‘ক্লাস নাইনে থাকতে বাবা বিয়া দিল, এখন আমি মা! ইচ্ছা ছিল চাকরি করব। এখন এসব ইচ্ছে জাগে না। ছেলেকে হাফেজ বানাব, এটাই স্বপ্ন। গ্রামে বাল্যবিয়ে নিয়ে মানুষকে বোঝাব, এটাই এখন আমার ইচ্ছা।’ ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে সদ্য মা হওয়া শাহিনা বেগম কথাগুলো বলছিলেন। 

২০২৩ সালের মার্চে বাল্যবিয়ের শিকার হন শাহিনা। বাবা পোশাক কারখানায় চাকরি করার সময় গার্মেন্টস কর্মী শাহিন আলমের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্রে ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয় তাঁর। বর্তমানে ২০ বছর বয়সী শাহিন পোশাক কারখানায় কাজ করেন। ১৪ এপ্রিল প্রসব ব্যথা শুরু হয় শাহিনার। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার চাকিরপশার ইউনিয়নের জয়দেবভাট গ্রাম থেকে হাসপাতালে আসতে দেড় ঘণ্টা সময় চলে যায়। এত রাতে কোনো যানবাহন না পেয়ে পাশের গ্রামের এক ইজিবাইক ম্যানেজ করে আট কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে এসে পৌঁছান। তখন ঘড়ির কাঁটায় ভোর ৫টা বেজে ২০ মিনিট। সকাল ৬টা ৫ মিনিটে ছেলেসন্তান জন্ম দেন শাহিনা বেগম। এটি তাঁর প্রথম সন্তান। 

আনন্দের খবরে মোবাইলে সন্তানকে আজান শোনান শাহিনার দাদা রিপন ইসলাম। এরপর শিশুর নামকরণ করেন নানি মনোয়ারা বেগম। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গ্রামত ধাত্রী বাচ্চার হওয়ার সময় দিছিল ১৫ দিন, বলছিল ডাক্তার দেখাবার, বাড়িত পুরুষ মানুষ নাই, হামরা বাড়িত যত্নে রাখছিলাম। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় একদিন আগে বছরের পহেলা দিনে হামার নাতি হইল হলো। হামরা ভীষণ খুশি। পহেলা বৈশাখে যে বাচ্চাটা হবে আমরা তো ভাবি নাই, ভাবছি বাড়িতে হবে দিন অনুযায়ী।’

নবজাতকের বাবা শাহিন আলম বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বাচ্চাটা হওয়াতে হাসপাতালের সবাই খুশি। তারা নববর্ষ উপলক্ষে আমাদের শুভেচ্ছা জানাইছে। বাড়ি শহর থেকে অনেক দূরে হওয়ায় আমরা মাঝেমধ্যে ফোনে খোঁজখবর জানাতাম। আমার স্ত্রী গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্য আপাদের কাছ থেকে নিয়মিত পরামর্শ নিতেন। বর্তমানে বাচ্চা ও আমার স্ত্রী সুস্থ থাকায় আমি বেশ খুশি।’ 

শিশুটির দাদি ময়েজান বেগম বলেন, ‘গ্রামের নানান মানুষের নানা কথা, বেটার বউয়ের কম বয়স, বাচ্চা সমস্যা হবে। চুল ছাড়ি না দেবে, রাইতত না বেড়াবে– নানা কথা। আমরা তাও সবার কথা শুনি বউয়ের যত্ন নিছি। তামার এলাকাত সাধ ভক্ষণের চল (রীতি) নাই। তাই আলাদা করি এটা করি নাই। ভালো-মন্দ প্রতিদিন খাওয়াইছি, নিয়ম-কানুন বলি দিছি সেভাবে মানছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাচ্চা হওয়ার পর আমি প্রথম কোলে নিছি। নার্সরা নববষের্র শুভেচ্ছা দিয়ে আমার কোলে দিছে নাতিক। তারপর বাজার থাকি সাদা-কালো রঙের প্রথম জামা কিনে আনি পরাইছি। বউমার ইচ্ছা নাতিক হাফেজ বানাবে। মানুষক আল্লাহর পথে আনবে আর হামার গ্রামের নানা প্রথা-কুসংস্কার নিয়ে মানুষকে বোঝাবে।’

মা শাহিনা বেগম বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান কত দূরে আমি সঠিক জানি না। সকালে কোনো অনুষ্ঠান বা গানের আওয়াজ পাইনি। ওভাবে খেয়াল করা হয়নি। ক্লিনিক থেকেও কিছু বলেনি। তবে পহেলা বৈশাখে বাচ্চাটা হওয়ায় আমি খুব খুশি। আমার ভীষণ ভয় ছিল, কিন্তু এখন সে ভয় কেটেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মার ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করব। সেটা হয়নি, আমি আমার ছেলেকে পড়ালেখা করে হাফেজ বানাতে চাই। আমি দেখছি সবাই হাফেজদের কথা শোনে। গ্রামের নানা প্রথা, কুসংস্কার দূর করা দরকার, তাই হাফেজ বানাব।’ 

শিশু-কিশোর ও নবজাতক বিশেষজ্ঞ ডা.

আল আমিন মাসুদ বলেন, ‘বছরের প্রথম দিন প্রথম শিশু এসেছে কুড়িগ্রাম জেলা শহরে। বাচ্চার স্বাস্থ্য স্বাভাবিক ও সুস্থ, আমরা তার জন্য দোয়া করি।’

সমকাল সুহৃদ সমাবেশের সদস্য খাদিজা আক্তার পাখি বলেন, ‘পহেলা বৈশাখের দিন আমরা কয়েকজন সদস্য জেলা প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে আনন্দ র‍্যালিতে না গিয়ে টিম ভাগ হয়ে সকালে জেলা শহরের সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকে শিশুর খোঁজ নিতে গিয়ে শিশু না পেয়ে যখন হতাশ হলাম, তখনই আমরা এই ক্লিনিকের একজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে দ্রুত পৌঁছালাম। আমরা উপজেলা শহরেও খোঁজ নিয়ে বাচ্চার খোঁজ পাইনি। জেলার প্রথম বাচ্চার খবর পেয়ে আমরা সত্যি আনন্দিত। আমরা তাদের পাশে থাকতে পেরেছি।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

জিনদের আহার্য

মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮)

আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫

তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮)

আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না।

গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮)

আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ