পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবিতে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ, অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত নড়িয়ার ‘সর্বস্তরের জনসাধারণ’—এর ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।

কর্মসূচি চলাকালে কার্যালয়ে ছিলেন না উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। ওই সময় সেবা নিতে ইউএনওর কার্যালয়ে যেতে পারেননি লোকজন। এর আগে গত সোমবার চরআত্রা এলাকায় ও গতকাল মঙ্গলবার একই দাবিতে নড়িয়া উপজেলা সদরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, নড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদের (রয়েল) নেতৃত্বে পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায় ৩০টি খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নড়িয়ার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ ও ফসলি জমি ভাঙনের মুখে পড়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির নেতা ফরিদ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নড়িয়ার যে তীরে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে, তার বিপরীত পাশে চর পড়ে যাচ্ছে। ওই চরের কারণে ডান তীরে ভাঙন হতে পারে—এমন বাস্তবতায় স্থানীয় প্রশাসন চরের স্তূপ করা বালু নিলামে দিয়েছে। তিনি নিলামে অংশ নিয়ে ১০ কোটি ঘনফুট বালু কিনেছেন। ড্রেজারের চালকদের নদী থেকে বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) শরীয়তপুর কার্যালয় ও নড়িয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নড়িয়ার পদ্মার তীরবর্তী গ্রামগুলোয় নদী ভাঙছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনে নড়িয়ার ২৫ হাজার পরিবার গৃহহীন পড়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়েছে অসংখ্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক। ভাঙনের কবল থেকে নড়িয়ার মানুষকে রক্ষা করার জন্য ২০১৯ সালে পাউবো নড়িয়া-জাজিরা পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। জাজিরার শফিকাজীর মোড় থেকে নড়িয়ার সুরেশ্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ দশমিক ২ কিলোমিটার নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার নদীর চর খনন করা হয়েছে। ওই বাঁধ মজবুত করার জন্য নড়িয়ার সুরেশ্বর থেকে মুলফৎগঞ্জ পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার এলাকায় নদীতে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১ লাখ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এসব কাজ গত মার্চে শেষ করেছে পাউবো। সম্প্রতি চরের স্তূপ করা ১০ কোটি ঘনফুট বালু নিলামে বিক্রি করে উপজেলা প্রশাসন।

শরীয়তপুরের পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সজল পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। নড়িয়ায় ডানতীর রক্ষা বাঁধের আশপাশ থেকে যাতে কেউ বালু উত্তোলন না করতে পারেন, সে জন্য উপজেলা প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটেরা অভিযান চালিয়েছেন। অভিযানে আটটি খননযন্ত্র জব্দ করে খননযন্ত্রের মালিকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়েছে। তারপরও যদি কেউ বালু উত্তোলন করে থাকেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মালয়েশিয়ায় যাত্রার স্বপ্ন ভঙ্গ, মিয়ানমারের জেলে

দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে যাত্রা করেছিল নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজারের এক কিশোর। কিন্তু ধরা পড়ে মিয়ানমার পুলিশের হাতে। ২২ মাস জেল খেটে অবশেষে সে ফিরেছে মায়ের বুকে।

উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী খোঁজপাড়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে সাজ্জাদ মিয়া। অর্থ উপার্জনের আশায় ঝুঁকি নিয়ে মাত্র ১৪ বছর বয়সে দালালের খপ্পরে পড়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে বাড়ি ছাড়ে সাজ্জাদ। ২০২৩ সালের জুন মাসেই সে ধরা পড়ে মিয়ানমার পুলিশের হাতে। সেই দেশের আদালত তাকে দুই বছরের সাজা দিয়ে মালাইবানের কেলিকং জেলে আটকে রাখে। তবে মিয়ানমার সরকার এ কিশোরকে পাঁচ মাস জেল খাটার পর দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় কাগজপত্রে। পরে কূটনৈতিক পর্যায়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে তাকে সেই দেশের জেল থেকে মুক্ত করে মঙ্গলবার সমুদ্র পথে আনা হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ও থানার ওসির উপস্থিতিতে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

গতকাল বুধবার বিকেলে আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সাজ্জাদের বাবা আব্দুল হান্নান জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে সাজ্জাদ। দালালের খপ্পরে পড়ে তাঁর ছেলে মালয়েশিয়া যেতে চেয়েছিল। তাদের কিছু না বলেই সে চলে গিয়েছিল। তাকে অনেক দিন খুঁজে না পাওয়ায় যোগাযোগ করে দেখেন সাজ্জাদের মতো হোয়াইকং ও আশপাশের উখিয়া, টেকনাফ, কক্সবাজারের অনেক ছেলে দালালের খপ্পরে পড়ে দেশত্যাগ করেছে।

মিয়ানমারে সাজ্জাদের আটক থাকার খবর প্রসঙ্গে হান্নান জানান, বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার মাসখানেক পর তিনি জানতে পারেন সাজ্জাদ মালাইবানের কেলিকং জেলে আছে। এরপর অভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের (ওকাপ) সাথে যোগাযোগ করেন। ওকাপ সাজ্জাদকে মিয়ানমার থেকে দেশে আনতে সার্বিক সহযোগিতা করে। তার পরিবারকে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পুলিশ, ইউএনও অফিস, ডিসি অফিস, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিয়ে যায়। তাদের সহযোগিতায় সাজ্জাদকে ফেরত পান। সাজ্জাদকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে আনন্দ অশ্রুতে সিক্ত হন তার মা আনু বেগম। 

সাজ্জাদ মিয়া বলে, ‘প্রথমে অন্যদের সঙ্গে আমাকে একটা গুদামে রেখেছে ওরা। সেখানে চার দিন থাকার পর মিয়ানমারের বোটে তুলে দেওয়া হয়। মিয়ানমারের শামিলা নামের একটা জায়গা আছে, সেখানে নিয়ে আমাকে মারার হুমকি দিচ্ছিল, গালাগাল করছিল। পরে মিয়ানমারের মিলিটারির কাছে ধরা খাই।’

ওকাপের ফিল্ড অর্গানাইজার ছোবাহান আলী জানান, সাজ্জাদের বয়স বিবেচনায় তাকে আটকের পাঁচ মাস পর খালাস দেওয়া হয়। কিন্তু কাগজপত্রে সমস্যা থাকায় তাকে দেশে ফেরত আনতে দেরি হয়।

ইউএনও সাজ্জাত হোসেন জানান, মানব পাচারকারীদের শনাক্তকরণের কাজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। গ্রামের নিরীহ ও সহজসরল কিশোর-যুবকদের স্বপ্ন দেখিয়ে অবৈধভাবে যারা বিদেশে পাচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি না জেনে বুঝে কেউ যাতে পাচারকারীদের ফাঁদে না পড়ে সেজন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইটনায় এবার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির পরিবেশক নিয়োগে ‘ঘুষ চাওয়ার ফোনালাপ’ ফাঁস
  • অসদুপায় অবলম্বনে সহায়তায় কেন্দ্রের ২১ শিক্ষককে অব্যাহতি
  • পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি, দুই লাখ টাকা জরিমানা
  • নাটোরে জালে আটকা বিপন্নপ্রায় গন্ধগোকুল
  • মালয়েশিয়ায় যাত্রার স্বপ্ন ভঙ্গ, মিয়ানমারের জেলে
  • সীতাকুণ্ডে প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগ
  • ‌‘জুলাই ২৪’ শহীদ সাদের নামে ধামরাইয়ে রাস্তার কাজ উদ্বোধন
  • যাদুকাটা নদে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে বাঁশের বেড়া
  • হাসপাতাল চালুর দাবিতে সুনামগঞ্জ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের আবারও সড়ক অবরোধ