গর্ভাবস্থায় যেকোনো শারীরিক জটিলতা সঠিক সময়ে চিহ্নিত করে চিকিৎসা না করলে মা ও শিশুর নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ তেমনি একটি রোগ। বিশ্বে ৫ থেকে ১০ শতাংশ নারী গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত হতে পারেন। বাংলাদেশে এই হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। প্রি–একলাম্পশিয়ার (উচ্চ রক্তচাপের একটি জটিলতা) হার ১৪ দশমিক ৪ শতাংশ।
গর্ভাবস্থায় যদি রক্তচাপ সিস্টোলিক ১৪০ মিমি মার্কারি বা তার বেশি এবং ডায়াস্টলিক ৯০ মিমি মার্কারি বা তার বেশি হয়, তবে তাকে গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়ে থাকে। গর্ভকালীন সপ্তাহের ওপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।
প্রকারভেদ
১.
গর্ভধারণের আগে থেকে বিদ্যমান বা গর্ভের ২০ সপ্তাহের আগে শনাক্ত হয়েছে এমন। এর মধ্যে রয়েছে ক্রনিক উচ্চ রক্তচাপ, পারিবারিক, হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন অর্থাৎ বাড়িতে স্বাভাবিক থাকা কিন্তু চিকিৎসকের কাছে গেলে বেড়ে যাওয়া, এমন ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু প্রি–একলাম্পশিয়ার হওয়া ঝুঁকি আছে।
২. গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পর শনাক্ত হয়েছে এমন উচ্চ রক্তচাপ। এর মধ্যে রয়েছে জেস্টেশনাল উচ্চ রক্তচাপ বা গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, প্রি–একলাম্পশিয়া।
ঝুঁকিগুলো কী কী
অল্প বয়সে অথবা প্রথমবার গর্ভধারণ। অতীতে গর্ভকালীন প্রি–একলাম্পশিয়া। ওজন বেড়ে যাওয়া। পরিবারে উচ্চ রক্তচাপ। গর্ভে একের অধিক সন্তান। ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা ও অটো–ইমিউন রোগ। আইভিএফ ((ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) প্রেগন্যান্সি।
কীভাবে বুঝবেন
রক্তচাপের মাত্রা তুলনামূলক কম থাকলে মাঝেমধ্যে ঘাড় বা মাথায় ব্যথা হতে পারে। তবে মাত্রা বেশি হলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, বুকে ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, প্রস্রাব কমে যাওয়া, পা বা সারা শরীর ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
পরীক্ষা–নিরীক্ষা
নিয়মিত রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি লিভার ও কিডনির কার্যকারিতা দেখা। রক্তে ও প্রস্রাবে প্রোটিনের মাত্রা এবং রক্ত জমাট বাঁধার পরীক্ষা করা। গর্ভে থাকা শিশু ঠিকমতো বেড়ে উঠছে কি না, তা দেখার জন্য পরীক্ষা করা।
চিকিৎসা
■ গর্ভকালীন নির্ধারিত ওষুধ সেবন করতে হবে।
■ নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতা ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা।
■ শিশুর অবস্থা পর্যবেক্ষণে রাখতে আলট্রাসনোগ্রাম, ডপলার ও সিটিজি নামক পরীক্ষা করা।
ডা. আরিফা শারমিন: কনসালট্যান্ট, প্রসূতি ও গাইনি বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আগামীকাল পড়ুন: ব্রেন টিউমার থেকে বাঁচার উপায়
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরে ভোটের লক্ষ্য নিয়ে অক্টোবরের আগে দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি
আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্য ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। প্রাক্–প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো গুছিয়ে জুন–জুলাইয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে। আর আগামী অক্টোবরের আগে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি।
আজ বুধবার দুপুরে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। তিনি বলেন, দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় আগস্ট–সেপ্টেম্বর বা সম্ভব হলে তার আগে করা হবে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ইসিও বলে আসছে, সরকারঘোষিত এই সময়সীমা অনুযায়ী ‘আর্লিয়েস্ট টাইম’ বা ডিসেম্বরকে ধরে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একটি নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছে। সে কর্মপরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে আসনের প্রশাসনিক বিন্যাসের তথ্য, ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া একটি পর্যায়ে আনা হয়েছে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনের সংশোধনী নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ মাস তিনেকের মধ্যে শেষ করা যাবে বলে আশা করছে ইসি।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রাক্–প্রস্তুতিমূলক কাজ মোটামুটিভাবে শেষ হয়ে যাবে। তাঁরা আশা করছেন আগামী জুন–জুলাইয়ের দিকে মুদ্রিত কর্মপরিকল্পনা, যেটি নির্বাচনের আগে ইসি প্রকাশ করে, সেটা ছাপা হবে।
ডিসেম্বরকে ঘিরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকারঘোষিত সময়সীমা ঘিরেই তাঁরা এগোচ্ছেন। সেটি হচ্ছে ডিসেম্বর।
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। তাঁরা নতুন যেসব দল নিবন্ধন পাবে এবং পুরোনো দল—সবাইকে নিয়ে মতবিনিময় করতে চান। নিবন্ধনের কাজ শেষ করা না হলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর ভেতরে কষ্ট থাকবে। সেদিক বিবেচনা করে, ইসি সঠিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে।
এই নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি। সেটা হবে অক্টোবরের আগে, আগস্ট-সেপ্টেম্বরে হতে পারে বা সম্ভব হলে এর আগে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তাঁরা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ২০ এপ্রিল পর্যন্ত দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার সময় আছে। এখন পর্যন্ত তিনটি দল আবেদন করেছে। নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিদ্যমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তাতে নির্বাচন করা সম্ভব কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, তিনি মনে করেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতির দিকে যাচ্ছে। আরও ছয় মাস, আট মাস সময় পাওয়া গেলে পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে মনে করে ইসি।