চীনের ওপর আরও ১০০ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্য নজিরবিহীন ২৪৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে। এর আগে চীনে মার্কিন পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করায় পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে এ পদক্ষেপ নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। 

বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে তুমুল এ শুল্কযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিতে কালো ছায়া ফেলেছে। অনেক বিশ্লেষক বিশ্বজুড়ে মন্দার আশঙ্কা করছেন। জাতিসংঘের বাণিজ্য সংস্থার মতে, বাণিজ্য উত্তেজনা ও ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে। খবর নিউজউইক ও দ্য গার্ডিয়ানের। 

চলতি মাসের শুরুতে বিভিন্ন দেশের ওপর উচ্চমাত্রায় শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল অবস্থায় ফেলে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এক সপ্তাহের মাথায় তিনি পিছু হটেন। চীন বাদে এবং ন্যূনতম ১০ শতাংশ শুল্ক রেখে অতিরিক্ত শুল্ক স্থগিত করেন তিনি। আর কয়েক ধাপে চীনা পণ্য আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশে উন্নীত করেন। পাল্টা জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে। আবার চীনের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ২৪৫ শতাংশ করা হলো। 

হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়, আলাপ-আলোচনার জন্য বিভিন্ন দেশের ওপর পৃথকভাবে আরোপিত শুল্ক স্থগিত করা হলেও চীনকে এই বিবেচনার বাইরে রাখা হয়েছে। তারা শুল্ক আরোপের পর বরং পাল্টা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ২৪৫ শতাংশ শুল্ক সামলাতে হবে। 

এ ঘোষণার পর ট্রাম্প বলেছেন, বল এখন চীনের কোর্টে। যে কোনো আলোচনায় তাদের প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। চীনকে আমাদের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে। আমাদের তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তি করতে হবে না। 

দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা এবং ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তার কারণে চলতি বছর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ব্যাপকভাবে ধীর হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থা (আঙ্কটাড) বলছে, ২০২৪ সালে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮ শতাংশ হলেও এ বছর ২ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে যেতে পারে। এটি বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে নিয়ে যাবে বলেও সতর্ক করা হয়েছে। 
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থাও (ডব্লিউটিও) সতর্ক করেছে, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে এ বছর বিশ্ব বাণিজ্য উল্টো পথে হাঁটবে। এতে কমে যাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও। জেনেভাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, তারা আগে আশা করেছিল, এই বছর পণ্য বাণিজ্য ২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়বে। তবে হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য নীতির ফলে এ বছর পণ্য বাণিজ্য দশমিক ২ শতাংশ কমে যাবে। 

এদিকে ট্রাম্পের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যেও চীনের অর্থনীতি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৫ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। এ হার তাদের প্রত্যাশার চেয়েও বেশি। 
চলমান এই বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে বছরের বাকি সময়ে দেশটির অর্থনীতির সম্ভাবনা কিছুটা ম্লান হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প প রব দ ধ ২ দশম ক র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী কুয়ালালামপুরে শনিবার হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করেছে। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সংস্কার বাস্তবায়নে ব্যর্থতার অভিযোগে এই সমাবেশ হয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

বিক্ষোভকারীরা বেশিরভাগই কালো টি-শার্ট এবং ব্যান্ডানা পরেছিলেন। তাদের মুখে ‘তুরুন আনোয়ার’ বা ‘আনোয়ার পদত্যাগ করুন’ স্লোগান ছিল। তারা কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রস্থলে মিছিল করে এবং পরে শহরের স্বাধীনতা স্কোয়ারে শীর্ষ বিরোধী নেতাদের বক্তৃতা শুনতে একত্রিত হন। পুলিশের অনুমান, কমপক্ষে ১৮ হাজার মানুষ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। 

২০২২ সালের নভেম্বরে ক্ষমতা গ্রহণের আগে সংস্কারবাদী মঞ্চে প্রচারণা চালানো আনোয়ার, সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপের জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। তার পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে বর্ধিত বিক্রয় ও পরিষেবা কর এবং ভর্তুকি সমন্বয়। বিরোধীদের আশঙ্কা, প্রধানমন্ত্রীর এই পদক্ষেপের ফলে ভোক্তা মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী অবশ্য চলতি সপ্তাহে ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের উদ্বেগ কমাতে নগদ অর্থ বিতরণ, দরিদ্র পরিবারের জন্য বর্ধিত সাহায্য এবং জ্বালানির দাম কমানোর প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন।

২৩ বছর বয়সী বিক্ষোভকারী নুর শাহিরাহ লেমান জানান, তিনি উদ্বিগ্ন যে নতুন কর এবং বৃহৎ ব্যবসার উপর আরোপিত উচ্চ বিদ্যুতের শুল্ক অবশেষে গ্রাহকদের উপর চলে যাবে।

তিনি বলেন, “এই করগুলো উৎপাদনকারীর উপর আরোপ করা হয়, তাই এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে খাদ্যের দামের উপর প্রভাব ফেলবে।”

সরকারের সহযোগী বেশ কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাহার এবং দেশের শীর্ষ বিচারকদের নিয়োগে সাম্প্রতিক বিলম্বের পর, আনোয়ার বিচারিক হস্তক্ষেপ ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টার প্রতি তার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সন্দেহের সম্মুখীন হয়েছেন। আনোয়ার বারবার আদালতে হস্তক্ষেপের কথা অস্বীকার করেছেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ সমাবেশে যোগ দিয়েছিলে। তিনি আনোয়ারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিচার করার জন্য তার পদের অপব্যবহারের অভিযোগ এনেছেন।

মাহাথির জনতাকে বলেন, “যারা নির্দোষ তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যারা অন্যায় করেছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মালয়েশিয়ায় প্রধানমন্ত্রী আনোয়ারের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ