হা-ডু-ডু খেলে দর্শক মাতালেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা
Published: 16th, April 2025 GMT
নববর্ষ উপলক্ষে হা-ডু-ডু খেললেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীরা। টাঙ্গাইলের তোরাপগঞ্জ স্কুল মাঠে মঙ্গলবার এই খেলার আয়োজন করে সদর উপজেলার বাগবাড়ি চৌবাড়িয়া যুব সমাজ। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হা-ডু-ডু খেলার কথা শুনে ভিড় জমান দর্শকরা। করতালি দিয়ে উৎসাহ যোগান তারা।
যারা খেলায় অংশ নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ভিক্ষুক। নেই কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। হা-ডু-ডু অথবা টক টক শব্দ শুনেই প্রতিপক্ষকে ঝাঁপটে ধরে নিজেদের সীমার মধ্যে আটকে রাখার চেষ্টা করেন। টাঙ্গাইলে অনেক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি মানুষ আছেন যারা তাদের খেলার খবর শুনলেই ছুটে যান মাঠে। তাদের অনেকেই শারিরিকভাবে খুবই শক্তিশালী। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড় দম দিলেই বুঝতে পারেন তারা। রেফারি তাদের শুধু ধারণা দিয়ে দেন যে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে নিজেদের সীমানার মধ্যে সাতজনে মিলে ধরে রাখতে পারলে দুই পয়েন্ট এবং দম দিয়ে প্রতিপক্ষের কাউকে ছুয়ে আসতে পারলে এক পয়েন্ট। এই ধারণার ওপর ভিত্তি করেই খেলে থাকেন তারা।
টাঙ্গাইল জেলা কাবাডি দলের কোচ মোস্তফা কামাল বলেন, এই খেলোয়াড়দের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কোথাও খেলার কথা শুনলেই তারা ছুটে যান খেলেতে। খেলার আগে তাদের মাঠের দৈর্ঘ-প্রস্থ নিয়ে ধারণা দেওয়া হয়। মাঝামাঝি একটি সীমানা ও বিভিন্ন নিয়ম-কানুন বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু তারা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তাই টক টক ও হা-ডু-ডু শব্দ শুনেই প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে অনুমান করে ধরে ফেলেন। তবে জেলার ১২টি উপজেলা থেকে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী লোকদের মধ্যে থেকে বাছাই করে জেলা ক্রীড়া সংস্থা একটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে তাদের পুনর্বাসন করা প্রয়োজন।
কথা হয় ঢাকা বিভাগীয় কাবাডি, অ্যাথেলেটিক্স ও ভলিবল কোচ বিপ্লব কুমার দাশের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, দুঃখজনক হলেও সত্য যে জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই। প্রশিক্ষণ দিলে তারাও দেশে-বিদেশে প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে।
ব্যতিক্রম খেলা দেখতে আসা মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের হা-ডু-ডু খেলা দেখে ভালো লেগেছে। আমরা চাই এমন হাডুডু খেলার আয়োজন আগামীতেও হোক।’ শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, ‘বাবা-মায়ের সঙ্গে খেলা দেখতে এসেছি। খুব উপভোগ করেছি।’
খেলার আয়োজক আব্দুল লতিফ মিয়া জানান, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ এত সুন্দর খেলতে পারে যা না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। শত শত মানুষ খেলা উপভোগ করেছে।
খেলোয়ারদের স্মৃতিশক্তি এত প্রখর প্রতিপক্ষকে ধরতে গিয়ে কেউ আউট হয়নি। জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণের দাবি জানান তিনি।
কাতুলী ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল লতিফ মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল। উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রৌফ।
ফরহাদ ইকবাল বলেন, নববর্ষে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য এমন ব্যতিক্রমী খেলার আয়োজন করেছে। অনেক দিন পর গ্রামের মানুষ হা-ডু-ডু খেলা উপভোগ করতে পেরেছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: খ ল র আয়
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষের ২দিন পর শোভাযাত্রা, অংশ না নেওয়ায় খাবার বন্ধ করলেন প্রাধ্যক্ষ
'এবারের বৈশাখের স্বপ্ন-শপথ, আগামীর বৈষম্যের বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে দুইদিন পর আনন্দ শোভাযাত্রা করা হয়েছে।
এদিকে, এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ না করায় খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জালাল উদ্দীন ডাইনিংয়ে খাবার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে দুপুরের খাবার নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবি করেন তারা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বর থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বাংলা মঞ্চে এসে শেষ হয়।
আরো পড়ুন:
কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি ইবি শিক্ষার্থীদের
কুয়েটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি ইবি ছাত্র ইউনিয়নের
এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মনজুরুল হক, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী, আবাসিক হল ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা- কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।
শোভাযাত্রায় শিক্ষার্থীরা বর-কনে, কৃষক, জমিদার, কুলি, চাষী, জেলে, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ, জাতীয় কবি নজরুল, আবু সাইস-মুগ্ধসহ ফ্যাসিবাদের প্রতিকৃতি, ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষের দৃষ্টান্ত, ঐতিহ্যবাহী পালকি, ঢেঁকি, গরু ও মহিষের গাড়ি, সম্প্রীতির প্রতিচ্ছবিসহ নানা চরিত্র উপস্থাপন করেন।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আয়োজনে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা সভা ও বিভিন্ন প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়।
নববর্ষের দুইদিন পর শোভাযাত্রার বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এম এয়াকুব আলী বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় ক্যাম্পাস বন্ধের দিন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত খুব একটা হয় না। যেহেতু আমাদের মূল আয়োজন শিক্ষার্থীদের নিয়েই, সেহেতু তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের লক্ষ্যে ক্যাম্পাস খোলার দিন আয়োজন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আশা করি, প্রোগ্রামটি প্রাণবন্ত হয়েছে।”
নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, “পহেলা বৈশাখ আমাদের প্রাণের উৎসব। আজকের শোভাযাত্রা আমাদের জন্য আনন্দের মেলা। এটি বাঙালি ও বাংলাদেশি সংস্কৃতির ধারাবাহিকতার অংশ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে ঐক্য আমরা গড়েছি, সেই ঐক্য হবে আগামীর বাংলাদেশ গড়ার ভিত্তি। আমরা এই ঐক্য নিয়ে এগিয়ে যাব শিক্ষা ও গবেষণার পথে।”
এদিকে খালেদা জিয়া হল ডাইনিংয়ের খাবার বন্ধের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, নববর্ষ উপলক্ষে হলটিতে দুপুরে পান্তাভাত, ভর্তা ও রুই মাছ ভাজির বিশেষ আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি র্যালিরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু আশানুরূপ সংখ্যক শিক্ষার্থী উপস্থিত না হওয়ায় প্রাধ্যক্ষ হতাশ হয়ে তাৎক্ষণিকভাবে দুপুরের খাবার পরিবেশন বন্ধ ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে রাত ৯টায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি মিটিং ডাকার নির্দেশ দেন। এটা খুবই দুঃখজনক।
শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রাধ্যক্ষ শিক্ষার্থীদের স্বার্থবিরোধী কাজ করেছেন। এজন্য অনতিবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক হল ডাইনিংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ২টা থেকে রান্নার প্রস্তুতি শুরু হয়। দুপুরের আগে সবকিছু প্রায় প্রস্তুত থাকলেও শেষ মুহূর্তে প্রাধ্যক্ষ স্যার রান্না বন্ধ করতে বলেন।”
অভিযোগের বিষয়ে খালেদা জিয়া হল প্রাধ্যক্ষ জালাল উদ্দীন বলেন, “প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি বছরের ন্যায় হল থেকেও আমরা অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। একটা হলে ৪০০ মেয়ে আছে, অথচ সেখানে ৬/৭ জন উপস্থিত হয়। আমাদের ব্যান্ড পার্টি ছিলো, এই সাতজন নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব না হওয়ায় পরিকল্পনা বাদ দেই। আর অল্প সময়ের মধ্যে ডাইনিংয়ের খাবারের ব্যবস্থা করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল। তাই সাড়ে ১১টার দিকে নোটিশে জানিয়ে দেওয়া হয়. দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হবে না।
শিক্ষার্থীদের পদত্যাগ দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে ইবি প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।”
ঢাকা/তানিম/মেহেদী