পাবনায় নিখোঁজ শিশুর মুখ–ঝলসানো লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা, ধর্ষণের আলামত পায়নি পুলিশ
Published: 16th, April 2025 GMT
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় ফসলের মাঠ থেকে আট বছরের এক মেয়েশিশুর লাশ উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে শিশুটির মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে চাটমোহর থানায় মামলাটি করেছেন। তবে এ ঘটনায় আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে শিশুটির শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি বলে তিনি দাবি করেন।
মারা যাওয়া শিশুটির বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলার চাঁন্দাই ইউনিয়নে। মেয়েটি স্থানীয় মাদ্রাসায় শিশু শ্রেণিতে পড়ত। গত সোমবার বিকেলে দাদাবাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয় সে। সেখানে কিছুক্ষণ খেলাধুলার পর সন্ধ্যায় বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ ছিল। গতকাল দুপুরে পাবনা ও নাটোরের সীমান্তবর্তী একটি গ্রামের ভুট্টাখেতে শিশুটির লাশ পাওয়া যায়।
যোগাযোগ করা হলে শিশুটির মা বলেন, কেন, কারা তাঁর মেয়েকে কী কারণে হত্যা করেছে, তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না। তবে যারাই হত্যা করুক, তিনি তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির দাবি জানান।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল আলম জানান, নারী পুলিশ সদস্যরা শিশুটির সুরতহাল করেছেন। প্রাথমিকভাবে মেয়েটির শরীরে ধর্ষণের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তবে মেয়েটির মুখে কয়েকটি ফুসকুড়ি দেখা গেছে। এটা গরম পানি অথবা দাহ্য কোনো পদার্থ দিয়ে হতে পারে। আজ দুপুরে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে মেয়েটির লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে।
ওসি মঞ্জুরুল আলম বেলা ২টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলেই আছি। বিভিন্ন ক্লু ধরে মামলাটির তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি খুব দ্রুতই হত্যাকারীকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।’
সহযোগিতার আশ্বাস তারেক রহমানেরহত্যা মামলাটি পরিচালনার জন্য শিশুর পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ভুক্তভোগী পরিবারকে তাৎক্ষণিক তাঁর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হয়েছে।
নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল কাদের মিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল আজ বুধবার সকালে নিহত শিশুর বাড়িতে যান। তাঁরা তারেক রহমানের সহমর্মিতা পৌঁছে দেন। আবদুল কাদের মিয়া বলেন, এই নির্মম ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক বিচারে বিএনপি সার্বিক সহযোগিতা করবে।
আরও পড়ুননিখোঁজের পরদিন শিশুর মুখ ঝলসানো লাশ উদ্ধার১৫ এপ্রিল ২০২৫এদিকে শিশুটির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে নাটোরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। বুধবার দুপুরে নাটোর শহরের কানাইখালী চত্বরে আয়োজিত কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের সময়সীমা বেঁধে দেন।
সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাটোর জেলা শাখার আহ্বায়ক শিশির মাহমুদ বলেন, সাত বছরের শিশুর উদ্ধার হওয়া মরদেহ দেখেই অনুমান করা যায় ঘটনাটি কত নিষ্ঠুর। ধারণা করা হচ্ছে, শিশুটিকে ধর্ষণ করার পর তাকে গলা টিপে হত্যা করে বিবস্ত্র অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। এই জঘন্য অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকালে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে। একই দাবিতে জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া শহরেও শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীকে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার রহিমাপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়কে হত্যা করার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রংপুর–দিনাজপুর মহাসড়কের তারাগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
মানববন্ধনে বক্তারা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। বক্তারা বলেন, নিজ বাড়িতে দম্পতিকে হত্যা করা হলো অথচ পুলিশ গত পাঁচ দিনেও ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করতে পারল না। ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।
মানববন্ধনে রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক আনছার আলী, যুগ্ম আহ্বায়ক শাজাহান খান, সদস্যসচিব ফজলার রহমান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের আহ্বায়ক আলী হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সভাপতি রেজাউল করিম বক্তব্য দেন।
পুলিশ জানায়, গত শনিবার রাতে নিজ বাড়িতে খুন হন বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ চন্দ্র রায় ও তাঁর স্ত্রী সুবর্ণা রায়। গত রোববার সকালে প্রতিবেশীরা ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে সন্দেহ হলে মই বেয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রধান দরজার চাবি খুঁজে পেয়ে খুলে ঘরে ঢোকার পর প্রথমে ডাইনিং রুমে যোগেশ চন্দ্র রায়ের ও রান্নাঘরে সুবর্ণা রায়ের রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান তাঁরা।
আরও পড়ুনরংপুরে নিজ বাড়ি থেকে মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁর স্ত্রীর রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার০৭ ডিসেম্বর ২০২৫পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে গত সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে যোগেশ চন্দ্র রায় ও সুবর্ণা রায়ের লাশ তাঁদের বাড়ি নিয়ে আসা হয়। এরপর যোগেশ চন্দ্র রায়কে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রীয় সম্মান শেষে তাঁদের সৎকার করা হয়। এ ঘটনায় দম্পতির বড় ছেলে শোভেন চন্দ্র রায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে তারাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।