জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্থায়ন বন্ধের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের
Published: 16th, April 2025 GMT
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে হোয়াইট হাউস। মালি, লেবানন ও ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে মিশন ব্যর্থ হয়েছে, এমন অভিযোগ তুলে অর্থায়ন বন্ধের এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
জাতিসংঘে সবচেয়ে বেশি অর্থ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চীন। জাতিসংঘের নিয়মিত মূল বাজেট ৩৭০ কোটি মার্কিন ডলার। এ অর্থের ২২ শতাংশ আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। আর শান্তিরক্ষায় ৫৬০ কোটি ডলারের বাজেটের ২৭ শতাংশ দেয় ওয়াশিংটন। এই অর্থায়ন বাধ্যতামূলক।
আসন্ন অর্থবছরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য যে তহবিল বরাদ্দ বিবেচনা করা হচ্ছে, সেখান থেকেই শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য অর্থায়ন বাতিল করার প্রস্তাব করেছে অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট (ওএমবি)। আগামী ১ অক্টোবর থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।
এই প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের ‘পাসব্যাক’–এর অন্তর্ভুক্ত। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাজেট প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে এই পরিকল্পনা।
তবে নতুন বাজেট আগে অবশ্যই মার্কিন কংগ্রেসে অনুমোদন পেতে হবে এবং ট্রাম্প প্রশাসন বাজেট কাটছাঁটের যে প্রস্তাব রেখেছে, তার কিছু অংশ বা পুরোটাই ফেরত আনতে পারেন আইনপ্রণেতারা।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাজেটের তহবিল দিয়ে মালি, লেবানন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, সাহারার পশ্চিমাঞ্চল, সাইপ্রাস, কসোভো, সিরিয়া ও ইসরায়েলের দখল করা গোলান মালভূমির মধ্যাঞ্চল এবং দক্ষিণ সুদান ও সুদান দ্বারা যৌথভাবে পরিচালিত প্রশাসনিক অঞ্চল আবিয়েতে ৯টি শান্তিরক্ষা মিশন পরিচালিত হয়।
ওএমবি পাসব্যাক বিদেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সুবিধা দিতে ২১০ কোটি ডলারের আমেরিকা ফার্স্ট অপরচুনিটি ফান্ড (এ১ওএফ) নামে নতুন তহবিল খোলার প্রস্তাবও দিয়েছে।
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গতকাল এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। কারণ, এটিকে ফাঁস হওয়া নথি হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভেতর বিতর্ক হবে।
বকেয়া ও চলতি অর্থবছর মিলিয়ে জাতিসংঘ এখনো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তাদের নিয়মিত মূল বাজেটের জন্য প্রায় ১৫০ কোটি ডলার এবং শান্তিরক্ষার জন্য প্রায় ১২০ কোটি ডলার পায়।
বকেয়া পরিশোধে একটি দেশকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বকেয়া পরিশোধ না করলে দেশটি ১৯৩ সদস্যের সাধারণ পরিষদে ভোট দেওয়ার অধিকার হারানোর মতো সাজার সম্মুখীন হতে পারে।
গত মাসে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছিলেন, তিনি কার্যদক্ষতার উন্নতি এবং ব্যয় কমানোর রাস্তা খুঁজছেন। তহবিল–সংকটের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠার ৮০ বছর পূরণ করেছে জাতিসংঘ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র প রস ত ব র জন য তহব ল
এছাড়াও পড়ুন:
২ জুন বাজেট দেবে অন্তর্বর্তী সরকার
প্রতি অর্থবছরে জুন মাসের কোনো বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার রেওয়াজ থাকলেও এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করা হবে ২ জুন সোমবার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দেওয়া হতে পারে।
সচিবালয়ে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত আর্থিক, মুদ্রা ও বিনিময় হার-সংক্রান্ত সমন্বয় কাউন্সিল ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এবারের বাজেট হচ্ছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট।
ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট ঘোষণা করা হবে। ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হবে জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু থেকে। এ কারণে ২ জুন ঘোষণা করা হবে নতুন বাজেট। বাজেট ঘোষণার পরদিন রেওয়াজ অনুযায়ী বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনও করবেন অর্থ উপদেষ্টা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো এ তথ্য জানায়।
চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী বাজেটের মূল আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
জাতীয় সংসদ না থাকায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী বাজেট উপস্থাপন করবেন টেলিভিশনের পর্দায়। রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এ বাজেট ঘোষণা করা হবে। প্রচলিত বিধান অনুযায়ী, রাজনৈতিক সরকারের অর্থমন্ত্রীরা সংসদে বাজেট উপস্থাপন করেন। রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় না থাকায় এ বছর সেটি হবে না।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণের মাধ্যমে বাজেট উপস্থাপন করা হবে। সর্বশেষ ২০০৭-০৮ সালে টেলিভিশনে ভাষণের মাধ্যমে দুটি বাজেট ঘোষণা করেছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, ‘নানা কারণে আগামী বাজেট ছোট করতে হচ্ছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকারও ছোট হবে। নতুন করে বড় কোনো প্রকল্প নেওয়া হবে না। তবে যেসব বড় প্রকল্প আছে, সেগুলোতে অর্থায়ন চলমান থাকবে।’
সূত্রগুলো জানায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হবে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো। বরাদ্দের দিক থেকে আগামী বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে।
বাজেটের সিংহভাগ অর্থের জোগান দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আগামী অর্থবছরে সংস্থাটির জন্য ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। চলতি বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা বাজেটে থাকবে বলে জানা গেছে। প্রায় দুই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। আর চলতি অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচেই রাখা হবে। আগামী অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ।