দেশের সব ফেডারেশনকে হামজার মতো প্রবাসী খুঁজতে বলল এনএসসি
Published: 16th, April 2025 GMT
দেশের ফুটবলে হামজা চৌধুরীর আগমন দারুণ ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি)। সে জন্য সব ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশনকে নিজ নিজ খেলার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত খেলোয়াড়দের খুঁজে বের করার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।
আজ বুধবার দেশের সব ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বা প্রধান নির্বাহীকে এ–সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব মো.
চিঠিতে বিভিন্ন অঙ্গনের প্রতিভাবান প্রবাসী খেলোয়াড়দের জাতীয় দলে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার কথাও বলা হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লাল-সবুজের জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল হামজার।
তার আগে ১৭ মার্চ সিলেটে পা রাখার পর বিমানবন্দর থেকে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার স্নানঘাটের নিজবাড়ি পর্যন্ত উষ্ণ অভ্যর্থনা পান হামজা। তাঁকে ঘিরে ফুটবলে তৈরি হয় নতুন উন্মাদনা। এর মধ্যে কানাডা থেকে বাংলাদেশের হয়ে খেলার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন শমিত শোম।
২৭ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শমিতের জন্ম কানাডায়। মা-বাবা দুজনই বাংলাদেশি। বর্তমানে কানাডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব কাভালরি এফসির মিডফিল্ডার শমিত। তাঁকে আনার প্রক্রিয়াও ইতিমধ্যে শুরু করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
এনএসসি বলছে, হামজা-শমিতের মতো আরও যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে সংশ্লিষ্ট ফেডারেশনগুলো কাজ করলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনও সমৃদ্ধ হবে।
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকানপ্রবাসী জিমন্যাস্ট জ্যাক আশিকুল ইসলামকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রদানের উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
ফুটবলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের আগমন নতুন নয়। প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ফুটবলার হিসেবে বাফুফের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন জামাল ভূঁইয়া। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ জাতীয় দলে অভিষেক হয় ডেনমার্কে জন্ম নেওয়া জামালের। এরপর জাতীয় দলে আসেন ফিনল্যান্ডে জন্ম নেওয়া তারিক কাজী।
ফুটবলের বাইরে বক্সিং, অ্যাথলেটিকস, সাঁতার—এমনকি জিমন্যাস্টিকসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ক্রীড়াবিদেরা অংশগ্রহণ করে দেশকে সাফল্য এনে দিচ্ছেন। যে তালিকায় উল্লেখযোগ্য নাম—ইংল্যান্ডপ্রবাসী ইমরানুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সাইক সিজার, নিউজিল্যান্ডপ্রবাসী জিমন্যাস্ট আলী কাদির, লন্ডনপ্রবাসী সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ ও যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী বক্সার জিনাত ফেরদৌস।
এশিয়ান ইনডোর অ্যাথলেটিকসে সোনা জিতেছেন ইমরানুর। সাইক সিজার ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০২২ সালে তুরস্কে হওয়া ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে বাংলাদেশের হয়ে খেলেস আলী কাদির। ২০২৩ সালের হাংজু এশিয়ান গেমসে অংশ নেন জিনাত। তার আগে ২০২০ টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাঁতারু জুনাইনা।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মাসুদ-তাকাসুরের ঘরে আসে প্রথম সন্তান
পুব আকাশে রক্তিম আলোয় ফুটে ওঠে বছরের প্রথম সূর্য। ১৪ এপ্রিল। সোমবার। বৈশাখের প্রথম সকাল। ৬টা ২৫ মিনিট। ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করিডোর তখন দম বন্ধ করা নীরবতা। কোথাও এক ফোঁটা হাসির ছাপ নেই– শুধুই উদ্বিগ্নতা। এ এক দারুণ নিস্তব্ধতা। সেই নিস্তব্ধতা ছাপিয়ে ভেসে আসে নতুন এক প্রজন্ম আগমন বার্তা।
ফেনীর জাহিদুল ইসলাম মাসুদ ও বিবি তাকাসুর দম্পতির ঘর আলোকিত করে আগমন ঘটে ফুটফুটে এক পুত্রসন্তানের। নতুন বছরের প্রথম দিনের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে এ দম্পতির কোলজুড়ে আসে প্রথম সন্তান। এই আনন্দে নিস্তব্ধতা ভাঙে আশপাশের। শিশুর জন্মের খবরে আনন্দিত ও উদ্বেলিত হয়ে পড়েন সবাই। মা-বাবা-চাচা, দাদা-দাদি, নানিসহ পুরো পরিবারে আনন্দ বিরাজ করে। নতুন অতিথির আগমনে আনন্দ অশ্রু মুছতে মুছতে যেন স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন সন্তানের মা বিবি তাকসুর ও বাবা জাহিদুল ইসলাম মাসুদ।
পৃথিবীর আলোয় এসেছে ফুটফুটে এই শিশু। হাসপাতালের বেডের পাশেই জড়ো হয়েছিলেন আত্মীয় স্বজনরা। তাদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, ‘সোনাগাজী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চরগণেশ এলাকার বাসিন্দা আমরা। রোববার গভীর রাতে প্রসব ব্যথা শুরু হয়। এত রাতে কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না। সবার পরামর্শে প্রথমে পারিবারিকভাবে প্রসবের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কোনো সুফল না পাওয়ায় সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাকসুরের প্রসব ব্যথা আরও বাড়তে থাকে। এখন হাসপাতালে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এত রাতে কিছু পাওয়াও মুশকিল। ভোরের আলো ফোটার আগেই সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার ব্যবস্থা হলো। তাঁকে দ্রুত ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়।’
বৈশাখী ছুটির কারণে হাসপাতালে সাধারণ মানুষের আনাগোনা কম। শান্ত পরিবেশে আমাদের অশান্ত যাত্রা দেখে চিকিৎসক, নার্সরা তৎপর হন। রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক তথ্য নেন।
তারা জানান, ১৬-২৯ এপ্রিল প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল। কিন্তু হঠাৎ গভীর রাতে প্রসব ব্যথা শুরু হয়। পরে আমরা এখানে নিয়ে আসি–এমন তথ্য জানালে ডাক্তার প্রসূতি মাকে দ্রুত হাসপাতালের লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন।
একে একে আত্মীয়স্বজনরা হাসপাতালে আসতে শুরু করেন। সবার মধ্যে উৎকণ্ঠা। প্রায় ৩০ মিনিট পর একজন নার্স ছুটে আসেন। জানান, তাকসুরের ফুটফুটে এক ছেলেসন্তান জন্ম হয়েছে। নরমাল ডেলিভারি। সিজার করার প্রয়োজন হয়নি। সবাই আগ্রহ নিয়ে জানতে চান, মা ও সন্তান কেমন আছে। তিনি জানান, মা ও ছেলে উভয়ই ভালো আছে।
নববর্ষের রঙিন দিনটি যেন আরও রঙিন হয়ে ওঠে। নতুন শিশুর আগমনের খবর শুনে হাসপাতালে আসা স্বজনরা আনন্দে ফেটে পড়েন। কেউ কেউ আবার হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেন নবজাতক শিশু ও মাকে যেন আল্লাহ ভালো রাখেন। কেউ আবার সন্তান জন্মের খবর মুহূর্তেই স্বজনদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নববর্ষের দিন সন্তান জন্ম হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে দু’বার মিষ্টি খাওয়ার কথা বলে হেসে ওঠেন কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সরা।
হাসপাতাল থেকে পহেলা বৈশাখের প্রধান অনুষ্ঠান স্থল প্রায় দুই কিলোমিটার। এখানে বৈশাখের নানা আয়োজনের আওয়াজ শোনা না গেলেও, শিশুটিকে পিংক কালার ও হলুদ রংয়ের জামা পরিয়ে দিনটিকে বরণ করেছেন তারা।
হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, ২০০৭ সালে পারিবারিকভাবে সোনাগাজী সদর ইউনিয়নের চরখোয়াজ গ্রামের বিবি তাকাসুরের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন জাহিদ। বিয়ের তিন বছর পর প্রথম কন্যা এবং পাঁচ বছর পর পুত্রসন্তানের পর এবার হলো দম্পতির তৃতীয় সন্তান। শিশুর নাম এখনও রাখা হয়নি। আলাপ-আলোচনা করে রাখা হবে বলে জানান তারা। জাহিদ পেশায় একজন ব্যবসায়ী। শিশুর মা এসএসসি শেষ করে সংসারজীবনে প্রবেশ করেন। তিনি একজন গৃহিণী। তাকসুরের বড় মেয়ে সোনাগাজী মো. ছাবের সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা অংশ গ্রহণ করছে। ১০ বছরের ছেলেসন্তানটি সোনাগাজী উপজেলার হেকমতুল কোরআন মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগে পড়াশোনা করছে।
সন্তানের দিকে তাকিয়ে মা তাকাসুর বলেন, ‘সবকিছু চিকিৎসকের পরামর্শে চলায় মনে কোনো শঙ্কা ছিল না। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক-নার্সরা আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দেন। বাচ্চা ও আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। নববর্ষের এই দিনে বাচ্চার জন্মগ্রহণ করায় খুব খুশি লাগছে। বাচ্চাকে যেন মানুষের মতো মানুষ করতে পারি।’
পাশেই ছিলেন বাবা জাহিদুল ইসলাম। বলেন, ‘তাকাসুরের প্রসব ব্যথা শুরু হলে একটি অ্যাম্বুলেন্স খোঁজ করি। তা না পেয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করতে চেয়েছিলাম। ড্রাইভার দুই হাজার টাকা ভাড়া চান। তখন আমরা একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এসে রোগী ভর্তি করি। শিশু জন্মের সংবাদ শুনে সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। এখন খুব আনন্দ লাগছে। নববর্ষের দিনে নতুন আনন্দ যোগ হলো।’
শিশুর চাচা আবদুর রহিম রায়হান বলেন, ‘বাচ্চাকে আমরা মানুষের মতো মানুষ করতে চাই। সে যেন ডক্টর ইউনূসের মতো উজ্জ্বল মানুষ হয়। আমরা এটাই চাই। সুন্দর হোক নতুন প্রজন্ম, নতুন বাংলাদেশ।’
শিশুর নানি কাউসারা বেগম বলেন, ‘সন্তান সম্ভবা হওয়ার পর থেকে বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত চিকিৎকের পরামর্শে সব নিয়ম মানা হয়েছে। নতুন বছরে সন্তান জন্ম লাভ করায় খুব খুশি লাগছে।’
ডা. ফারজানা আক্তার বলেন, ‘একটু সময় লাগলেও রোগীর নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। কোনো জটিলতা নেই। মা ও বাচ্চা দুজনই সুস্থ ও ভালো আছেন। নববর্ষের দিন শিশু জন্মগ্রহণ করেছে। সবাই আনন্দিত।’
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স দেলোয়ার বলেন, ‘শিশুটিকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার বাবার কোলে তুলে দিই। শিশুর স্বাস্থ্য ভালো এবং ওজন ছিল তিন হাজার গ্রাম। মায়ের দুধ পাচ্ছে।’
হাসপাতালের উপপরিচালক (তত্ত্বাবধায়ক) ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ‘নববর্ষের প্রথম প্রহরে সন্তান জন্মগ্রহণ করায় হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, অভিভাবকসহ সবাই আনন্দিত। এ উপলক্ষে অভিনন্দন বার্তা, উপহার এবং শিশুর জন্মের পর আজান দেওয়া হয় হাসপাতালের নিজস্ব ব্যবস্থপনায়। গভীর রাতের অন্ধকার পেরিয়ে যেমন আলো আসে, তেমনি উৎকণ্ঠা আর নিস্তব্ধতা পেরিয়ে এসেছে নতুন শিশু। তার সার্বিক মঙ্গল কামনা করেছেন সবাই।’