জুলাইয়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা ইসির
Published: 16th, April 2025 GMT
প্রাক-প্রস্তুতিমূলক কাজ গুছিয়ে নিয়ে চলতি বছরের জুলাইয়ের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) ঢাকার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার তাদের প্রস্তুতির বিষয়ে এমন তথ্য তুলে ধরেন।
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান রয়েছে। তবে বিয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই ডিসেম্বরে ভোট করার প্রস্তুতির তথ্য জানাল ইসি। তবে ইসি বরাবরই বলে আসছে, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের যে টাইমলাইন দেবে, সেটি ধরেই তারা নির্বাচন আয়োজন করবে।
আরো পড়ুন:
ঐক্যের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই: ফখরুল
সোমবার দেশে ফিরবেন মির্জা ফখরুল
বুধবারই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি প্রতিনিধি দল। এর নেতৃত্বে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় একেবারেই সন্তুষ্ট নন তারা।
বৈঠক শেষে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আলোচনায় বিএনপির নেতাদের খুশি দেখা গেছে; তারা ডিসেম্বরে নির্বাচন চান।
নির্বাচন ইস্যুতে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠকের ইসি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “শপথ নেওয়ার পর থেকেই আমরা নির্বাচন আয়োজনের বিভিন্ন কাজ শুরু করেছি। জাতীয় সংসদের সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তিসহ বিভিন্ন কাজ এরইমধ্যে শুরু করেছি।”
ডিসেম্বরকে ঘিরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “সরকারঘোষিত সময়সীমা ঘিরেই আমরা এগোচ্ছি; সেটি হচ্ছে ডিসেম্বর।”
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “এখন থেকে আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রাক-প্রস্তুতিমূলক কাজ (প্রি-ওয়ার্কগুলো) হয়ে যাবে। এখন আমরা সরকার ঘোষিত টাইমলাইন মাথায় রেখেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।”
দেশের বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে নির্বাচন সম্ভব কি না- জানতে চাইলে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমি বেশকিছু জেলায় ভিজিট করেছি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলেছেন, তারা আরো ইমপ্রুভ করবেন। আইনশৃঙ্খলা প্রতিদিন উন্নত হচ্ছে।”
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, "নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। নতুন যেসব দল নিবন্ধন পাবে এবং পুরানো দল—সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় করা হবে।
“নিবন্ধনের কাজ শেষ করা না হলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে কষ্ট থাকবে। সেদিক বিবেচনা করে, ইসি সঠিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে," যোগ করেন আনোয়ারুল ইসলাম।
আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে বিভিন্ন বক্তব্যে জানিয়ে আসছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসসহ তার নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তী সরকারের সদস্যরা।
বুধবার বিএনপির সঙ্গে বৈঠকের সময়ও একই অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। বিএনপি নেতারা এই বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেননি।
তবে বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, আলোচনায় বিএনপি নেতাদের দেখে খুশি মনে হয়েছে। তারা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়।
ঢাকা/হাসান/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম র জ ফখর ল ইসল ম আলমগ র ব এনপ উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট প রস ত ত ড স ম বর সরক র র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
আইনের হাত বনাম নিজের হাত
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশে গত ২৬ জুলাই-পরবর্তী আট মাসের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ ধরনের ঘটনার সংখ্যা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী। গণপিটুনি, স্থানীয়ভাবে বিচারকাজ পরিচালনা, মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ এসব অনিয়ন্ত্রিত প্রবণতা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে এবং আইনশৃঙ্খলার ভিত্তি দুর্বল করে দিচ্ছে।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস দানা বাঁধে, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। জনগণ যখন ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। এর ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বাড়ে।
এ সমস্যা নিরসনে যথাযথ আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করা, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতা কমিয়ে তার কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মিথ্যা অভিযোগ ও গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। কার্যকর ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপের মাধ্যমে একটি সুস্থ, ন্যায়ভিত্তিক ও স্থিতিশীল সমাজ গঠন সম্ভব।
অনেক সময় অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে ভুক্তভোগীদের দীর্ঘ সময় এবং অর্থ ব্যয় করতে হয়। অতীতে বহু অপরাধের বিচার হয়নি; প্রকৃত অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে এবং অপরাধীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব ব্যবহার করে অথবা আইন ও পুলিশি ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত বা অসম্পূর্ণ করে তোলে। অনেক সময় পুলিশের গাফিলতি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির কারণে অনেক অপরাধী বিচারের আওতার বাইরে থেকে যায়, যা জনগণের আইনের প্রতি আস্থা হ্রাস করে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অভিযোগকারীরা ন্যায়বিচার পান না। বরং মিথ্যা অভিযোগকারীরা রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করতে সক্ষম হয়। আমরা দেখেছি, পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে জনগণ গণপিটুনির মাধ্যমে বিচার সম্পন্ন করছে। এটি মূলত সমাজে ন্যায়বিচার প্রক্রিয়া ও প্রশাসনের প্রতি মানুষের ক্ষোভের ইঙ্গিত দেয়।
সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তারা মনে করে, প্রশাসন বা পুলিশ তাদের কাজ সঠিকভাবে করছে না। ফলে তারা নিজেদের উদ্যোগে শাস্তি দিয়ে প্রশাসনকে শেখাতে চায়– কীভাবে ন্যায়বিচার করতে হয়। প্রশাসনকে বিচার শেখানোর উদ্দেশ্যে এটি করা হলেও যদি বারবার তা ঘটতে থাকে, তা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। এভাবে সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা কোনোভাবেই আইনি বা ন্যায্য পদ্ধতির অংশ নয়।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কার্যকারিতা ও বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ব্যাহত হলে জনমনে অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা দীর্ঘ মেয়াদে রাষ্ট্রকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দিতে পারে। যখন জনগণ ন্যায়বিচার পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না, তখন তারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে উদ্বুদ্ধ হয়। ফলে সামাজিক স্থিতিশীলতা ব্যাহত হয় এবং অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
একটি সুস্থ সমাজ গঠনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন অপরিহার্য। জনগণের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ এবং মিথ্যা অভিযোগকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর দক্ষতা বৃদ্ধি, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে দেশ আরও নিরাপদ ও ন্যায়ভিত্তিক হবে। আইনের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো এবং বিচার প্রক্রিয়া কার্যকর করার মধ্য দিয়েই একটি আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা সম্ভব।
উছমান গনি: শিক্ষক
usmgoni@gmail.com