ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব কেন নাকচ করল হামাস
Published: 16th, April 2025 GMT
ইসরায়েলের দেওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এ প্রস্তাবের আওতায় হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানানো হয়েছিল।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় সম্পৃক্ত একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে হামাসের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের কথা জানান। তিনি বলেন, হামাসের মূল চাওয়া হলো চূড়ান্তভাবে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার করা। কিন্তু ওই প্রস্তাবে এ বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি ছিল না। বরং হামাসের হাতে থাকা জীবিত জিম্মিদের অর্ধেককেই মুক্তি দেওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অব্যাহত থাকার মধ্যেই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে এমন কথা জানা গেল।
খান ইউনিসের একটি ফিল্ড হাসপাতালে বিমান হামলা চালিয়ে একজন নিরাপত্তারক্ষী এবং আরও ৯ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। যদিও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, হামাসের একটি সেলে হামলা চালানো হয়েছে।
গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার ও নৃশংস হামলার ১৮ মাস চলছে। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, এই ১৮ মাসের মধ্যে এখন গাজার মানবিক পরিস্থিতি সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে।
ছয় সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে কোনো মানবিক সহায়তা সামগ্রী ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। এটা ইসরায়েলের পক্ষ থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ অবরোধ আরোপের ঘটনা।
ইসরায়েলের দাবি, দীর্ঘসময় চলার মতো খাবার গাজায় মজুত আছে। যদিও জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো এমন দাবি জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, গাজায় সহায়তা প্রবেশে অবরোধ আরোপের ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ অবরোধ আরোপের মূল উদ্দেশ্য ছিল, অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে এবং ১ মার্চ শেষ হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে হামাসকে চাপ দেওয়া। এমনটাই বলেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
একইভাবে জাতিসংঘের মানবিক-বিষয়ক দপ্তর জানিয়েছে, স্থলভাগে থাকা অংশীদারেরা জানিয়েছেন, হামলায় ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ধ্বংস করা হয়েছে।
বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে সফরে গিয়ে ওয়াশিংটনে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করেন। এর কয়েক দিন পরই গত সপ্তাহের শেষের দিকে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আঞ্চলিক মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এরপর বিষয়টি নিয়ে প্রধান আলোচক খলিল আল-হায়ার নেতৃত্বে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল মিসরের রাজধানী কায়রোয় দেশটির গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।
আরও পড়ুনগাজায় নিহত ৫১ হাজার ছাড়াল ৯ ঘণ্টা আগেফিলিস্তিনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, মিসরের মাধ্যমে দেওয়া প্রস্তাবে স্পষ্টত হামাসকে নিরস্ত্র করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু এতে ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রতিশ্রুতি নেই। তাই হামাস এ প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো আলোচনায় এবারই প্রথম ইসরায়েলের পক্ষ থেকে হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এটাকে ফিলিস্তিনি সংগঠনটির জন্য চূড়ান্ত সীমারেখা (রেডলাইন) হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল সময়ক্ষেপণ করছে। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে। হামাসের হাতে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের উদ্ধার করার চেষ্টায় এমনটা করা হচ্ছে।
ধারণা করা হয়, গাজায় হামাসের হাতে আরও ৫৯ জন জিম্মি আছেন। তাঁদের মধ্যে বেঁচে আছেন ২৪ জন।
হামাসের সামরিক শাখার এক মুখপাত্র গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জানান, ইসরায়েলি-আমেরিকান জিম্মি অ্যাডেন আলেকজান্ডারের সঙ্গে হামাস যোদ্ধাদের একটি দলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তিনি এটাকে ‘তাদের অবস্থানের ওপর সরাসরি হামলা’ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
আরও পড়ুনগাজায় গিয়ে নেতানিয়াহু বললেন, ‘আরও আঘাতের’ শিকার হবে হামাস১০ ঘণ্টা আগেহামাস জানিয়েছে, তাদের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দিতে তারা প্রস্তুত। তবে এর বিনিময়ে তারা যুদ্ধের সমাপ্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের পুরোপুরি প্রত্যাহার চান।
এর মধ্যে বিবিসি জানতে পেরেছে, মিসরের মাধ্যমে একটি যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সামনে আনা হয়েছে। সেটা বিবেচনা করছে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। যদিও ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনার বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেনি।
গাজায় গত ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে হামলা জোরদার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর সেখানে অন্তত ১ হাজার ৬৩০ জন নিহত হয়েছেন। ১৮ মাস ধরে চলা যুদ্ধে গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামাস হামলা চালায়। এরপরই ওই দিন থেকে গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে খবর দেয় ইসরায়েল সরকার। বন্দী করে গাজায় নিয়ে যাওয়ায় হয় ২৫১ জনকে।
আরও পড়ুনগাজা-পশ্চিম তীরে কেমন ছিলেন, জানালেন বাংলাদেশে পড়ুয়া ২ ফিলিস্তিনি তরুণ১৩ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র প কর মকর ত প রস ত ব র একট
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াক্ফ আইনের প্রতিবাদ কেন সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় রূপ নিল মুর্শিদাবাদে
ভারতের সংশোধিত ওয়াক্ফ আইনের প্রতিবাদ থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল, সোমবার তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা গেছে বলে পুলিশ দাবি করেছে। তবে পুলিশের দাবির পরে সোমবারই জাফরাবাদ এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয়।
আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার ভাঙ্গরেও ওয়াক্ফ আইনের প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে বিক্ষোভকারীদের। সেখানেও পুলিশের গাড়ি জ্বালানো হয়েছে, পুলিশও পাল্টা লাঠি চালিয়েছে।
তবে মুর্শিদাবাদের ঘটনা কীভাবে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রূপ নিল, সেই প্রশ্নই বড় হয়ে সামনে উঠে আসছে।
প্রথম দফায় গত মঙ্গল ও বুধবার এবং দ্বিতীয় দফায় শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশে সীমান্তবর্তী সুতি ও সামশেরগঞ্জ এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়েছিল।
এর মধ্যে শনিবার স্পষ্টতই ওই সহিংসতা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের চেহারা নেয়। সেদিন তিনজনের মৃত্যু হয়েছিল—যাঁদের দুজন হিন্দু ও একজন মুসলমান। রাজ্য পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
ওই দিন রাত থেকেই সুতি ও সামশেরগঞ্জ থানা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ যৌথভাবে টহল দিচ্ছে।
রাজ্য পুলিশের অতিরিক্ত মহানির্দেশক (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার সোমবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ওই দুটি থানা এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সোমবার সকাল থেকেই বিভিন্ন দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে উপদ্রুত এলাকায় গিয়েছিলেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান রভি গান্ধীও। তিনি বলেছেন, রাজ্য পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে সীমান্তরক্ষীরাও টহল দিচ্ছেন।
হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে দুই শতাধিক মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ থেকে মালদায় পালিয়ে গেছেন চার শর মতো মানুষ। এঁদের বেশির ভাগই হিন্দু বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
মালদায় পালিয়েছেন সামশেরগঞ্জের তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মনিরুল ইসলামও। ঘরছাড়া ১৭টি পরিবারকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সহিংসতার বর্ণনা দিচ্ছেন একজন নারী