তাঁর স্মৃতি দেখিয়ে দিল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছেই গোপন বন্দিশালার দরজা
Published: 16th, April 2025 GMT
তদন্তকারীরা যখন রাতারাতি নির্মিত একটি দেয়াল ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন, তখন গোপন কারাগারটির কয়েকটি সেল (কারাপ্রকোষ্ঠ) খুঁজে পান।
কারাগারটিতে নতুন ইট বাঁধানো একটি প্রবেশপথের সন্ধান পাওয়া যায়; যা ছিল মূলত পেছনে লুকিয়ে থাকা জিনিস আড়াল করার একটি চেষ্টা। প্রবেশপথটি দিয়ে ভেতরে ঢুকলে, সরু করিডোর। ডানে-বাঁয়ে ছোট ছোট ঘর। চারপাশটা মিসমিসে অন্ধকার।
মীর আহমেদ বিন কাসেম ও গুমের শিকার হয়েও ভাগ্যক্রমে ফিরে আসা অন্যদের স্মৃতিচারণা ছাড়া তদন্তকারী দলটি হয়তো এ গোপন কারাগার কখনোই খুঁজে পেত না। অথচ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের খুব কাছেই এটির অবস্থান।
বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেতার (শেখ হাসিনা) একজন সমালোচক মীর আহমেদ এ গোপন কারাগারে আট বছর বন্দী ছিলেন।
আরও পড়ুনমানুষ কত নির্মম হতে পারে, আয়নাঘর প্রসঙ্গে ড.ইউনূস ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
কারাগারে থাকার বেশির ভাগটা সময় মীর আহমেদের চোখ বেঁধে রাখা হতো। এ অবস্থায় শুনতে পাওয়া কিছু শব্দের কথা স্মরণে আছে তাঁর। উড়োজাহাজ অবতরণ করার সেই শব্দ তিনি স্পষ্ট মনে করতে পারেন।
মীর আহমেদের স্মৃতি তদন্তকারীদের বিমানবন্দরের কাছের একটি সামরিক ঘাঁটিতে যেতে সহায়তা করে। এ ঘাঁটির প্রাঙ্গণে থাকা প্রধান ভবনের পেছনে অপেক্ষাকৃত ছোট, সুরক্ষিত, জানালাবিহীন ইট ও কংক্রিটের একটি অবকাঠামো দেখতে পান তাঁরা। এখানে বন্দীদের আটকে রাখা হতো। কারাগারটি ছিল স্বাভাবিক দৃষ্টির অন্তরালে।
গণ–আন্দোলনের মুখে গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর আহমদ বিন কাসেমের মতো কয়েক শ ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। তাঁর ক্ষমতাচ্যুতির পর গোপন কারাগার থেকে অনেক বন্দী মুক্তি পান। আরও অনেকে বেআইনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছের ওই গোপন কারাগারসহ যারাই এমন কারাগারগুলো চালাত, তাদের একটি হলো, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ইউনিট র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। তদন্তকারীরা বলেন, এ ইউনিট হাসিনার সরাসরি নির্দেশে কাজ করত।
মীর আহমেদের স্মৃতি তদন্তকারীদের বিমানবন্দরের কাছের একটি সামরিক ঘাঁটিতে যেতে সহায়তা করে। এ ঘাঁটির প্রাঙ্গণে থাকা প্রধান ভবনের পেছনে অপেক্ষাকৃত ছোট, সুরক্ষিত, জানালাবিহীন ইট ও কংক্রিটের একটি অবকাঠামো দেখতে পান তাঁরা। এখানে বন্দীদের আটকে রাখা হতো। কারাগারটি ছিল স্বাভাবিক দৃষ্টির অন্তরালে।বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বিবিসিকে বলেছেন, ‘সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জোরপূর্বক গুমের সব ঘটনা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন, সম্মতি বা নির্দেশে ঘটানো হতো।’
হাসিনার দল অবশ্য বলেছে, কথিত অপরাধগুলো তাঁর অজ্ঞাতসারে ঘটানো হয়েছে। তাই এসবের দায় তাঁর নয় এবং সামরিক কর্তৃপক্ষ একাই এটির দেখভাল করেছে। তবে এ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে সেনাবাহিনী।
সাত মাস হলো মুক্তি পেয়েছেন আহমেদ বিন কাসেম ও অন্যরা। কিন্তু যাঁরা ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁদের ব্যাপারে তাঁরা এখনো আতঙ্কিত। জোরপূর্বক গুমের ঘটনায় যুক্ত ব্যক্তিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কর্মরত এবং তাঁদের কাউকেই এখনো ধরা হয়নি।
আহমেদ বিন কাসেম বলেন, টুপি ও মাস্ক ছাড়া বাড়ির বাইরে কখনো যান না তিনি। বলেন, ‘আমি যখন বাইরে থাকি, তখন ক্ষতির আশঙ্কায় সব সময় সতর্ক থাকতে হয়।’
ঢাকায় গত ফেব্রুয়ারিতে একটি আয়নাঘর পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এ সময় তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন উপদেষ্টাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। আয়নাঘরটিতে বন্দীদের ‘নির্যাতনে ব্যবহৃত একটি চেয়ারও’ পাওয়া যায়উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জিনদের আহার্য
মহানবী (সা.) একবার তার সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললেন কিছু পাথর নিয়ে আসতে। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবীজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবীজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে (সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে আলজাযিরার একটি নগরী) জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে। (বুখারি, হাদিস: ৩,৫৭৮)
আরও পড়ুনইবলিস কি জিন নাকি ফেরেশতা১৬ মার্চ ২০২৫তাই কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, হাদিস: ৩,২৫৮)
আর দুষ্ট জিন ও শয়তানরা খায় এমন খাবার, যাতে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না।
গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৮)
আরও পড়ুনকোরআন শুনে একদল জিন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন০৬ আগস্ট ২০২৩