সোভিয়েত সেনাদের আসলেই কি পাথর বানিয়ে দিয়েছিল ভিনগ্রহের প্রাণীরা, কী বলছে সিআইএর নথি
Published: 16th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার একটি গোপন নথি প্রকাশ করেছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সোভিয়েত সেনাদের সঙ্গে একটি ইউএফওর (অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু) সংঘর্ষ নিয়ে বিভিন্ন বিষয় সেখানে উল্লেখ করা আছে। বলা হয়েছে, ওই ইউএফওতে যাত্রী হিসেবে থাকা ভিনগ্রহের প্রাণীরা সোভিয়েত সেনা দলটিকে পাথরে রূপান্তরিত করে দিয়েছিল।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর কেজিবির ২৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন হাতে পায় সিআইএ। কেজিবি হলো সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা। ইউক্রেনের আকাশ দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি ইউএফওকে লক্ষ্য করে একটি সোভিয়েত সেনা দল গুলি ছোড়ার পরবর্তী ঘটনাগুলো নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল।
প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং ঘটনার পরবর্তী সময়ের ছবি যুক্ত করা হয়েছিল। এ সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে এক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘এটি ভিন গ্রহের প্রাণীদের প্রতিশোধের এমন এক ভয়াবহ চিত্র, যা যে কারওরই রক্ত হিম করে দেয়।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে প্রশিক্ষণরত সোভিয়েত সেনা দল অনেকটা নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া একটি আকাশযান শনাক্ত করে। ইউএফও আকৃতির ওই যানটি তাঁদের মাথার ওপর দিয়ে ঘোরাফেরা করছিল।
এ সময় সোভিয়েত সেনাদের একজন ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য একটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়েন। ক্ষেপণাস্ত্রটি ইউএফওতে আঘাত করে এবং এটি মাটিতে বিধ্বস্ত হয়।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, বিধ্বস্ত হওয়া যানটি থেকে বড় মাথা এবং বড় কালো চোখওয়ালা মানুষসদৃশ পাঁচটি প্রাণী বের হয়ে এসেছিল।
ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়া সেনাদের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রাণীগুলো বিধ্বস্ত হওয়া যানটির ধ্বংসাবশেষ থেকে বের হয়ে একসঙ্গে জড়ো হয়েছিল। এরপর তারা একটি একক বস্তুতে পরিণত হয়েছিল এবং তা গোলাকৃতি ধারণ করেছিল। কয়েক সেকেন্ডের ভেতর গোলাকৃতির বস্তুটি অনেক বড় হয়ে যায় এবং অনেক আলোক বিকিরণ তৈরি করে বিস্ফোরিত হয়। ঠিক সে সময় ঘটনাটি দেখছিলেন এমন ২৩ জন্য সেনা পাথরের খুঁটিতে পরিণত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাত্র দুজন সেনা প্রাণে বেঁচেছিলেন। ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকায় এবং আলোক বিকিরণকারী বিস্ফোরণের সংস্পর্শে কম আসার কারণে তাঁরা বেঁচে যান।
অভিযোগ আছে, কেজিবির সদস্যরা ‘পাথর হয়ে যাওয়া’ সেনা সদস্য। রুশ সেনাদের একটি দল বিধ্বস্ত যানটিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল এবং সেগুলোকে মস্কোর কাছে একটি গোপন ঘাঁটিতে নিয়ে গিয়েছিল।
সিআইএর ওই প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়, ‘যদি কেজিবির নথিটি বাস্তবতার সঙ্গে মিলে যায়, তাহলে এটি একটি অত্যন্ত ভয়ংকর ঘটনা। এর মানে, অ্যালিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের কাছে এমন অস্ত্র ও প্রযুক্তি আছে, যা আমাদের সব ধারণার বাইরে। আক্রমণ হলে তারা নিজেরাই নিজেদের সুরক্ষা দিতে পারে।’
সিআইএ ২০০০ সালে সর্বপ্রথম নথিটি প্রকাশ করেছিল। মূলত তখন কানাডীয় সাপ্তাহিক ওয়ার্ল্ড নিউজ এবং ইউক্রেনের সংবাদপত্র হোলোস ইউক্রেয়েনিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়েছিল। কিন্তু ঘটনাটি ইউএফও (আন-আইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অবজেক্ট) প্রেমীদের কাছে আগ্রহের বিষয় হিসেবে থেকে যায়। গত বছর ‘দ্য জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স’ পডকাস্টেও এটি প্রকাশ করা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তিউনিসিয়ার গুপ্তহত্যা, ওসমান হাদিকে গুলি ও বিপজ্জনক রাজনীতি
গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী তিউনিসিয়ায় প্রথম নির্বাচন হয় ২০১১ সালে। নির্বাচনের পরে, বেশ অস্থিতিশীল একটা সরকারের সময়, কয়েক মাসের ব্যবধানে চকরি বেলাইদ ও মোহামেদ ব্রাহিমি ‘মোটরসাইকেলে চড়ে আসা’ আততায়ীর গুলিতে গুপ্তহত্যার শিকার হন। আজ এটা স্বীকৃত যে, আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সঙ্গে এই দুটি হত্যাকাণ্ড তিউনিসিয়ায় গণতন্ত্রের যে স্বপ্ন ছিল, সেটি যে আজ প্রায় ধ্বংসের পথে, তার জন্য দায়ী।
টার্গেট শরিফ ওসমান হাদি হবেন কি না সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছিল না, কিন্তু এ ধরনের ঘটনা যে ঘটবে, সেটার যৌক্তিক অনুমান করা যাচ্ছিল। এর প্রাথমিক কারণ, দেশে-বিদেশে থাকা কিছু শক্তি চায় না বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাক।
এটাও আমরা জানি, একটা রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার যেকোনো অপচেষ্টা নস্যাৎ করা সম্ভব হয় যদি সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সততা এবং পেশাদারির সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে যায়। কিন্তু বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দক্ষতার স্বাক্ষর তো রাখতে পারেইনি, খুব সাধারণ পারফরম্যান্সও দেখাতে পারেনি। কিছুদিন আগে প্রথম আলোর মাধ্যমে পরিচালিত জনমত জরিপেও দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের ওপরে ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ অসন্তুষ্ট।
গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের গতিপথ তিউনিসিয়ার সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই মেলে। সে কারণেই আমাদের সুযোগ ছিল তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের ভুলগুলো এড়িয়ে যাওয়ার। অনেক ক্ষেত্রেই আমরা পারিনি সেটা।দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুব ভালো হবে, এটা প্রত্যাশা আমরা করিনি। শেখ হাসিনার অপশাসনের ফলে প্রায় পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত পুলিশ বাহিনী তার মনোবল ফিরে পেতে সংগ্রাম করেছে। কিন্তু এই বাস্তবতা মেনে নেওয়ার পরও বলতে হবে, আইনশৃঙ্খলার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল, বিশেষ করে এমন একটা সময়ে যখন সেনাবাহিনীও ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে আছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল, এমনটিও মনে হয়নি অনেক সময়।
দীর্ঘকাল স্বৈরাচারী শাসনের প্রতিক্রিয়ায় কোনো দেশে গণ-অভ্যুত্থান হলেই অভ্যুত্থানকারীরা সফল হবেনই এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। বরং মধ্যপ্রাচ্যে একের পর এক দেশে এ ধরনের গণ-অভ্যুত্থান গড়ে ওঠার সময়টায় (আরব বসন্ত) অন্তত তিনটি দেশ (সিরিয়া, লিবিয়া, ইয়েমেন) দীর্ঘমেয়াদি গৃহযুদ্ধের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
আরও পড়ুনওসমান হাদিকে হামলা: গুলির লক্ষ্য একজন না, লক্ষ্য নির্বাচন?১৮ ঘণ্টা আগেআর কর্তৃত্ববাদী শাসকের পতন ঘটানোর সাফল্য এসেছিল যে দেশগুলোতে (তিউনিসিয়া, মিসর) সেগুলো গেছে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতার মধ্য দিয়ে। একটা স্বৈরাচারী সরকার তার ক্ষমতায় থাকাকে নিশ্চিত করার জন্য ভেঙে ফেলে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান, ফলে স্বৈরশাসকের অনুপস্থিতিতে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো সেই অর্থে ক্রিয়াশীল থাকে না।
এমন প্রেক্ষাপটে অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর সবচেয়ে জরুরি কাজ অত্যন্ত কঠিন হলেও নিজেদের মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতকে খুব খারাপ পর্যায়ে নিয়ে না যাওয়া। বিশেষ করে নিজেদের মধ্যে মতাদর্শগত বিভেদ যতটা সম্ভব এড়ানো।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক দলগুলোর মধ্যে চিন্তা, কর্মসূচি এবং মতাদর্শগত পার্থক্য থাকবেই এবং সেটা নিয়ে বিতর্ক তো বটেই ঝগড়াবিবাদও হতে পারে। কিন্তু দল এবং শক্তিগুলো পরস্পরের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য হুমকি তৈরি করে।
আর গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী প্রায় ভেঙে পড়া রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন প্রবণতা ভয়াবহ বিপদের কারণ হতে পারে, যা এমনকি গৃহযুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদি। শুক্রবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ১২ ডিসেম্বর ২০২৫