ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে বিএনপি। আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে মার্কিন দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসায় এ বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ চার সদস্যদের প্রতিনিধিদল অংশ নয়।

বৈঠক শেষে সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বৈঠকে ট্যারিফ (শুল্ক) নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা একটা টলারেবল (সহনীয়) অবস্থায় না আনলে তো রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সুতরাং এটার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আর আলোচনা হয়েছে নির্বাচন তো আছেই। সবাই তো জানতে চাচ্ছে, নির্বাচন কবে। নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কী চিন্তা করছে, তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে।

বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে কী আলোচনা হয়েছে, এ প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, ‘নির্বাচন তো ডিসেম্বরের মধ্যে স্বভাবতই। আমরা বলেছি, নির্বাচন ডিসেম্বরের আগেও হতে পারে।’

এ প্রসঙ্গে আজ দুপুরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নির্বাচন ও সংস্কার প্রসঙ্গে যে আলোচনা হয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, যেসব সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো হবে। এটা তো খুব সহজ ব্যাপার। আমরা সবাই আমাদের প্রস্তাবগুলো জমা দিয়েছি, যে সংস্কারগুলোর বিষয়ে ঐকমত্য হবে, সেটা তো ১৫, ২০ দিন বা এক মাসের মধ্যে করে ফেলতে পারে। এরপর যে সনদ, যদি ঐকমত্য হয়, তাহলে সনদে সিগনেচার তো সময়ের ব্যাপার না, সুতরাং নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ার তো কোনো কারণ নেই।’

বিএনপি কেন দ্রুত নির্বাচন চায়, তার ব্যাখ্যাও মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উল্লেখ করেছেন দলটির নেতারা। আমীর খসরু বলেন, ‘স্বভাবতই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অর্ডার ফিরিয়ে না আনলে আমরা বলেছি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশের ভেতরে-বাইরে যে সিদ্ধান্ত স্থগিত আছে, কেউ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তা ছাড়া নির্বাচিত সরকার এলে সিদ্ধান্তগুলো সহজে আসবে এবং জনগণের সমর্থন থাকলে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হয়।’

দেশের ভেতরে-বাইরে সবাই নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছেন মন্তব্য করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বৈঠকে তাঁরা (মার্কিন প্রতিনিধিরা) জানতে চেয়েছেন সরকারের পলিসি কী হবে, বিএনপির পলিসি কী হবে, আমাদের অর্থনৈতিক পলিসি কী হবে, তা নিয়ে তাঁরা জানতে চেয়েছেন, আমরা বিস্তারিত বলেছি।’

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, বিগত দিনে বাংলাদেশে যত সংস্কার হয়েছে, এই যে অর্থনৈতিক সংস্কার বিএনপির সময়, রাজনৈতিক সংস্কার বিএনপির সময়ে হয়েছে, বহুদলীয় গণতন্ত্র, মুক্তবাজার অর্থনীতি থেকে শুরু করে বিচার বিভাগীয় সব সংস্কার বিএনপির সময়ে হয়েছে এবং অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সংস্কারের কারণে এসেছে এবং আগামী দিনে আরও সংস্কার হবে, সেটি তাঁরা জানতে চেয়েছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দেওয়া পাল্টা শুল্ক বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে করণীয় নিয়ে বলেছি।’

যুক্তরাষ্ট্রের উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আওয়ামী লীগ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান আমীর খসরু।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এই জায়গাতেই বিএনপির আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠক শেষে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সময়ে যে মাঠপ্রশাসন রয়েছে, সেই মাঠপ্রশাসন আমাদের কাছে মনে হয়েছে নিরপেক্ষ আচরণ করছে না। বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চলছে, সেই জায়গায় প্রশাসনকে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করতে দেখছি, সেই জায়গাগুলো আমরা বলেছি।’

এনসিপির নেতাদের এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। বৈঠকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ও মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র ড স ম বর র ব এনপ র স উপসহক র র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক বা রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ নিয়ে আলোচনার জন্য প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটন যাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সফরে আসা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠকের পর লুৎফে সিদ্দিকী মঙ্গলবার রাতে তার ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানান।

মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক চার দিনের সফরে মঙ্গলবার ভোরে ঢাকায় আসেন। তাঁর সহকর্মী যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হেরাপের বুধবার ভোরে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে। বাংলাদেশে অ্যান্ড্রু হেরাপের সফরসঙ্গী হিসেবে মিয়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনের যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম প্রতিনিধিদলের এ সফরে বাংলাদেশে সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণ, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপ, রোহিঙ্গা সংকটে সহায়তা ও মিয়ানমার পরিস্থিতিসহ ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্কের নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফে সিদ্দিকী তার ফেসবুকে আরো লিখেছেন, আজ আমার দপ্তরে উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিক এবং তাঁর প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানাই। তিনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তাদের বাণিজ্য এজেন্ডায় দ্রুত ও গঠনমূলক সাড়া দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। আগামী সপ্তাহে (ওয়াশিংটন) ডিসিতে অবস্থিত ইউএসটিআর, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার আরও গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচি ঠিক করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২ এপ্রিল বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশ ও অঞ্চলের পণ্যের ওপর রেসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ আরোপ করেছিলেন। অনেক দেশের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল। পাশাপাশি ন্যূনতম শুল্ক ছিল ১০ শতাংশ। বাংলাদেশের ওপর আরোপ করা হয়েছিল ৩৭ শতাংশ।

তবে এই শুল্ক কার্যকর হওয়ার দিন ৯ এপ্রিল ট্রাম্প ন্যূনতম ১০ শতাংশ রেখে বাকি শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। এর আগে বিভিন্ন দেশ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে আলোচনা ও মার্কিন পণ্য আমদানি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে। ট্রাম্প যেসব দেশে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের রপ্তানি কম ও আমদানি বেশি, সেসব দেশের ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করেছিলেন।

নতুন শুল্ক তিন মাস স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৭ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন একই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে চিঠি পাঠান। চিঠি দুটি ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাস ওই দিনই হোয়াইট হাউস ও ইউএসটিআরের দপ্তরে পৌঁছে দেয়।

বাংলাদেশের চিঠি দুটি পাঠানোর দুই দিন পর (৯ এপ্রিল) ইউএসটিআরের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করা এবং বাণিজ্যঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে চায়, তা জানতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি কমানো নিয়ে কথা হয়েছে: পররাষ্ট্রসচিব
  • বাংলাদেশের সংস্কার কাজে সমর্থন জানাল যুক্তরাষ্ট্র
  • বাংলাদেশের সংস্কার কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানাল যুক্তরাষ্ট্র
  • পররাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে দুই মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক ফলপ্রসূ
  • মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিএনপি ও এনসিপির সৌজন্য সাক্ষাৎ আজ বিকেলে
  • আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত
  • দুই মার্কিন কর্মকর্তার ঢাকা সফরে গুরুত্ব পাবে যেসব ইস্যু