ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সাবেক সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা
Published: 16th, April 2025 GMT
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে এক কোচিং সেন্টার মালিকের কাছ থেকে চার কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে সিআইডির সাবেক প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে নালিশি মামলা করা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
গতকাল মঙ্গলবার যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মো.
জোবায়দুর রহমানের আইনজীবী মো. নিহার হোসেন ফারুক ওই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে পল্টন থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। জোবায়দুর রহমান মেডিকেল ভর্তি কোচিং প্রতিষ্ঠান ‘মেডিকো’র মালিক।
মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ছাড়াও আসামি হিসেবে আরও তিনজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁরা হলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা, উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও এসআই আতিকুর রহমান। অভিযুক্ত পরের তিনজন সিআইডিতে চাকরি করলেও তারা এখন পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, জোবায়দুর রহমান সপরিবারে রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলিবাগে থাকেন। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট সাদা পোশাকে সিআইডি কর্মকর্তা জুয়েল চাকমার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ তাঁর ফ্ল্যাটে যায়। এ সময় তারা জোবায়দুর রহমানকে তুলে মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে নিয়ে যায় এবং তাঁর বাসার বিভিন্ন মালামাল লুট করে। তাঁকে ২৯ ঘণ্টা আটকে রাখা হলেও তাঁর বিষয়ে পরিবারকে জানায়নি সিআইডি।
মামলার আরজিতে বলা হয়, সিআইডি কার্যালয়ে জোবায়দুরের দুই চোখ গামছা দিয়ে বেঁধে এলোপাতাড়ি পেটানো হয়। পরে ওই ছবি তাঁর স্ত্রী ও পরিবারকে পাঠানো হয়। তৎকালীন সিআইডিপ্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার নির্দেশে জোবায়দুরের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা দেওয়া না হলে তাঁকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ও তাঁর স্ত্রীকে মানিলন্ডারিংয়ে মামলায় আসামি করার হুমকি দেওয়া হয়।
জোবায়দুরের পরিবার গাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমি বিক্রি করে সিআইডির এসআই মেহেদী হাসানের গাড়িচালক সবুজের কাছে দফায় দফায় চার কোটি টাকা পরিশোধ করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, এসআই আতিকুর রহমান টাকা দেওয়ার স্থান ও সময় জানিয়ে তা তদারকি করতেন। টাকা নেওয়া–সংক্রান্ত একাধিক অডিও রেকর্ড জোবায়দুরের কাছে আছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব ৬ মাসের বেশি সময় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
জোবায়দুরকে রিমান্ডে নিয়ে পেটালে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাঁকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে ৪৩ দিন কারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তাঁকে।
গত মঙ্গলবার দুপুরে ভুক্তভোগী জোবায়দুর রহমান রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে করেন। সেখানে তিনি অভিযোগ করেন, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী ও এজাহারভুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা তাঁর বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরপর শারীরিক নির্যাতন করে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করেছে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়েছে।
আজ বুধবার এ ব্যাপারে জানতে সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
মোহাম্মদ আলী মিয়া ২০২২ সালের আগস্টে সিআইডি প্রধান হন। গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট মোহাম্মদ আলীকে সিআইডি থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। এরপর গত ২২ আগস্ট তাঁকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। মোহাম্মদ আলী মিয়ার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আটটি হত্যা মামলা রয়েছে।
আরও পড়ুনসিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়ার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু দুদকের২৩ মার্চ ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক রসফ য় র পর ব র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
অবসরের সময় হয়ে গেছে—আইপিএলে ‘সুপার ফ্লপ’ রোহিতকে নিয়ে শেবাগ
এমন চলছে বছরের পর বছর। রোহিত শর্মা আইপিএলে ম্যাচের পর ম্যাচ খেলেন আর ব্যর্থ হন। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬ ম্যাচে তাঁর রান মোট ৮৪। বোঝাই যাচ্ছে ‘সুপার ফ্লপ’। আইপিএলে এমন রোহিতকে দেখে ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ তো বলেই দিয়েছেন, রোহিতের অবসর নেওয়ার সময় হয়ে গেছে।
আইপিএলে রোহিত ২০১৩ সালের পর কখনো এক মৌসুমে ৫০০ রান করতে পারেননি। এ সময়ে ৪০০ রানের ক্লাব ছুঁয়েছেন মাত্র ৪ মৌসুমে।
২০১৬ সালের পর থেকে ২০২৩ সালের আইপিএল পর্যন্ত ৭ মৌসুমে কখনো ৩০ গড়েও রান করতে পারেননি। এ সময়ে গড়ের হিসাবে তাঁর সেরা মৌসুম ছিল ২০২১ সালে। সেবার ১৩ ম্যাচে ২৯ গড়ে ৩৮১ রান করেছিলেন রোহিত।
রোহিতের সঙ্গে একই সময়ের ডেভিড ওয়ার্নারের তুলনা দেওয়া যেতে পারে। ২০১৩ সাল থেকে ২০২৪—এ সময়ে ওয়ার্নার আইপিএলে ৫০০–এর বেশি রান করেছেন সাতবার। বিরাট কোহলি পাঁচবার, যেখানে ২০১৬ সালে করেছেন ৯৭৩ রান। ২০২৩ সালে ৬৩৯, গত বছর ৭৪১ রান।
আর ১০টা বল নাও, কিন্তু অন্তত টিকে থাকো এবং নিজেকে একটা সুযোগ দাও। বারবার ও ব্যাক-অব-দ্য-লেংথ ডেলিভারিতে পুল শট খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছে। তাই রোহিতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এক ইনিংসে ও একবারও পুল শট খেলবে না।ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগআইপিএলে স্ট্রাইক রেটও কখনোই আহামরি ছিল না রোহিতের। আইপিএল ক্যারিয়ারে রোহিত সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেন গতবার—১৫০।
রোহিতকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে এ কারণেই। কাল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ৪ উইকেটে জয়ের ম্যাচে ২৬ রানে আউট হওয়া রোহিতকে নিয়ে ক্রিকবাজে শেবাগ বলেছেন, ‘রোহিতের অবসরের সময় হয়ে গেছে এবং এর আগে তার এমন কিছু দেওয়া উচিত ভক্তদের, যা মনে রাখার মতো হয়—এমন কিছু যা মানুষকে ভাবায়, ‘ওকে এখন বাদ দিচ্ছে না কেন?’
রোহিতের পরিসংখ্যান তুলে ধরে শেবাগ বলেছেন, ‘যদি আপনি গত ১০ বছরে রোহিতের আইপিএলের পরিসংখ্যান দেখেন, তাহলে দেখবেন ও মাত্র একবারই ৪০০ রানের বেশি করেছে। অর্থাৎ ও সেই ধরনের খেলোয়াড় না যে ভাবে তাকে ৫০০ বা ৭০০ রান করতেই হবে। কিন্তু যদি রোহিত ভাবে, তাহলে হয়তো করতেও পারে। যখন ও ভারতের অধিনায়ক হয়, তখন বলেছিল সে এমন একজন খেলোয়াড় হতে চায় যে পাওয়ারপ্লেতে সুযোগ নেবে, ঝুঁকি নেবে—সব আত্মত্যাগ নিজে করতে চায়। কিন্তু সে এ বিষয়টা বিবেচনা করছে না, যখন নিজে পারফর্ম করছে না, তখন ওর নিজের লিগ্যাসিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগ