম্যের বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে দুইদিন পর আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়েছে।
এদিকে, এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ না করায় খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন ডাইনিংয়ে খাবার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দুপুরের খাবার নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি করেন তারা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলা মঞ্চে এসে শেষ হয়।
আরো পড়ুন:
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
কুয়েটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নের
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মনজুরুল হক, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, আবাসিক হল ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রায় শিক্ষার্থীরা বর-কনে, কৃষক, জমিদার, কুলি, চাষী, জেলে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, জাতীয় কবি নজরুল, আবু সাইস-মুগ্ধসহ ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের দৃষ্টান্ত, ঐতিহ্যবাহী পালকি, ঢেঁকি, গরু ও মহিষের গাড়ি, সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবিসহ নানা চরিত্র উপস্থাপন করেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
নববর্ষের দুইদিন পর শোভাযাত্রার বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম এয়াকুব আলী বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ক্যাম্পাস বন্ধের দিন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত খুব একটা হয় না। যেহেতু আমাদের মূল আয়োজন শিক্ষার্থীদের নিয়েই, সেহেতু তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস খোলার দিন আয়োজন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রোগ্রামটি প্রাণবন্ত হয়েছে।”
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। আজকের শোভাযাত্রা আমাদের জন্য আনন্দের মেলা। এটি বাঙালি ও বাংলাদেশি সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার অংশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ঐক্য আমরা গড়েছি, সেই ঐক্য হবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি। আমরা এই ঐক্য নিয়ে এগিয়ে যাব শিক্ষা ও গবেষণার পথে।”
এদিকে খালেদা জিয়া হল ডাইনিংয়ের খাবার বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে হলটিতে দুপুরে পান্তাভাত, ভর্তা ও রুই মাছ ভাজির বিশেষ আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি র্যালিরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আশানুরূপ সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় প্রাধ্যক্ষ হতাশ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুপুরের খাবার পরিবেশন বন্ধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে রাত ৯টায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মিটিং ডাকার নির্দেশ দেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। এজন্য অনতিবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক হল ডাইনিংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ২টা থেকে রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়। দুপুরের আগে সবকিছু প্রায় প্রস্তুত থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রাধ্যক্ষ স্যার রান্না বন্ধ করতে বলেন।”
অভিযোগের বিষয়ে খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ জালাল উদ্দীন বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি বছরের ন্যায় হল থেকেও আমরা অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। একটা হলে ৪০০ মেয়ে আছে, অথচ সেখানে ৬/৭ জন উপস্থিত হয়। আমাদের ব্যান্ড পার্টি ছিলো, এই সাতজন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় পরিকল্পনা বাদ দেই। আর অল্প সময়ের মধ্যে ডাইনিংয়ের খাবারের ব্যবস্থা করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। তাই সাড়ে ১১টার দিকে নোটিশে জানিয়ে দেওয়া হয়. দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে না।
শিক্ষার্থীদের পদত্যাগ দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে ইবি প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী