কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) হাতে অপহৃত ৫৫ জন জেলেকে ফেরত এনেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ট্রলারে করে ৫৫ জনকে নাফ নদীর টেকনাফ পৌরসভার ট্রানজিট ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে জেলেদের দমদমিয়া বিজিবি বিওপিতে নেওয়া হয়। জেলেদের মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশি। অপর ৪২ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা টেকনাফের বিভিন্ন ট্রলারে জেলে হিসেবে কাজ করছিলেন।

বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ মাসে আরাকান আর্মি নাফ নদী ও তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকে ১৫১ জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিজিবি ১৩৪ জনকে ফেরত এনেছে। সর্বশেষ আজ বিজিবির তৎপরতায় আরাকান আর্মি ৫৫ জন জেলেকে ফেরত দিয়েছে।

টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.

আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সময় নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী এলাকায় মাছ ধরার সময় আরাকান আর্মির সদস্যরা পৃথক পৃথক ঘটনায় জেলেদের ট্রলারসহ ধরে নিয়ে যান। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল ৪টি ট্রলারসহ ২৩ জেলেকে ধরে নিয়ে যান। এ বিষয়ে আরাকান আর্মির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করে বিজিবি কর্তৃপক্ষ। এরই ধারাবাহিকতায় আজ ৫৫ জন জেলেকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি। ফেরত আনা বাংলাদেশি জেলেদের পুলিশের মাধ্যমে অভিভাবকদের হাতে হস্তান্তর এবং রোহিঙ্গা জেলেদের আশ্রয়শিবিরে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। ফেরত আনা জেলেরা বর্তমানে দমদমিয়া বিজিবি হেফাজতে রয়েছে।

সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা ১১ মাসের লড়াই–সংঘাতের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকা (২৭১ কিলোমিটার) দখলে নেয় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এরপর নাফ নদীতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বাংলাদেশ জলসীমানার টেকনাফের জেলেরা মাছ ধরতে গেলে ধরে নিয়ে যায়। গত পাঁচ মাসে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা কয়েক দফায় ১৫১ জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

বুধবার ফিরে আসা কয়েকজন জেলে জানান, অপহরণের পর আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশি জেলেদের রাখাইন রাজ্যের ধামনখালী ও নাক্ষ্যংদিয়া ফাঁড়িতে আটকে রেখেছিল। অপহরণের সময় ট্রলারসহ বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নেওয়া হলেও ট্রলার ফেরত দেওয়া হয়নি। রাখাইন রাজ্যের ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া ১০-১২টি টেকনাফের মাছ ধরার ট্রলার পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র জন জ ল ন ফ নদ

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি

‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে। 
আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।

পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। 

অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে। 

এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন দিনেও উদ্ধার হয়নি পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী
  • খাগড়াছড়িতে অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে অভিযান অব্যহত
  • হাত জোড় করছি, ফিরিয়ে দিন সন্তানদের
  • সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি
  • চবির ৫ শিক্ষার্থীর অবস্থান শনাক্ত, বিশেষ অভিযান চলছে: সেনাবাহিনী
  • আপন মামার হাতে খুন রোহিঙ্গা কিশোর, মুক্তিপণ দিয়েও রক্ষা হয়নি
  • গোবিন্দগঞ্জে স্কুলছাত্র সাব্বির হত্যার বিচারের দাবিতে মহাসড়কে অবস্থান
  • ইউপিডিএফের বিরুদ্ধে চবির ৫ শিক্ষার্থী অপহরণের অভিযোগ
  • বেড়ানোর কথা বলে অপহরণ, মুক্তিপণ না পেয়ে মামার হাতে ভাগনে খুন