যুক্তরাষ্ট্রের টয়লেট পেপারেও বসতে পারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্ক
Published: 16th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা সফল না হলে মার্কিন টয়লেট পেপার, সয়াবিন, চোখের প্রসাধনীসহ কয়েক শ পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোট।
গত সোমবার ২৭ দেশীয় জোটটি মার্কিন পণ্যের দীর্ঘ একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি না হলে এসব পণ্যের বেশির ভাগই ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কের আওতায় আসবে।
বেশ কয়েকটি বাণিজ্য সহযোগী দেশের ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যাপক শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে ইইউ। এ পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য দেশের অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুতে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছেন। এরপর ইইউও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর তাদের আরোপিত পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করে। ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানিতে ২৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের পাল্টা হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার থেকে ইইউ শুল্ক কার্যকর করার পরিকল্পনা করেছিল।
ইইউর নির্বাহী শাখা ইউরোপীয় কমিশন গত সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘ইইউ-মার্কিন আলোচনার জন্য সময় দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অযৌক্তিক মার্কিন বাণিজ্য শুল্কের বিরুদ্ধে তার পাল্টা শুল্ক স্থগিত করেছে। যদি আলোচনা সন্তোষজনক প্রমাণিত না হয়, তাহলে ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা শুরু করবে।’
জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ইইউর তালিকায় থাকা ৪০০-এর মতো মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। একই সময়ে কিংবা পরে আরও ১ হাজার ৩০০ পণ্যের ওপর অত্যধিক রকমের আমদানি কর আরোপ করা হতে পারে।
ইইউর তালিকা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যদিও সম্পূর্ণরূপে নয়, ব্লকে সবচেয়ে বড় মার্কিন রপ্তানিকে বাদ দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের ২০২৩ সালের তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ইইউর এক হিসাবে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে রপ্তানি হওয়া শীর্ষ পাঁচটি পণ্য হল—তেল ও গ্যাস, ওষুধ, মহাকাশ পণ্য ও যন্ত্রাংশ, চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং মোটরযান। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি রপ্তানির একটা বড় অংশই সয়াবিন।
ইইউর শুল্ক আরোপের সম্ভাব্য তালিকাটিতে মোটরসাইকেল ও সয়াবিনকে রাখা হয়েছে। দুই পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ করে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের আরও যেসব উল্লেখযোগ্য পণ্যের ওপর ইইউর পাল্টা শুল্ক আরোপ হতে পারে, তার মধ্যে আছে—বাদাম ও তাজা ফল।
ইউরোপ থেকে আরও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে গাড়ি এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ইইউভুক্ত দেশগুলোর অন্য সব পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। তবে পরে এ শুল্কের হার ৯০ দিনের জন্য কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রকে বাণিজ্য ছাড়ে ইউরো চেম্বারের উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফা বাণিজ্য ছাড় দেওয়ার প্রশ্নে বাংলাদেশের পদক্ষেপে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ-ইউরোচেম। এ ধরনের পদক্ষেপকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বৈষম্যমূলক বলা হয়েছে চেম্বারের পক্ষ থেকে। এ ধরনের বৈষম্য এড়াতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার ইউরোচেমের এক বিবৃতিতে চেয়ারপারসন নুরিয়া লোপেজ বলেন, ইইউ বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বাণিজ্য অংশীদার। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের অর্ধেকই আসে ইইউ জোটের দেশগুলো থেকে। ২০০১ সাল থেকে এভরি থিং বাট আর্মস (ইবিএ) অর্থাৎ অস্ত্র ছাড়া সব পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত এবং কোটামুক্ত অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার পেয়ে আসছে বাংলাদেশ। অন্যান্য বাণিজ্য অংশীদারের তুলনায় ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেশি। গত বছর জোটের দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২২ বিলিয়ন ইউরো। আর বাংলাদেশে ইইউর রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ২ বিলিয়ন ইউরো। এর কারণ, উচ্চ শুল্ক এবং অশুল্ক বাধা ইইউ কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে ব্যবসা এবং রপ্তানি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে।
ইইউ জোট এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কাজ করে ইউরোচেম। ২৭ জাতির জোট ইইউ এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলো ইউরোচেমের সদস্য।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বিধিবদ্ধ বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রতি বাংলাদেশ সরকারের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তা উৎসাহিত করতে চায় ইউরোচেম; যা প্রয়োজনীয় বাণিজ্যনীতি, শুল্কসংস্কার ও সব বাণিজ্য অংশীদারের প্রতি ন্যায়সংগত আচরণ নিশ্চিত করে। বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে মসৃণ উত্তরণ এবং টেকসই রূপান্তরে ইউরোচেমের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশে নতুন করে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে গত ৫ এপ্রিল। এ ছাড়া ৬৫টি দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। গত ২ এপ্রিল দেওয়া ঘোষণায় বাংলাদেশের পণ্যে ৩৭ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়। গত ৯ এপ্রিল পরবর্তী ৩ মাসের জন্য এ শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়। এ বাস্তবতায় দুই দেশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে একটি বৈঠক বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
এর আগে গত ৭ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাম্পকে লেখা এক চিঠিতে তিন মাসের জন্য বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখার অনুরোধ করেন। একই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জ্যামিসন গ্রিয়ারকে চিঠি দেন। এতে আমদানি করা ১৯০ পণ্যের পাশাপাশি আরও ১০০ পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক তুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ শুল্কহার কমানো ও সব ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করার উপায় খুঁজে দেখছে।