জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে।

বুধবার দুপুর ১টায় রাজধানীর বাড্ডা সাঁতারকুল এলাকায় মাল্টিক্রাফট টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারে এ কার্যক্রম শুরু হয়।

ইকুয়ালিএবল ও বিদেশ ফাউন্ডেশন ইউএসএ নামের দুটি সংগঠনের আর্থিক সহায়তায় অ্যাসোসিয়েশন ফর ইকোনমিক্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট অব বাংলাদেশ, মাল্টিক্রাফট টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন এই কার্যক্রম শুরু করেছে। 

আয়োজকরা জানান, এই প্রকল্পের মাধ্যমে আন্দোলনে আহতদের শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় তাদের জন্য বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষন, ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, থাকা খাওয়ার পাশাপাশি ও প্রশিক্ষণ পরবর্তী তাদের কর্মসংস্থান পেতে সহায়তা দেওয়া হবে।

শুরুতে যে ১০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তারা হলেন- পাবনার মিরাজুল ইসলাম, নেত্রকোনার আকাশ মিয়া, কিশোরগঞ্জের জুনায়েদ আহমেদ, টাঙ্গাইলের মানিক মিয়া, মাদারীপুরের নেসার উদ্দিন, বরিশালের আবির হোসেন, ঢাকার উত্তরার আশরাফউদ্দিন ইমন, ঢাকার মহাখালীর রানা মিয়া, বরিশালের হানিফ মিয়া ও সিলেটের জুবেল মিয়া। তাদের কেউ পা হারিয়েছেন, কেউ গুলি ও অন্যান্য আঘাতে মারাত্মক আহত হয়েছিলেন।

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে নেসার উদ্দিন তাদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সহযোগিতা করার জন্য সংগঠনগুলোকে ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। 

বিদেশ ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শাহুদ আহমেদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে নিয়ে শুরু পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে আরও প্রকল্প হাতে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্যসচিব এস এম সাইফ মুস্তাফিজ সরকারকেও এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান।

এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন আসিয়াব প্রতিনিধি রিয়াজুল ইসলাম, সন্তান ও অভিভাবক ফোরামের কেন্দ্রীয় সমন্বয় ডা.

শাকিল আরিফ চৌধুরি, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের  মহাসচিব ডা. ফরিদ উদ্দিন, সিনিয়র সহসভাপতি ডা. ইশরাত জাহান, প্রকল্প সমন্বয়ক ডা. দলিলুর রহমান,  মাল্টিক্রাফট টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের প্রিন্সিপাল আব্দুল মান্নান প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন প রকল প

এছাড়াও পড়ুন:

অযত্নে ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন, বিলুপ্তপ্রায় প্রতিষ্ঠানগুলোও

বাংলাদেশ ও দেশ ভাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের অন্যতম ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। অথচ সরকার বদলের কালপরিক্রমায় মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত অনেক স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট হয়ে যেতে বসেছে। বিলুপ্ত হয়েছে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানও এবং বাকিগুলো যথাযথ পরিচর্যা ও সংরক্ষণের অভাবে ক্ষয়ে যাচ্ছে। 

টাংগাইলের সন্তোষের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মধ্যে মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজরিত এ প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকটিই আজ বিলুপ্ত। বাকিগুলো বিলুপ্তির পথে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাওলানা ভাসানীর স্মৃতি বিজড়িত জিনিসগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষিত হচ্ছে না। মাও সেতুং প্রদত্ত ঐতিহাসিক ট্রাক্টর রুমটির দরজা ভাঙ্গা। ফলে যে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারে। মাওলানা ভাসানীর রোপণ করা অধিকাংশ গাছ কয়েক বছর আগেই কেটে ফেলা হয়েছে। 

ভাসানী পরিষদের সভাপতি আজাদ খান ভাসানীর অভিযোগ, স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলোর অবহেলায় মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ১২টি দাতব্য প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত হয়ে গেছে এবং বাকিগুলোর অবস্থাও বেশ শোচনীয়। তার জীবদ্দশায় বেশ কয়েকটি দাতব্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন, রোপণ করেছিলেন নানা রকমের দেশি গাছ। সেগুলো এখন নেই বললেই চলে।

ভাসানী পরিষদের অভিযোগ, কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই রাস্তা প্রশস্ত করার অযুহাত দেখিয়ে মাওলানা ভাসানীর রোপণ করা পুরনো সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে কয়েক বছর আগে। ১৯৭০ সালে নির্মিত ৫০০ মানুষের ধারণক্ষমতার দরবার হল, যেখানে ভাসানী বক্তৃতা দিতেন। সেটা ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাচ্ছে অবহেলায়। এই দরবার হলে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ডাকে প্রথম সর্বদলীয় সম্মেলন হয় ১৯৭১ সালের ৯ জানুয়ারি।

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঐতিহাসিক এই হলটি পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। মৃত্যুর পর মাওলানা ভাসানীকে এই দরবার হলের পাশে শায়িত করা হয়। বর্তমানে দরবার হলের ভিতরে কাঠের স্তম্ভগুলোও ক্ষয় হয়ে গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে রয়েছে কাঠামোটিও। হলের পাশে স্থাপিত ভাসানী জাদুঘরে সংরক্ষিত ভাসানী স্মারকগুলোর মধ্যে বেশ কয়েকটির অবস্থা শোচনীয়। মৃত্যুর আগে স্বাধীন বাংলাদেশে ভাসানী সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করেন। 

ভাসানীর মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সালে সরকার এ আইন প্রণয়ন করে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এবং তার সম্পত্তি দেখাশুনা ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য সব প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য মেয়াদ নির্ধারণ করে। কিন্তু দীর্ঘ ব্যবধানের পর অবশেষে ১৯৯৯ সালে তৎকালীন সরকার সন্তোষ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করে।

তবে মাওলানা ভাসানীর অনুসারীদের অভিযোগ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাস্টি বোর্ড সমঝোতা স্মারকের শর্তাবলীর সঙ্গে অবহেলা করছে। পাশাপাশি আর্থিক বরাদ্দ ও জনবল সংকটের কারণে অন্যান্য সহযোগী সংস্থার কার্যক্রমও কার্যত বন্ধ। একের পর এক সরকারের ট্রাস্টি বোর্ড সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর মাওলানা ভাসানীর প্রতিষ্ঠিত ২৫ টি শিক্ষা ও অন্যন্যা দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টি ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এটাকে ইতিহাস থেকে মাওলানা ভাসানীর স্বপ্ন, কর্ম ও স্মৃতি মুছে ফেলার অংশ বলেও মনে করছেন তারা। 

ভাসানী পরিষদের সভাপতি আজাদ খান ভাসানী বলেন, “মাওলানা ভাসানীর শেষ একটি স্বপ্ন ছিল সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। তিনি এই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় করেছিলেন কাগমারী পরগনা খ্যাত সন্তোষের এই পূণ্য ভূমিতে। তিনি জীবিত থাকাকালে এখানে অনেকগুলো প্রকল্প গ্রহণকরেছিলেন। প্রায় ২৫টার মতো প্রতিষ্ঠান তিনি রেখে গিয়েছেন। যার মধ্যে ১২টি হারিয়ে গেছে ক্যাম্পাস থেকে। আর বাকিগুলো খুব ধুকে ধুকে চলছে এবং অনেকগুলো ধ্বংসের পথে।”

তিনি বলেন, “মাওলানা ভাসানী তার কর্ম ও স্মৃতির মধ্যে বেঁচে আছেন। তার স্মৃতিকর্মগুলোর মধ্যে যেগুলো ধ্বংসের হয়ে গেছে, সেগুলো আবার নতুনভাবে তৈরি করা এবং যেগুলো রয়েছে, সেগুলো আরো ভালোভাবে সংরক্ষণ ও গতিশীল করার জন্য সরকার এবং দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।”

তিনি আরো বলেন, “মাওলানা ভাসানী সারাটা জীবন মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছেন। তিনি যে লড়াই সংগ্রাম অসমাপ্ত রেখে গেছেন, সেটা ২০২৪ এর গণঅভূত্থানের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। মাওলানা ভাসানীর স্বপ্ন ছিল, শোষণ ও বৈষম্যহীন একটি বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এমন একটি বাংলাদেশ আগামীর প্রজন্ম বাস্তবায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস।”

মাওলানা ভাসানীর স্মৃতিচিহ্নগুলো সংরক্ষণের ব্যাপারে মাভাবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল আজিম আখন্দ বলেন, “আমাদের এখানে ভাসানী ট্রাস্ট বোর্ড আছে। আরো অনেক স্থাপনায় আছে, এ বোর্ড এগুলো দেখভাল করে থাকে। ভাসানীকে দেওয়া ট্রাক্টরও আছে। আমি নতুন উপাচার্য হিসেবে আসছি, বিষয়গুলো জেনে কিভাবে সংরক্ষণ করা যায় এবং সরকারি সহায়তায় কিভাবে নেওয়া যায়, কিভাবে করলে এগুলো সংরক্ষিত হবে, তা বিস্তারিত আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।”

তিনি বলেন, “আমি থাকি বা না থাকি, ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার স্মৃতিফলক, স্মৃতিচিহ্ন সবগুলো সংরক্ষিত থাকুক- সেটা মনে প্রাণে চাই। এর মাধ্যমে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে, মাওলানা ভাসানী একজন আদর্শ পুরুষ। তার ন্যায়-নিষ্ঠতা, মজলুমের প্রতি দরদ, সংগ্রামী জীবন, তার ভিতরের স্প্রিড, আধ্যাত্মিকতা- সবকিছু মানুষ ফলো করে উদ্বুদ্ধ হোক, এটা আমি চাই। এছাড়া আমি চাই, আমাদের নতুন প্রজন্ম জ্ঞান-বিজ্ঞানের পাশাপাশি চারিত্রিক দিক দিয়ে ভাসানীর মত বলিষ্ঠ হবে।”

চীনের মাও সেতুং মাওলানা ভাসানীকে যে ট্রাক্টরটি উপহার দিয়েছিলেন কক্ষটির দরজা ভাঙা। ফলে যে কেউ প্রবেশ করতে পারবে অনায়াসেই৷

ঢাকা/আবিদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের রোডম্যাপ চাই
  • ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের বাংলাদেশের দাবির উল্লেখ নেই পাকিস্তানের ভাষ্যে
  • শুধু বিএনপির কথায় নির্বাচন হবে না: ইসলামী আন্দোলন
  • অযত্নে ভাসানীর স্মৃতিচিহ্ন, বিলুপ্তপ্রায় প্রতিষ্ঠানগুলোও
  • নির্বাচনী সংস্কারের পর ইসিকে দল নিবন্ধনের দাবি জানাল এনসিপি
  • যাত্রীবাহী লেগুনা ড্রেনে, দুই পোশাক শ্রমিক নিহত
  • জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ২১জন শহীদ পরিবারকে আর্থিক অনুদান প্রদান
  • অধিকার আদায়ে সড়ক অবরোধের সংস্কৃতি
  • বগুড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ২ পুলিশ সদস্য আহত