জোর করে পদত্যাগপত্রে প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ
Published: 16th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজ্বী তোবারক আলী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্যের থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে সাক্ষর করিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
আজ বুধবার দুপুরে প্রধান শিক্ষকের অফিস কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ভুক্তভোগী ওই প্রধান শিক্ষক।
বিদ্যালয়ের নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, বুধবার সকালে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ভাটিয়ারীতে জড়ো হয়। পরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে গিয়ে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে পহেলা মার্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে যোগদান কান্তি লাল আচার্য। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। ২০০০ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি হলে তৎকালীন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে দেন। গত ৫ আগস্ট সরকারের পট পরিবর্তনের পর সাবেক শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আচার্য ও সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরে মিছিল করে।
গত সোমবার বিদ্যালয়ের নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নেন জামায়াত সমর্থিত বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এরপর বিএনপি সমর্থিত সাবেক শিক্ষার্থীরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণ চেয়ে আন্দোলনে নামে।
আজ বুধবার সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য ও এডহক কমিটির সভাপতিসহ সদস্যরা অফিসে বসে বিদ্যালয়ের কর্মপরিকল্পনা করছিলেন। এসময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সাবেক শিক্ষার্থীরা মিছিল শ্লোগান দিয়ে কয়েকশো নেতাকর্মী বিদ্যালয়ে আসে। এ সময় জামায়াত সমর্থিত কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় দলের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এ সময় জামায়াতের কর্মী ফারুক আহত হয়। দুপুর ২টার দিকে জোরপূর্বক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চর্যকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করান বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় শিক্ষকের সঙ্গে তারা অসদাচরণ করেন বলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।
পদত্যাগপত্রে বাধ্যতামূলক স্বাক্ষর নেওয়ার সময় অফিসে থাকা ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার প্রধান শিক্ষককে তার গাড়িতে তুলে বাড়ি পৌঁছে দেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, বিদ্যালয়ের সাবেক কমিটিসহ প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের শাস্তি ও পদত্যাগ দাবি করেছি। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেন জানান তিনি। এছাড়া নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেওয়ার তারও পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
বিদ্যালয়ের নবগঠিত এডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চর্যকে নিজের শিক্ষক দাবি করে বলেন, এভাবে অসম্মান করে এক শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া কাম্য নয়। তিনি অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিচার হবে। কিন্তু বাধ্য করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া সমীচীন নয়।
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল মিটিং করেছে শুনেছি। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদত্যাগ করেছেন। নিজ গাড়ি করে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য বলেন, ২০২৮ সালের মার্চ মাসে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। সাবেক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়েছেন। তা সততার সঙ্গে পালন করে আসছি। নবগঠিত এডহক কমিটি মিটিং করে আমাকে বাদ দিতে পারতো। কিন্তু আমাকে অসম্মান করে বাধ্যতামূলক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। যারা এ গর্হিত কাজ করেছে অধিকাংশ আমার ছাত্র ছিল। বলার কিছু নাই। বিচার সৃষ্টিকর্তার উপর ছেড়ে দিলাম।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পদত য গ ব এনপ পদত য গপত র পদত য গ ব এনপ এ সময় সমর থ
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহে স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটির ৮ সদস্যের অনাস্থা
ময়মনসিংহে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের ২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটিতে বিতর্কিতদের পদ দেওয়ার অভিযোগে ৮ সদস্য অনাস্থা প্রস্থাব দিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে এই অনাস্থা প্রস্তাবের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নবগঠিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হান্নান মিয়া।
এই অনাস্থা প্রস্তাবে স্বাক্ষর করেছেন নবগঠিত কমিটির ৮ সদস্য। তারা হলেন- যুগ্ম আহবায়ক মো. খোকন মিয়া, খরিল মিয়া, রাসেল মিয়া, আনোয়ার হোসেন, সদস্য- জুয়েল মিয়া, জিয়াউর রহমান ও মো: লিমন।
অনাস্থা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক সনিরুল হাসান খান তোয়া কখনো বিএনপি বা স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। সে বিগত সময়ে অন্যদলের নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা করত। আমরা তোয়াকে কখনো দলীয় কর্মকাণ্ডে পাইনি। অথচ তাকে স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ কারণে আমরা কমিটির আহ্বায়কের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করছি।
নবগঠিত কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. হান্নান মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দল না করেও পদ পাওয়া যায়, এটা তোয়া প্রমাণ করেছে। অথচ ৫ আগস্টের আগে তাদেরকে কখনো দলে দেখিনি। তোয়া ছাড়াও এই কমিটিতে কৃষকদলের ওয়ার্ডের আহ্বায়ক প্রকৌশলী সবুজকে কোনো যাচাই-বাছাঁই না করেই স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য করা হয়েছে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ময়মনসিংহ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো. আমিনুল ইসলাম ফয়সাল।
তিনি বলেন, এই কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও অবগত। যাচাই-বাঁছাই করে নিয়ম মেনে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক তোয়াকে নিয়ে জাতীয় পার্টির এক নেতার সঙ্গে যে ছবি প্রকাশ হয়েছে সেটা সামাজিক ছবি, দলীয় কর্মকাণ্ডের নয়।
এই বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক সনিরুল হাসান খান তোয়াকে ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।