উত্তর আমেরিকার মানচিত্রে ম্যাচিয়াস সিল দ্বীপ একটি ক্ষুদ্র বিন্দুমাত্র।

তবে জনবসতিহীন, কুয়াশায় ঢাকা পাথুরে এই দ্বীপটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই দ্বীপটি ‘গ্রে জোন’ হিসেবে পরিচিত অঞ্চলে অবস্থিত। কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিরল এক আন্তর্জাতিক বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে এই ছোট্ট দ্বীপ।

প্রতিবেশী ও দীর্ঘদিনের মিত্র এই দুই দেশই দীর্ঘদিন ধরে দ্বীপটি ও এর আশপাশের জলসীমার মালিকানা দাবি করে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে কানাডার নিউ ব্রান্সউইক প্রদেশ এই জায়গায় এসে মিলে গেছে। দুই দেশই সেখানকার মূল্যবান গলদা চিংড়ি ধরা ও বিক্রির অধিকার চায়।

গলদা চিংড়ি ধরেন এমন একজন মার্কিন জেলে হচ্ছে জন ড্রাইউন। তিনি ৩০ বছর ধরে গ্রে জোনে মাছ শিকার করছেন। তিনি বলছিলেন, প্রতিবছর গ্রীষ্মের শুরুর দিকে চিংড়ি শিকারের মৌসুমে মার্কিন ও কানাডীয় জেলেদের মধ্যে কে আগে ফাঁদ বসাবে, তা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। জন বলেন, এই করতে গিয়ে মানুষ শরীরের অঙ্গ হারিয়েছে, মাথায় আঘাত পেয়েছে, মাথা ফেটে গেছে—এমন সবকিছু হয়েছে।

এসব আঘাতের ঘটনা সাধারণত তখনই ঘটে, যখন এক জেলের জাল বা দড়িতে আরেকজন জেলে আটকে যায়। কানাডীয় এক জেলের দড়িতে আঙুল আটকে ড্রাইউনের এক বন্ধু আঙুল হারান। ড্রাইউন একে বলছেন তাঁর গ্রে জোন যুদ্ধের চিহ্ন।

১৭ শতকের শেষ দিক থেকে মাচিয়াস সিল দ্বীপ ঘিরে প্রায় ২৭৭ বর্গমাইল সমুদ্র এলাকা বিরোধপূর্ণ। ১৯৮৪ সালে আন্তর্জাতিক একটি আদালত দুই দেশকেই এই জলসীমায় মাছ ধরার অনুমতি দেন।

দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা এই বিরোধ কেবল একটি ব্যতিক্রম বলা যায়—দুই দেশের মধ্যে বিচ্ছিন্ন উত্তেজনার জায়গা। বাকি সব ক্ষেত্রে কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ।

তবে দুই দেশের এই সম্পর্ক এখন বদলাতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে ফেরা, কানাডার পণ্যে বড় অঙ্কের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং কানাডাকে ৫১তম রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার মতো বক্তব্য নতুন করে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। এত কিছুর মধ্যেও প্রশ্ন জাগে—ট্রাম্প আসলে কানাডার কাছ থেকে কী চান?

চিংড়ি নিয়ে যুদ্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের কাটলার ও মেইন হচ্ছে ‘গ্রে জোনের’ সবচেয়ে কাছের শহর। এখানে কিছু বাড়ি, একটি দোকান ও চিংড়ির একটি পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে।

সাগরে থাকা চিংড়ির ওপর মূলত কাটলারের অস্তিত্ব নির্ভর করে। এখানকার জেলেরা প্রতিদিন গালফ অব মেইনের তলদেশে ফাঁদ পেতে মূল্যবান চিংড়ি ধরে বাজারে বিক্রি করেন।

চিংড়ির মৌসুমে এই জলসীমা নৌকা ও দড়ির চিহ্নে ভর্তি থাকে। জায়গা ও জীবিকার জন্য জেলেদের লড়াই চলতে থাকে এবং মাঝেমধ্যে সেটা খারাপ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়।

গলদা চিংড়ি ধরেন এমন একজন মার্কিন জেলে হচ্ছে জন ড্রাইউন। তিনি ৩০ বছর ধরে গ্রে জোনে মাছ শিকার করছেন। তিনি বলছিলেন,  প্রতিবছর গ্রীষ্মের শুরুর দিকে চিংড়ি শিকারের মৌসুমে মার্কিন ও কানাডীয় জেলেদের মধ্যে কে আগে ফাঁদ বসাবে, তা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।

জন ড্রাইউন বলেন, ‘আমরা কি এই বিষয়টি পছন্দ করি?’ নিজেই জবাব দেন, একদমই না। তিনি বলেন, ‘যত দিন আমার নিশ্বাস থাকবে, তত দিন এ নিয়ে আমি অভিযোগ করে যাব।’

মেইনের আরেক জেলে নিক লেমিউ বলেন, গত কয়েক বছরে প্রায় ২০০ ফাঁদ চুরি হয়েছে। এসব ঘটনার জন্য তিনি কানাডিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীদের দায়ী করেন।

নিক লেমিউ বলেন, ‘এটি আমাদের এলাকা। এটিই আমাদের কাজ করার জায়গা। এমন ব্যাপার আমাদের ভালো লাগে না।’

মার্কিন জেলেদের অভিযোগ করেন, বড় চিংড়ি কীভাবে ধরা যায়, সেই নিয়ম তৈরি করে কানাডীয়রা কাজ করছে।

কানাডীয় জেলেরাও পাল্টা অভিযোগ করেন, মার্কিন জেলেরা তাদের জলসীমা অতিক্রম করে গোপনে কানাডার জলসীমায় ঢুকে পড়ছেন।

কানাডার সীমান্ত কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিত্ব করে এমন একটি ইউনিয়ন অভিযোগ করেছে, তাদের রীতিনীতির প্রয়োগের চেষ্টার জবাবে মার্কিনরা সহিংসতার হুমকি দিয়েছে। এ কারণে কানাডার কিছু কর্মকর্তা ‘গ্রে জোনে’ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

কানাডা মাচিয়াস সিল দ্বীপে থাকা স্বয়ংক্রিয় বাতিঘরের দেখাশোনা করতে সেখানে নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ কর্মীদের পাঠায়। কানাডা বলছে, দ্বীপ যে তাদের নিয়ন্ত্রণের, এটিই তার প্রমাণ। অন্যদিকে, মার্কিনরা যুক্তি দিচ্ছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ইউএস মেরিন দ্বীপটি দখলে রেখেছিল। সেটাই হচ্ছে তাদের সার্বভৌমত্বের প্রমাণ।

ম্যাচিয়াস সিল দ্বীপ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড র ইউন জলস ম

এছাড়াও পড়ুন:

পেনাল্টি পেতে ‘মাটিতে পড়ে অভিনয় করেছে এমবাপ্পে’

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে নাটকীয় এক মুহূর্তে পেনাল্টি দাবি করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। তবে সেই দাবি নস্যাৎ হয়ে যাওয়ার পর কী ঘটেছিল মাঠে? ম্যাচ শেষে জানালেন আর্সেনালের মিডফিল্ডার ডেকলান রাইস নিজেই।

প্রথমার্ধে তখনো ৩-০ গোলে এগিয়ে আর্সেনাল। বুকোয়ো সাকার মিস করা পেনাল্টির ঠিক পরেই ডি-বক্সে রাইসের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান এমবাপ্পে। রেফারি সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়ে রাইসকে একটি হলুদ কার্ড দেখান। তবে দীর্ঘ ভিএআর পর্যবেক্ষণের পর দুই সিদ্ধান্তই প্রত্যাহার করা হয়। পেনাল্টি বাতিলের সঙ্গে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন রাইসও।

ম্যাচ শেষে টিএন্ডটি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাইস বলেন, ‘আমি জানতাম ওটা পেনাল্টি নয়। ওর শরীরে আমার হাত ছিল, কিন্তু একজন মিডফিল্ডার হিসেবে এটা করতেই হয়। আমি সৎ একজন মানুষ, তাই সঙ্গে সঙ্গেই এমবাপ্পেকে বলেছিলাম, এটা কোনো পেনাল্টি ছিল না। ও নিজেই মাটিতে পড়ে অভিনয় করেছে। শেষ পর্যন্ত আমরা কাজটা ঠিকঠাক শেষ করেছি, এবং এটা ক্লাবের ইতিহাসে স্মরণীয় এক রাত।’

রাইসের এই সততাই হয়তো তাকে ম্যাচসেরার পুরস্কার এনে দিয়েছে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-১ ব্যবধানে এগিয়ে সেমিফাইনালে পা রাখে আর্সেনাল, যেখানে তারা মুখোমুখি হবে ফরাসি জায়ান্ট পিএসজির। অন্যদিকে আরেক সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা ও ইন্টার মিলান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফুটবলে তিন ছেলের কে কেমন, জানালেন মেসি
  • ‘কী সুন্দর তাই না, একজন শিক্ষকের এই পরিণতি’
  • ভৈরবে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৩০
  • ধর্ষণের শিকার দাবি করা নারীর বক্তব্য ওসির মুঠোফোনে ধারণের পর ফেসবুকে, সমালোচনা
  • তিন ছেলের মধ্যে ফুটবলে কে সেরা, মেসি যা বললেন
  • সিরাজগঞ্জে ট্রাক-মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২ 
  • ঢাকার শেওড়াপাড়ায় চাপাতি ঠেকিয়ে তরুণীর চেইন ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১, দুজনকে খুঁজছে পুলিশ
  • ট্রাম্পের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করবেন জোনাথন কার্ল
  • রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় চাপাতি ঠেকিয়ে ছিনতাই, ভিডিও ভাইরাল
  • পেনাল্টি পেতে ‘মাটিতে পড়ে অভিনয় করেছে এমবাপ্পে’