সরকারি টাকা আত্মসাৎ: সালমান-শিবলীসহ ৩০ জনের নামে দুদকের মামলা
Published: 16th, April 2025 GMT
সরকারের ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, তার ছেলে আইএফআইসি ব্যাংকের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল- ইসলামসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো.
অভিযোগ করা হয়েছে, এসব অর্থ বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করে সেখান থেকে নগদে ও বিভিন্ন লেনদেনের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ এবং আত্মসাৎ করা অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেছেন আসামিরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুদকের সহকারী পরিচালক (বিশেষ তদন্ত-২) সাজ্জাদ হোসেন বাদী হয়ে ঢাকায় সংস্থাটির সমন্বিত কার্যালয়ে মামলা দায়ের করেছেন। দুদকের মহাপরিচালক আক্তার হোসেন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭৩/১০৯সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১৫ এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন, (১) মো. মশিউজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড; (২) তিলাত শাহরিন, পরিচালক, শ্রীপুর টাউনশীপ লিমিটেড; (৩) সালমান এফ রাহমান, সাবেক চেয়ারম্যান, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৪) আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৫) মো. শাহ আলম সারোয়ার, সাবেক ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৬) সুধাংশু শেখর বিশ্বাস, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৭) রাবেয়া জামালী, সাবেক পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (০৮) এ আর এম নাজমুস সাকিব, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৯) কামরুন নাহার আহমেদ, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১০) গোলাম মোস্তফা, সাবেক পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১১) মো. জাফর ইকবাল, সাবেক পরিচালক, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১২) শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি); (১৩) রুমানা ইসলাম, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৪) মিজানুর রহমা, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৫) শেখ শামসুদ্দিন আহমে, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৬) মো: আবদুল হালিম, সাবেক কমিশনার, বিএসইসি; (১৭) সৈয়দ মনসুর মোস্তফা, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ক্রেডিট অফিসার, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১৮) শাহ মো: মঈনউদ্দিন, হেড অব লোন পারফরম্যান্স ম্যানেজমেন্ট, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (১৯) মো. রফিকুল ইসলাম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ বিজনেস অফিসার (রিটেইল), আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২০) গীতাঙ্ক দেবদীপ দত্ত, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ বিজনেস অফিসার (কর্পোরেট), আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২১) মো: নুরুল হাসনাত, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ অব আইটি, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২২) মনিতুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চিফ ইনফরমেশন অফিসার, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৩) মোহাম্মদ শাহিন উদ্দিন, হেড অব ট্রেজারি, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৪) নাজিমুল হক, সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক, ধানমন্ডি শাখা ও এফভিপি, প্রিন্সিপাল ব্র্যাঞ্চ, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৫) হোসাইন শাহ আলী, সাবেক ব্যবস্থাপক, প্রিন্সিপাল ব্র্যাঞ্চ, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৬) সরদার মো. মমিনুল ইসলাম, রিলেশনশিপস ম্যানেজার, প্রিন্সিপাল ব্র্যাঞ্চ, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (২৭) নিমাই কুমার সাহা, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড; (২৮) মো. মিজানুর রহমান, কোম্পানি সেক্রেটারি, সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড; (২৯) আয়েশা সিদ্দিকা, এসপিও, শাহজালাল এভিনিউ শাখা, আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি; (৩০) সিলভিয়া চৌধুরী, এফএভিপি, গুলশান শাখা, আইএফআইসি ব্যাংক।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সিআইবি প্রতিবেদন সংগ্রহ না করেই ও প্রস্তাবিত মর্টগেজ সম্পত্তি সরেজমিনে পরিদর্শন বা মূল্য যাচাই না করেই অস্বাভাবিক অতি মূল্যায়ন (৮৭ কোটি টাকার জমিকে ১০২০ কোটি টাকায় মূল্যায়ন) করে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের মালিকানাধীন মাসখানেক আগে রেজিস্ট্রি করা কথিত কোম্পানির তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বন্ডের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে ১ হাজার কোটি টাকা উত্তোলনপূর্বক শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেডের চলতি হিসাবে জমা করেন। এর পর সেখান থেকে ২০০ কোটি টাকার এফডিআর করে অবশিষ্ট ৮০০ কোটি টাকা (সরকারি অর্থ) বেক্সিমকো ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডসহ বেক্সিমকো গ্রুপ ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের হিসাবে স্থানান্তর করেন। সেখান থেকে ব্যাংকিং নিয়মাচারের তোয়াক্কা না করে নগদে ও বিভিন্ন রকম সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। আত্মসাৎ করা অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের মাধ্যমে দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭৩/১০৯সহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১৫ এর ৪ ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রতীয়মান হওয়ায় দুদকের অনুমোদনক্রমে আসামিদের বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ র প র ট উনশ প ল ম ক প এলস র রহম ন ব এসইস অফ স র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সমস্যা সবই জানা, সমাধানে মানসিকতার বদল জরুরি
শেয়ারবাজার সমস্যা বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ও শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, শেয়ারবাজারের সমস্যা সবই জানা। এগুলোর সমাধানে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।
শেয়ারবাজারের সমস্যা এবং উত্তরণের পথ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত জানতে ড. আনিসুজ্জামান গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি কার্যালয়ে যান। সেখানে বিএসইসি কর্মকর্তা এবং বাজার অংশীজনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম বিএসইসি কার্যালয়ে যান তিনি।
শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ১৯ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি) ড. আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। গতকালের বৈঠকে কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. সাদেকুল ইসলাম এবং অপর সদস্য এফআইডির অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব উপস্থিত ছিলেন।
ড. আনিসুজ্জামান প্রথমে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে বাজার অংশীজন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাদা বৈঠক করেন। বৈঠকে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান, সিডিবিএলের এমডি এবং ডিএসই ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপক, নিরীক্ষক, ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। উভয় বৈঠকে বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদসহ তিন কমিশনার অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বিএসইসি বা বাজার অংশীজনের কেউই বাজারের জানা সমস্যার বাইরে নতুন কিছু জানাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেছেন আনিসুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আপনারা যেসব কথা বলেছেন, তার সবটাই জানা। সমস্যার কথা সবাই জানে। তবে সমাধান কীভাবে চান, সে বিষয়ে শুনতে চাই।’ তিনি সবার কাছে সমাধানের লিখিত প্রস্তাব চেয়েছেন।
শেয়ারবাজার বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণের আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পরিদর্শন এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার কার্যালয়ের বাইরে ব্রোকারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কমিটির বৈঠকের প্রস্তাব করেন ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। বিএসইসির চেয়ারম্যান ডিএসইর পরিবর্তে তা সিএসইতে করার পক্ষে মত দেন। তাঁর কথা, ডিএসইতে এ ধরনের বৈঠক বহু হয়, সে তুলনায় সিএসইতে কম হয়।
সূত্র জানায়, বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে কমিটিকে শেয়ারবাজারের বর্তমান আকার এবং এর কাঠামোগত বিষয়ে ধারণা দেন কর্মকর্তারা। তারা জানান, এ বাজার বর্তমানে বড় ধরনের যেসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, সেগুলোর অন্যতম হলো– নেগেটিভ ইক্যুয়িটি ইস্যু, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানিতে সুশাসনের অভাব, ভালো আইপিওর অভাব, বিনিয়োগ পণ্যের ঘাটতি এবং বাজার কারসাজিসহ শেয়ারবাজার ইস্যুতে বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট।
আলোচনায় ডিএসইর চেয়ারম্যান জানান, শেয়ারবাজারের লেনদেন ব্যাপক হারে কমায় লেনদেনে উৎসে কর বেশি থাকায় ব্রোকারেজ হাউসগুলোর ব্যবসা করে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই উৎসে কর কমানো দরকার। সিএসইর চেয়ারম্যান জানান, আগামী এক মাসের মধ্যে কমোডিটি এক্সচেঞ্জের পরীক্ষামূলক লেনদেন চালু হবে। প্রাথমিকভাবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জে স্বর্ণ, তুলা, পাট বা কমিশন যেসব পণ্য কেনাবেচার অনুমোদন দেবে, সেগুলো কেনাবেচা হবে।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রূপালী চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, ভালো মূল্য ও কর সুবিধা না থাকায় দেশের বড় ও স্বনামধন্য কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় না। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সভাপতি মাজেদা খাতুন বলেন, শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা হলে সবাই সেকেন্ডারি শেয়ারবাজার নিয়ে আলোচনা করেন, যেখানে আইপিও নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়া উচিত।
বৈঠকে অন্যরা স্টক এক্সচেঞ্জসহ লেনদেনে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি আছে বলে জানান। তারা নগদ লভ্যাংশ বিতরণে বিলম্ব বা না দেওয়া ঠেকাতে তৃতীয় পক্ষের সম্পৃক্ততা এবং আইপিওতে ভালো কোম্পানিকে আকৃষ্ট করতে কর রেয়াত সুবিধা বাড়ানোর সুপারিশ করেন।