বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে: আইন উপদেষ্টা
Published: 16th, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা জানান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন হবে। যে যাই বলুক, জুনের পরে নির্বাচন যাবে না।
তিনি বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে বিএনপি অত্যন্ত আন্তরিক। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা পরিবেশে কথা হয়েছে।
আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে ভালো হয় বলে জানিয়েছে। তারা বলেছেন, আমাদের উপদেষ্টাদের অস্পষ্ট কথা থাকে। আমাদের সরকারের কোনো কোনো উপদেষ্টা অন্যরকম কথা বলেন। যে যেটাই বলুক না কেন, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে বারবার যে কথা বলেছেন, সেটাই আমাদের অবস্থান। অন্য কেউ যদি বেফাঁস কথা বলেন, তারা যেন বিভ্রান্ত না হন।
আজকের আলোচনায় কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে, জানিয়ে তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন মাস, মানে আমরা ইচ্ছা করেই দেরি করে মে মাসে নির্বাচন করব, এমনটা নয়। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে— ডিসেম্বরের পর থেকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন করা। আমরা অকারণে এক মাস, দুই মাস বেশি থাকলাম, মোটেও এমনটা নয়। ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন হবে।
আইন উপদেষ্টা বলেন, আমাদের ঐকমত্য কমিশনের যে প্রস্তাব, সেটার ক্ষেত্রে বিএনপি অত্যন্ত পজিটিভ। তারা দুই-তিন দিনের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসবে। জুলাই ঘোষণাপত্র খুব দ্রুত সময় হয়ে যাবে, তারা আমাদেরকে আশ্বাস দিয়েছেন। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, বিএনপি সংস্কারের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক।
অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি মন খুলে কথা বলেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত তাদের প্রতিকূলে গেছে বলে তারা বলেছেন। আমরা তাদেরকে উদাহরণ দিয়েছি, অনেকগুলো সিদ্ধান্ত তাদের অনুকূলে গেছে। রাজনৈতিক ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারে বিলম্ব হচ্ছে। গত তিন মাসে ৭ হাজারের অধিক মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। বিএনপি আরেকটা ট্রাইব্যুনাল গঠনের কথা বলেছে। আমরা বলেছি যে, আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করছি।
তিনি বলেন, উনারা (বিএনপি নেতারা) বলেছেন যে, গত ১৫ বছর যাবত বিএনপি নির্যাতিত হয়েছে। আমরা শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। তারা বলেছে, বিএনপি সংস্কারপন্থি দল, আমরা এটাতে অ্যাগ্রি করেছি।
ঢাকা/হাসান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইন উপদ ষ ট ড স ম বর থ ক ড স ম বর র সরক র র আম দ র বল ছ ন ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
কিস্তি নিয়ে সমঝোতা ছাড়াই ঢাকা ছাড়ল আইএমএফ
ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের জটিলতার বিষয়ে সমঝোতা ছাড়াই ঢাকায় শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত মিশনের বৈঠক। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো এবং টাকা-ডলার বিনিময় হার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দু’পক্ষ। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে শুরু হতে যাওয়া আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ঐকমত্য হলে আগামী জুনে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে। দুই সপ্তাহের ঢাকা সফর শেষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে তাদের আলোচনা শেষ হয়নি, চলমান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলমান ঋণ কর্মসূচির শর্ত পর্যালোচনায় এর আগে তিনবার সফরে এসেছিল আইএমএফ মিশন। প্রতিবারই কর্মকর্তা পর্যায়ের সমঝোতা হলেও এবারই প্রথম দু’পক্ষ সব বিষয়ে একমত হতে পারেনি। বিশেষত, আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সময় নিতে চাচ্ছে। এ কারণে ওয়াশিংটনে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশের শর্ত পূরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংস্থার এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের কর্মকর্তা ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের মিশন ২ এপ্রিল ঢাকায় আসে। তারা প্রায় দুই সপ্তাহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে করে।
আইএমএফের চলমান কর্মসূচি শুরুর পর এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তিতে ১১৪ কোটি থেকে ১৩০ কোটি ডলার ছাড় নিয়ে আলোচনা চলছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির শর্ত পর্যালোচনা শেষে কর্মকর্তা পর্যায়ে ঐকমত্য হয়। তখন ধারণা দেওয়া হয়েছিল, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের পর্ষদের বৈঠকে চতুর্থ কিস্তি ছাড় হবে। তবে চতুর্থ কিস্তি পায়নি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২০২৩ সালে যে বাস্তবতায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়েছিল, সরকার পতনের পর অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। সুশাসনকেন্দ্রিক সমস্যা কমে গেছে। আগে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশি দেখানো হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয়ে সংস্কার করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের মিশনপ্রধান বলেন, বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার ভালো সময় যাচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। আবার ব্যাংক এবং খোলাবাজারে ডলারের দরে ব্যবধান কমেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় অনেক বেশি। আবার ভিন্ন ভিন্ন করহার রয়েছে। এসব বিষয়ে সংস্কার আনতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আদায় ও তদারকি
ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। অবশ্য গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে খেলাপি ঋণ এক বছরে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে গত ডিসেম্বরে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশে উঠেছে।
মিশনের সুপারিশ
আইএমএফ মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে কিছু সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। গত বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭০ শতাংশে উঠেছিল। সেখান থেকে কমে গত মার্চে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে নামার বিষয়টি ইতিবাচক। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৫ থেকে ৬ শতাংশের তুলনায় তা এখনও অনেক বেশি।
মিশন বলেছে, ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক অর্থায়ন ঘাটতি মোকাবিলা এবং ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিকট মেয়াদে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। বিনিময় হারের নমনীয়তা পণ্যের দর প্রতিযোগিতামূলক করা এবং রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে। কর প্রশাসন এবং কর নীতিকে পৃথক করতে হবে। আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতের সংস্কার অপরিহার্য। বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আকর্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।