নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে যমুনায় বিএনপির প্রতিনিধি দল
Published: 16th, April 2025 GMT
আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারি বাসভবন যমুনায় গেছে বিএনপির প্রতিনিধি দল।
বুধবার বেলা ১২টায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের উদ্দেশ্য তারা যমুনায় যান।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলে উপস্থিত আছেন, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
বিএনপিদলীয় সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজকের বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে পরবর্তী পদক্ষেপ বা কর্মসূচি কী হবে। নেতারা সরকারের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করবেন। যদি ডিসেম্বরে নির্বাচনের নিশ্চিত আভাস পাওয়া যায়, তাহলে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে মনোযোগ দেবে দলটি। নির্বাচনের সময়সীমা ও সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা না পেলে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ভাববে বিএনপি।
এ বৈঠকের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব গত সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান আলোচনার মাধ্যমে হবে। আমরা তো সবসময় বলে আসছি, আলোচনার মধ্য দিয়ে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে একটা নতুন বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই। নিঃসন্দেহে এটি সম্ভব হবে এবং আমরা সবাই সফল হবো।’ চিকিৎসা শেষ ওই দিনই তিনি সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকায় ফেরেন।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য সমকালকে জানান, সরকারের সঙ্গে এর আগের বৈঠকগুলোতে নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায়নি। বরং সরকারের ভেতরে-বাইরের নানা কথায় ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকেও তিনি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিলেন। সেই মতে বিএনপি অনুরোধ জানিয়েছিল, জনমনে বিভ্রান্তি দূর করতে প্রধান উপদেষ্টা যেন জাতির সামনে রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তিনি যেন নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এর বাস্তবরূপ দেখা যায়নি। এখন আবার শুরু হয়েছে এই সরকারকে দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় রাখার প্রচারণা। পাঁচ বছরের কথাও কেউ কেউ বলছেন। এর পেছনে সরকারের কারও কারও ইন্ধন থাকতে পারে বলে মনে করছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে বলেন, গণতন্ত্রের পথে যাত্রা করে উল্টো পথে হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি– এ কেমন আচরণ? যখনই ডিসেম্বরের মধ্য নির্বাচনের দাবি করা হয়, তখনই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ গণতন্ত্রের জন্য ভালো নয়।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, যে গণতন্ত্র, ভোটাধিকারের জন্য এত মানুষ প্রাণ দিল, আন্দোলন করল, সেই গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে আপত্তি কোথায়? কাদের সুবিধা দিতে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা আসছে? কেন অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে? এসব বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
এর আগে নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না পেলে দলীয় কর্মসূচির পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা হয়েছিল বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে। সংস্কার ইস্যুকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছিল বিএনপি। দলটি শুরু থেকে বলে আসছে, নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত ভোটের ব্যবস্থা করা হোক। এ দাবির সপক্ষে তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো ছাড়াও বাম ঘরানার দলগুলোর সম্মতি আছে। এর বিপরীত অবস্থানে আছে জামায়াতে ইসলামী, নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপিসহ কয়েকটি ইসলামী দল। তাদের দাবি, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন। কথা হচ্ছে ছোট না বড় সংস্কার, এ নিয়েও।
বিএনপি নেতারা সংস্কার ও নির্বাচন একসঙ্গে করার পক্ষে। তারা বলছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। নির্বাচন-সংক্রান্ত সংস্কারগুলো কিংবা সংবিধান বাদে অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার সরকারের নির্বাহী আদেশ কিংবা অধ্যাদেশের মাধ্যমে করতে পারে। শুধু সংবিধান সংস্কারের যেসব বিষয়ে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে সেসব নির্বাচিত সংসদে বাস্তবায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচনকে বিলম্বিত করার কোনো প্রয়োজন নেই।
এ অবস্থায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সমমনা সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ করছে বিএনপি। আজকের বৈঠকেও নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি না পেলে পরিস্থিতি অনুযায়ী করণীয় ঠিক করে ইতিবাচক কর্মসূচি নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার ইচ্ছা দলটির। এরই মধ্যে তারা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠকও শুরু করেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেন ডিসেম্বরে নির্বাচনের কথা। আবার আরেকজন বলেন জুনে নির্বাচন। আরেকজন বলেছেন, পাঁচ বছর এই সরকার থাকার দরকার, জনগণ চায়। একজন উপদেষ্টা বললেন, তারা নির্বাচিত। এদিকে সরকারের ঘনিষ্ঠ একজন বললেন, গণতন্ত্রের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ, স্বৈরাচারের সৃষ্টি হয়। এই যে কথাগুলো—এতে একটা বিভ্রান্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এতে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মনে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরাও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। এটি পরিষ্কার করার জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাচ্ছি আমরা।’ সরকার নির্বাচনের নির্দিষ্ট রূপরেখা না দিলে বিএনপি কী করবে–এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে আলোচনা হোক। কী আলোচনা হয় দেখি, শুনি; তারপর এ বিষয়ে কথা বলব।’
কাল ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক আগামীকাল বৃহস্পতিবার। বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৩ মার্চ ঐকমত্য কমিশনে সংস্কারের মতামত জমা দেওয়ার পর এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এর আগে ৬ মার্চ পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৩৭টি রাজনৈতিক দল ও জোটের কাছে ‘স্প্রেড শিট’ (ছক আকারে) পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ গণতন ত র ড স ম বর সরক র র ব এনপ র র জন য কম ট র ইসল ম সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে দেশটির জনগণ: যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ, যার সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় জনগণের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ওয়াশিংটন ডিসিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে নিয়মিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশে সাম্প্রতিক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ, ইসলামি চরমপন্থার আশঙ্কাজনক বৃদ্ধি, ওসামা বিন লাদেনের ছবি প্রদর্শন, নাৎসি প্রতীক ব্যবহারের মতো বিষয় এবং মার্কিন ব্র্যান্ড কোকাকোলা ও কেএফসির বিরুদ্ধে অ্যান্টিসেমিটিক প্রচারণা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
জবাবে ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘আমি আপনার উদ্বেগের প্রশংসা করি। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সচেতন এবং এগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করি। তবে এসব পরিস্থিতি বাংলাদেশের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের এখতিয়ারেই পড়ে।’
এছাড়া ব্রিটিশ এমপি ও শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইস্যুর বিষয়টিও ওঠে আসে ব্রিফিংয়ে। মুখপাত্র ব্রুস জানান, এই পরোয়ানা বাংলাদেশের আদালতের পক্ষ থেকেই ইস্যু করা হয়েছে এবং এটি একটি স্থানীয় আইনি বিষয়।
তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ এবং মানুষের কর্মকাণ্ডই নির্ধারণ করবে তারা কীভাবে সমস্যার মোকাবিলা করবে। গত দুই দশকে আমরা দেখেছি, ভুল সিদ্ধান্ত কীভাবে জনগণের জীবনকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ পথ নির্ধারণের দায়িত্ব দেশটির জনগণের হাতেই।’