ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক-রেলপথ অবরোধ করে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 16th, April 2025 GMT
ছয় দফা দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল থেকে তারা বিক্ষোভ করছেন।
ঢাকা: আজ সকাল ১০টায় ঢাকার তেজগাঁওয়ে সাতরাস্তা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ-টিএসসিসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা।
এসময় দাবি আদায়ে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ষষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রাকিবুল ইসলাম বলেন, “এর আগে আমাদের দাবি পূরণে আশ্বাস দেওয়া হলেও কাজ করা হয়নি। অনতিবিলম্বে আমাদের দাবি পূরণ করা না হলে আরো কঠোর আন্দোলন করা হবে।”
তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি)) ইবনে মিজান রাইজিংবিডিকে বলেন, “ছয় দফা দাবিতে সাতরাস্তায় সড়ক অবরোধ করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।”
একই দাবিতে মিরপুরেও সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
মিরপুর ট্রাফিক বিভাগের উপ- কমিশনার মোহাম্মদ রাহাত গাওহারী বলেন, “পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর এলাকা অবরোধ করেন। যার ফলে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।”
মোহাম্মদপুরের গ্রাফিক্স আর্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আল্লাহ করিম মসজিদের সামনে সড়ক অবরোধ করেন।
খুলনা: একই দাবিতে খুলনায় রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রেলপথ অবরোধ করে রাখেন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা খুলনা স্টেশন থেকে ছেড়ে আসা চিলাহাটিগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে দেয়। তাদের অবরোধের ফলে খুলনা স্টেশন আটকা পড়ে চিত্রা, রকেট ও মহানন্দা এক্সপ্রেস।
খুলনা রেলস্টেশন মাষ্টার জাকির হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘সকাল সোয়া ৯টার দিকে রূপসা এক্সপ্রেস খুলনা স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। খুলনা জংশন স্টেশনের আগে পৌঁছালে খুলনা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা ট্রেনটি আটকে দেয়। এর ফলে, খুলনা স্টেশনে আটকা পড়েছিল ঢাকাগামী চিত্রা, রকেট ও মহানন্দা এক্সপ্রেস।”
তিনি আরো বলেন, “তাৎক্ষণিক রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করা হয়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ ছেড়ে দিলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।”
নরসিংদী: ছয় দফা দাবিতে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে মহাসড়কের সাহেপ্রতাপ এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন নরসিংদীর সরকারি-বেসরকারি কারিগরি শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই দিকে বেশ কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা জানান, বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে একাত্বতা পোষণ করে এই ছয় দফা দাবি জানিয়ে আসছেন তারা। পরে দুপুর দেড়টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
কুমিল্লা: একই দাবিতে কুমিল্লা কোটবাড়ি বিশ্বরোড অবরোধ করেছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা।
অবরোধে শহরের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সরকারি বেসরকারি শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ।
কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “সড়কের অবস্থা খারাপ। যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে কুমিল্লা পলিটেকনিকের শিক্ষার্থীরা। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন। শিক্ষার্থীরা উঠে গেলেই কেবল সচল হবে সড়ক।”
সদর দক্ষিণ উপজেলার সহকারী কমিশনার সৈয়দ রেফাঈদ আবিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, “ছয় দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছে কুমিল্লার বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। আমরা বলেছি, তোমাদের মধ্য থেকে কয়েকজন চলো জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে, শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে তোমাদের দাবিগুলো পৌঁছে দিই। তারা রাজি হয়নি।”
শিক্ষার্থীরা বলছেন, “আমরা আগেও একাধিকবার একই দাবি উত্থাপন করেছি, কেউ কর্ণপাত করেনি। এখন আমরা রাস্তা অবরোধ করেছি। দাবির ব্যাপারে কথা বলতে হলে আমাদের কাছে আসতে হবে। সচিবালয়ে কেউ যাবে না।”
শিক্ষার্থীরা যে ছয় দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন সেগুলো হলো—জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে। এছাড়া, পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস ও ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
এই প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মাকসুদুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক রায়হান হোসেন, খুলনা প্রতিনিধি নূরুজ্জামান ফকির, নরসিংদী প্রতিনিধি হৃদয় এস সরকার ও কুমিল্লার প্রতিনিধি রুবেল মজুমদার।
ঢাকা/ইভা
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব ক ষ ভ কর একই দ ব ত ব সরক র আম দ র সড়ক র করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ শিক্ষার্থীসহ ৬ জনকে অপহরণের অভিযোগ
খাগড়াছড়িতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে পানছড়ি-খাগড়াছড়ি সড়কের গিরিফুল এলাকা থেকে তাঁদের অপহরণ করা হয়। এই অপহরণের ঘটনায় প্রসীত খিসা সমর্থিত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)।
জেএসএস-সন্তু লারমা-সমর্থিত পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, বিজু উদ্যাপন শেষে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ পাহাড়ি শিক্ষার্থীকে অপহরণ করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে পিসিপির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী রিশান চাকমা রয়েছেন। অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের মৈত্রীময় চাকমা ও অলড্রিন ত্রিপুরা, নাট্যকলা বিভাগের দিব্যি চাকমা এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের লংঙি ম্রো। তাঁরা সবাই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অপহরণকারীরা তাঁদের বহনকারী টমটম (অটোরিকশা) চাককেও অপহরণ করেছে। তবে তাঁর নাম জানা যায়নি। এ ঘটনার জন্য নিপুণ ত্রিপুরা ইউপিডিএফ-প্রসীত পক্ষকে দায়ী করেছেন।
পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপুণ ত্রিপুরা আরও বলেন, ‘গতকাল বাঘাইছড়িতে বিজু উৎসব শেষ করে খাগড়াছড়ি হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার কথা ছিল রিশান চাকমাসহ পাঁচ শিক্ষার্থীর। কিন্তু বাসে টিকিট না পাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার কুকিছড়া এলাকায় মৈত্রীময় চাকমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাত যাপন করেন তাঁরা। সকাল সাতটার গাড়িতে তাঁদের চট্টগ্রামে ফেরার কথা। কিন্তু গিরিফুল এলাকা থেকে তাঁদের তুলে নেওয়া হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের বহনকারী টমটমচালককেও অপহরণ করা হয়। এ ঘটনার জন্য আমরা ইউপিডিএফ-প্রসীত পক্ষকে দায়ী করছি। তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’
তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউপিডিএফের খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। তিনি বলেন, ‘অপহরণের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এ ধরনের প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতি আমরা করি না। আমরা সব সময় ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের পক্ষে। কোনো মহল ষড়যন্ত্রমূলকভাবে অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।’
অপহরণের বিষয়টি পুলিশও স্বীকার করেছে। অপহৃত শিক্ষার্থীদের উদ্ধারেরও চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘চবির পাঁচ শিক্ষার্থীসহ ছয়জনকে অপহরণের বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে শুনেছি। এ ঘটনায় পাহাড়ের আঞ্চলিক একটি সংগঠন জড়িত থাকতে পারে। আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’